নিরাপত্তার স্বার্থেই তিন সমন্বয়ক ডিবি হেফাজতে
কারফিউ শিথিল সকাল ৭টা-সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ককে নিরাপত্তার স্বার্থেই ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। গতকাল শনিবার গণমাধ্যমে একই কথা বলেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ। এর আগে গত শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকেরকে তুলে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। গতকাল বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের ১২ জন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা করতে পারেননি। এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় আরও দুই সমন্বয়ককে হেফাজতে নিয়েছে ডিবি। তারা হলেন- সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ। অন্যদিকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদীতে পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় রবি থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত কারফিউ শিথিলের সময় বাড়ানো হয়েছে। এ সময়ে সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে।
শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জে কোটা সংস্কারের আন্দোলন থেকে সৃষ্ট সংঘাতপরবর্তী পরিস্থিতি পরিদর্শন শেষে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংক্ষিপ্ত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, আটককৃত সমন্বয়কদের মধ্যে একজন তার বাবাকে ফোন করে বলেছিলেন, ‘আমি আত্মগোপন করলাম, আপনারা আমি কোথায় আছি, জানাবেন না।’ এ রকম খবর আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় পেয়ে তাদের সেফ কাস্টডিতে নিয়েছি। জিজ্ঞাসাবাদ করছি, কারা তাদের আক্রমণ করতে চাচ্ছেন। এগুলো সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, একটি মহল সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এমন সব গুজব ছড়াচ্ছেন, যেগুলো শুনলে সাধারণ মানুষও ঠিক থাকতে পারেন না, বিভ্রান্ত হচ্ছেন। একদল গুজব ছড়িয়েছে, আরেক দল আক্রমণ করেছে। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের অনেকে শাহাদাতবরণ করেছেন। তিন পুলিশ, এক আনসার শাহাদাতবরণ করেছেন। এক পুলিশ মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।
এদিকে হারুন অর রশীদ বলেন, প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এবং অন্য দুই সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে আমরা শুক্রবার রাতে নিয়ে এসেছি। তারা বিভিন্ন জায়গা, ফেসবুকে নিরাপত্তাহীনতার কথা বলছিলেন। তাদের একজনের বাবাও নিরাপত্তাহীনতার কথা বিভিন্ন জায়গায় বলেছেন। আমরা মনে করি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে কেউ যদি কোথাও নিরাপত্তাহীনতার কথা বলে, আমাদের দায়িত্ব তাদের নিরাপত্তা দেওয়া। তাদের ক্ষেত্রে আমরা সেটাই করছি।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
হারুন আরও বলেন, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরসহ কয়েকজন নেতাকে আমরা রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসা করেছি। তারা বলেছেন, সমন্বয়কদের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। অন্য নেতাদের সঙ্গে তাদের কী কথা হয়েছে, এগুলো জানার জন্য আমরা তাদের কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করব। পাশাপাশি তাদের নিরাপত্তা দেব।
এদিকে তিন সমন্বয়কের খোঁজ নিতে ডিবি কার্যালয়ে গিয়েছিলেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের ১২ জনের একটি প্রতিনিধি দল। তবে ‘ব্যস্ততার কারণে’ তাদের সঙ্গে দেখা করেননি হারুন অর রশীদ। শনিবার বিকাল ৪টায় ডিবি কার্যালয়ে যান শিক্ষকরা। সেখানে ২০ মিনিটের মতো তারা অবস্থান করেন। পরে ফিরে যান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন বলেন, আমরা যখন এখানে এসেছি তখন এখানকার অফিসপ্রধান (হারুন অর রশীদ) ভেতরেই ছিলেন। তাকে খবরও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি আমাদের সঙ্গে দেখা করেননি।
আরও দুই সমন্বয়ক ডিবি হেফাজতে : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরও দুই সমন্বয়ককে হেফাজতে নিয়েছে ডিবি। তারা হলেনÑ সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় সারজিস ও হাসনাতকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয় বলে আমাদের সময়কে নিশ্চিত করেছেন ডিবির এক কর্মকর্তা। গতকাল রাত পৌনে নয়টার দিকে তিনি বলেন, আজ (শনিবার) সন্ধ্যায় সারজিস ও হাসনাতকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এই দুজনকেও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা দিতে ও সাম্প্রতিক ঘটনাবলি সম্পর্কে তথ্য জানতে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন