আমদানি ও রপ্তানিতে অচলাবস্থা

আবু আলী
২৪ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
আমদানি ও রপ্তানিতে অচলাবস্থা

চলমান পরিস্থিতিতে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় আমদানি-রপ্তানিতে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। বন্দরে আটকে আছে অনেক কনটেইনার। এতে জরিমানা গুনছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে কাঁচামাল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। ফলে আগামীতে রপ্তানি খাতে বড় ধরনের সংকট হাতছানি দিচ্ছে। গত ছয় দিনে রপ্তানিতে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দ্রুত ইন্টারনেট সেবা চালুর দাবি জানিয়েছেন তারা।

বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ইন্টারনেট সেবা চালু না হলে অর্থনীতিতে ডিজাস্টার হয়ে যাবে। রপ্তানির অর্ডার সম্পর্কে আমরা অন্ধকারে আছি। এ দিকে বন্দরে পণ্য আটকে থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গত ৬ দিনে রপ্তানিতে ১ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। এ জন্য দ্রুত ইন্টারনেট চালু করে ব্যবসা সচল করার দাবি জানাই।

এদিকে পচনশীল দ্রব্য, শিল্পের কাঁচামাল এবং খাদ্যপণ্য সনাতন পদ্ধতিতে কাস্টম হাউসগুলোকে খালাসের নির্দেশনা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ নির্দেশনা অনুসারে আমদানি-রপ্তানি শুল্কায়ন কার্যক্রম শুরু করেছে শুল্ক বিভাগ। কিন্তু এ পদ্ধতিতে ধীর গতি দেখা গেছে। ইন্টারনেট না থাকায় অ্যাসাইকোডার সঙ্গে যুক্ত হতে পারছে না ব্যাংক। ফলে আমদানি-রপ্তানিতে অচলাবস্থা থেকেই যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্র জানায়, দেশের সমুদ্রকেন্দ্রিক আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশই হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। বন্দরের সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে ২০টি বেসরকারি ডিপো (আইসিডি)। এসব ডিপোর মাধ্যমে আমদানির ২৫ শতাংশ এবং রপ্তানির ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়ে থাকে। ডিপোতে রপ্তানি পণ্য এনে কনটেইনারজাত করে (স্টাফিং) চট্টগ্রাম বন্দরে নেওয়া হয় জাহাজীকরণের জন্য। এর মধ্যে ৮০ শতাংশই তৈরি পোশাক ।

সূত্র আরও জানায়, প্রতিদিন এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৫০০ বিল অব এন্ট্রি এবং ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার বিল অব এক্সপোর্ট হয়ে থাকে। বিশাল এই কার্যক্রম সনাতন পদ্ধতিতে সম্ভব নয়। এনবিআরের বিশেষ নির্দেশনার পর গত দুই দিনে ৫৫টি বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে ৯৪ হাজার টন আমদানি-রপ্তানি পণ্য শুল্কায়ন হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, বন্দর থেকে পণ্য খালাস করা যাচ্ছে না শুল্কায়নের কারণে। আর ইন্টরনেট বন্ধ থাকায় শুল্কায়ন করা যাচ্ছে না। তবে ইন্টারনেট বন্ধের আগে শুল্কায়ন হওয়া পণ্যের খালাস কার্যক্রম চলছে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার ইমাম গাজ্জালী বলেন, এনবিআরের নির্দেশনা অনুসারে শুল্কায়নের জন্য কাজ করছি। পচনশীল দ্রব্য, শিল্প কাঁচামাল ও খাদ্যপণ্য খালাসে সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

এদিকে বন্দরে কনটেইনার আটকে থাকায় ব্যবসায়ীদের জরিমানা গুনতে হচ্ছে। ‘কাস্টমস আইন ২০২৩’ আইনের ৩২ ধারায় বলা আছে- আমদানি পণ্যের শুল্ক-কর, চার্জ নির্ধারণের পর তা ১০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এ সময় অতিক্রম করলে শুল্ক-কর পরিশোধের সর্বশেষ তারিখ থেকে খালাসের সময় পর্যন্ত বার্ষিক ১০ শতাংশ হারে সাধারণ সুদ পরিশোধ করতে হবে। এ ছাড়া শুল্ক-কর বকেয়া থাকলে বকেয়া অর্থের ওপরই ১০ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। এতে ব্যবসার খরচ বাড়ছে।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, অর্থনীতির জন্য বড় ক্ষতি হয়েছে। রপ্তানির অনেক অর্ডার বাতিল হয়েছে। এর প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘ সময় পোহাতে হবে। কেননা, বায়ারদের আস্থার বড় সংকট তৈরি হবে। দ্রুত রাজনৈতিক মীমাংসা দরকার।

রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি ও এমপি আবদুস সালাম মুর্শেদী আমাদের সময়কে বলেন, গত কয়েক দিন ইন্টারনেট না থাকায় উৎপাদন ও আমদানি-রপ্তানিতে বড় ক্ষতির শিকার হয়েছি। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। সরকার যেহেতু স্বল্প পরিসরে ইন্টারনেট সেবা চালু করছে, এতে আবারও যোগাযোগ স্থাপন করতে পারব।