খোলাবাজারে ডলারের দাম ১২৫ টাকা
সপ্তাহে ৪ টাকা বৃদ্ধি
দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দরে রেমিট্যান্স সংগ্রহের নির্দেশনা দেওয়ার পর খোলাবাজারে বেশ চড়েছে ডলারের দাম। গতকাল খোলাবাজারে প্রতি ডলারের দাম উঠেছে ১২৫ টাকা। একদিনের ব্যবধানে ডলারের দাম বেড়েছে প্রায় ২ টাকা। আর এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ৪ টাকা। কোটা সংস্কারের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে সম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে সরবরাহ কমে যাওয়ার অজুহাতে মানি চেঞ্জার ব্যবসায়ীরা ডলারের দাম ইচ্ছামতো বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন ক্রেতারা।
বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণ গত ৮ মে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ পদ্ধতিতে ডলারের মধ্যবর্তী দর এক লাফে ৭ টাকা বাড়িয়ে ১১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর থেকে ব্যাংকে ডলারের দর ১১৭ থেকে ১১৮ টাকায় স্থিতিশীল ছিল। খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছিল ১২০ টাকায়। তবে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে দেশে রেমিট্যান্স আসা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমে গেছে। মূলত গত কয়েক দিনে সংঘটিত সহিংসতা, মৃত্যু, কারফিউ জারি ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এর অংশ হিসেবে দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠানোর বিষয়ে ক্যাম্পেইন করেছেন প্রবাসীদের একটি একাংশ। এমন পরিস্থিতিতে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমার সম্ভাবনা থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক গত রোববার নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দরে রেমিট্যান্স কেনার জন্য ব্যাংকগুলোকে মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেয়। ওই দিনই ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স কেনায় দর বাড়িয়ে ১১৮ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত দরে ডলার কিনে। পরের দিন সোমবার ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স কিনেছে ১১৯ টাকায়। আর গতকাল ব্যাংকগুলোর রেমিট্যান্স কেনার দর ১২০ টাকায় উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, কয়েক দিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় অনেক ব্যবসায়ী তাদের আমদানি পেমেন্টগুলো করতে পারেননি। ইন্টারনেট চালু হওয়ার পর পেমেন্টের চাপ বেড়েছে। ফলে বেড়েছে ডলারের চাহিদা। এ কারণে বাড়তি দর দিয়ে হলেও রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে ব্যবসায়ীদের চাহিদা মেটাচ্ছে ব্যাংকগুলো।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এদিকে চলমান পরিস্থিতিতে খোলাবাজারেও ডলারের দাম হু হু করে বাড়ছে। গতকাল রাজধানীর মতিঝিল, দিলকুশা ও ফকিরাপুলে কয়েকটি মানি চেঞ্জার ঘুরে ডলারের ভিন্ন ভিন্ন দর পাওয়া যায়। এর মধ্যে ফকিরাপুলের ইসমাইল চেঞ্জারে ডলারের দাম চাওয়া হয় ১২৫ টাকা। দিলকুশার স্ট্যান্ডার্ড মানি এক্সচেঞ্জে ও মতিঝিলের পাইওনিয়ার মানি চেঞ্জারে ডলার বিক্রি হয় ১২৩ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১২৪ টাকা ৫০ পয়সায়। আগের দিন খোলাবাজারে ডলারের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১২২-১২৩ টাকা। এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য মানি চেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি এসএম জামানকে ফোন দিলে তিনি কথা বলার পরিস্থিতিতে নেই বলে জানান।
দেশে দীর্ঘদিন ধরে ডলার সংকট চলছে। এ সংকট কাটাতে প্রবাসী আয়সহ বিদেশ থেকে অর্থ আনতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে ডলারের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় তদারকি কমানো হয়েছে। পাশাপাশি যেকোনো ধরনের অর্থ বৈধ পথে দেশে আনার ক্ষেত্রে যে নিয়মকানুন রয়েছে, তা শিথিল করেছে, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে প্রবাসী আয়ে। সর্বশেষ জুন মাসে রেকর্ড ২৫৪ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আসে, যা ছিল ৪৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। প্রবাসী আয়ের এই গতি গত ১৮ জুলাই পর্যন্ত মোটামুটি স্বাভাবিক ছিল। তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তিন দিনের সাধারণ ছুটিসহ পাঁচ দিন ব্যাংক বন্ধ ছিল। এরপর থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৯ থেকে ২৮ জুলাই ১০ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এর মানে দৈনিক গড়ে রেমিট্যান্স এসেছে ২ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। এর আগে ১ থেকে ১৮ জুলাই এসেছিল ১৪২ কোটি ২০ লাখ ডলার। এর মানে প্রথম ১৮ দিনে দৈনিক গড়ে ৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। শুরুর ১৮ দিনের ধারা বজায় থাকলে জুলাই মাসে ২৪৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসত।