সফলতা নির্ভর করছে জামায়াত ও গণতন্ত্র মঞ্চের সিদ্ধান্তের ওপর
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে হতাহতসহ দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে ক্রান্তিকাল মনে করছে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। এ অবস্থায় গত শুক্রবার গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে সরকার পতনের একদফা দাবিতে ‘জাতীয় ঐক্যের’ ডাক দিয়েছে যুগপৎ আন্দোলনের প্রধান শরিক দল বিএনপি। বিবৃতিতে যুগপৎ আন্দোলনের সব শরিক দল ও জোট, বাম-ডান সব রাজনৈতিক দল, জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য ইসলামিক রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনের প্রতি জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএনপির ‘জাতীয় ঐক্যের’ ডাকে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ১২ দলের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছে। কিন্তু যুগপৎ আন্দোলনের অন্যতম জোট গণতন্ত্র মঞ্চ এবং এর বাইরে থাকা সরকারবিরোধী আন্দোলনে সংহতি জানানো জামায়াতে ইসলামী এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানা যায়নি।
বিএনপি ও সমমনা দলের একাধিক নেতা আমাদের সময়কে বলেন, জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে গণতন্ত্র মঞ্চের শক্ত অবস্থান ও বিএনপির কয়েক নেতার পরামর্শে যুগপৎ আন্দোলন শুরুর আগে ২০২২ সালের ৯ ডিসেম্বর হঠাৎ ২০-দলীয় জোট ভেঙে দেওয়া হয়। এর পর থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকলেও বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব রেখেই চলছে জামায়াতে ইসলামী। এ অবস্থায় বিএনপির ঐক্যের ডাক কতটা সফল হবে, তা নির্ভর করছে গণতন্ত্র মঞ্চ ও জামায়াতে ইসলামীর সিদ্ধান্তের ওপর।
বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেন, তখন ২০-দলীয় জোট ভেঙে দেওয়া ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। যাদের পরামর্শে তখন ভেঙে দেওয়া হয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। এখন আবার সেসব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে ঐক্য গড়ার চেষ্টা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শরিক জেএসডির গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা বলেন, বিএনপির জাতীয় ঐক্যের ডাক সময়োপযোগী। তবে জামায়াতে ইসলামী যদি জাতীয় ঐক্যের মাঝে থাকে, তাহলে গণতন্ত্র মঞ্চের সিদ্ধান্ত কী হবে তা নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে টেলিফোনে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। যদিও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাতীয় ঐক্যের ‘ঐতিহাসিক ঘোষণা’ ও দলিল দেশ এবং জাতির মুক্তি ত্বরান্বিত করবে।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিএনপিসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার করছে। এ অবস্থায় নেতাকর্মীরা যে যার মতো করে গ্রেপ্তার এড়িয়ে চলছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নেতাদের সঙ্গে নানা মাধ্যমে যোগাযোগ করে নির্দেশনা দিচ্ছেন। সেই অনুযায়ী গত শুক্রবার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক বিবৃতির মাধ্যমে বিএনপি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছে।
জাতীয় ঐক্যের অগ্রগতির বিষয়ে জানাতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স আমাদের সময়কে বলেন, দেশ বাঁচাতে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেওয়া হয়েছে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এরই মাঝে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে বিএনপির আহ্বানকে সমর্থন জানাতে শুরু করেছে। তিনি জানান, ইতোমধ্যে ১২-দলীয় জোট, ১২-দলীয় জোটের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট এবং এলডিপি বিবৃতি দিয়ে জাতীয় ঐক্যের প্রতি সমর্থন দিয়েছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলীয় ফোরামে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
এলডিপির প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব) অলি আহমেদ বলেন, দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকারবিরোধী আন্দোলনরত দলগুলোর ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। জনবিরোধী সরকারের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে সঠিক পথে পরিচালনা এবং দুর্নীতিমুক্ত সমাজ কায়েমের পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে বিএনপির পক্ষ থেকে যে ঐক্যের ডাক দেওয়া হয়েছে, সেই পদক্ষেপকে আমরা সমর্থন করি এবং সাধুবাদ জানাই। আমরা এই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে শামিল থাকব।
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চসহ অনেক বিরোধী দল তো যুগপৎ ধারায় একটা আন্দোলনে আছি। এর বাইরেও অনেক দল রাজপথে আছে। যারা যুগপথে আছেন এবং যারা বাইরে আছেন, যার যার জায়গা থেকে আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাদের মধ্যে আরও সংহতি, আরও বোঝাপড়া বাড়বে। সেটিই আমরা চাইব।