যুগপৎ আন্দোলনের তিন মাসের কর্মপরিকল্পনা
পাঁচটি ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি এবং এর নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলো। প্রথম ধাপে ভারতের সঙ্গে ‘সমঝোতা চুক্তির’ প্রতিবাদে সমাবেশ, মিছিল, রোড-মার্চ, পদযাত্রা, সেমিনারসহ একগুচ্ছ কর্মসূচি থাকতে পারে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের তিন মাসের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছে বিএনপি ও শরিকরা। আগামী শনিবার থেকে তা শুরু হতে পারে। কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে আজ রাতে বৈঠকে বসবে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি। আগামীকাল গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
গত শনিবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও বৈঠকে
অংশ নেন।
সূত্রমতে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, ভারতের সঙ্গে রেল করিডোরসহ ‘অসম’ চুক্তি, পানির ন্যায্য হিস্যা, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দেশব্যাপী দুর্নীতিÑ এই পাঁচটি ইস্যুতে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এ বিষয়ে মতামত নিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে শরিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে বিএনপি। গতকাল ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে কর্মসূচি চূড়ান্ত হওয়ার পর তা নিয়ে আবার শরিকদের সঙ্গে কথা বলবেন দলের দায়িত্বশীল নেতারা।
যুগপৎ কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে গঠিত বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু আমাদের সময়কে বলেন, সমন্বিত একটি কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে। এবারের কর্মসূচির মাধ্যমে যুগপৎ আন্দোলন আবার শুরু হবে। ভারতের সঙ্গে দেশবিরোধী চুক্তির প্রতিবাদে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
প্রস্তাবিত কর্মসূচিতে যা আছে
যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা ঠিক থাকলে আগামী শুক্র অথবা শনিবার ঢাকায় সমাবেশ হবে। সেখান থেকে বিএনপি কর্মসূচি ঘোষণা করবে। অন্য দলগুলো যার যার অবস্থান থেকে কর্মসূচি দেবে।
প্রস্তাবে আগামী ২৮ জুলাই পর্যন্ত ‘রেল করিডোর’ ইস্যুতে রাজধানী ঢাকায় সমাবেশ ছাড়াও সারাদেশে কালো পতাকা মিছিল, পদযাত্রা, লিফলেটসহ নানা কর্মসূচি আছে। তবে যেসব জেলার ওপর দিয়ে রেল করিডোর যাওয়ার কথা রয়েছে, সেসব জেলার কর্মসূচি জোরদার করার নির্দেশনা দেওয়া হবে সমাবেশ থেকে।
এ ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ২৯ জুলাই ঢাকায় সমাবেশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ওই সমাবেশ থেকে দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১০ বিভাগে সমাবেশ শেষে ঢাকায় মহাসমাবেশ করার কথা। এই কর্মসূচির ফাঁকে জেলা ও মহানগরে দুর্নীতিবিরোধী সভা-সমাবেশ করা হবে।
দলের গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ী যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা তিন মাসের কর্মসূচি তৈরি করে তা মহাসচিবের কাছে জমা দিয়েছেন। আজ স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে।
এ বিষয়ে যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ আমাদের সময়কে বলেন, ‘দেশ ও জনগণের স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে আমরা কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আশা করি, এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে জনগণ আমাদের সঙ্গে রাজপথে থাকবে।’
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
চুক্তি নিয়ে যা বলছে বিএনপি
বৈঠকে নেতারা বলেন, ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক ১০ সমঝোতা চুক্তিতে দেশের স্বার্থ রক্ষা হয়নি। প্রতিটি চুক্তিকে অসম মনে করছে বিএনপি। সবচেয়ে বড় আপত্তি রেল ট্রানজটি সমঝোতা চুক্তি নিয়ে। এ বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স আমাদের সময়কে বলেন, ‘গত শনিবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে আমরা একমত হয়েছি, আমরা যে আন্দোলন করতে যাচ্ছি তা কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়; হোক প্রতিবেশী বা অন্য কোনো দেশ। তবে কোনো দেশ যদি তাঁবেদার আওয়ামী লীগ সরকারকে জনগণের মতামত উপেক্ষা করে ক্ষমতায় রেখে স্বার্থ হাসিল করে, তার প্রতিবাদ আমরা করব।’
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি নেতারা মনে করেন- কানেক্টিভিটির নামে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতের এক অংশ থেকে আরেক অংশের রেল যোগাযোগের নামে করিডোর দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়বে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় সীমান্ত হত্যা বন্ধের বিষয়ে কোনো কথা না হওয়ায় দলটির নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, আমরা ভারতবিরোধী নই, পুরো আন্দোলন চলবে দেশ ও জনগণের স্বার্থের পক্ষে। জনবিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের স্বার্থ আদায়ে ব্যর্থ- এ বিষয়টি জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে। ভারত যেমন তার দেশের স্বার্থ দেখবে, আমরা আমাদের সর্বোচ্চ স্বার্থ দেখব। আওয়ামী লীগ যদি দেশ বিক্রি করে দেয়, সেখানে তো আমরা চুপ থাকতে পারি না। জোর করে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগকে সরাতে না পারলে দীর্ঘমেয়াদে দেশের চরম ক্ষতি হবে। এ বিষয়টি জনগণকে বোঝাতে হবে।
সমমনা দলের প্রস্তাব
যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ঠিক করতে গত বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল পর্যন্ত ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, এনডিএম, গণফোরাম (একাংশ) ও পিপলস পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি। এসব বৈঠক সূত্র জানায়, দেশব্যাপী সভা-সমাবেশ, পদযাত্রা, মানববন্ধন, লিফলেট বিতরণসহ নানা কর্মসূচির প্রস্তাব দিয়েছে সমমনারা। এ ছাড়া সরকারের দুর্নীতির বিষয়টি সামনে এনে তাদের দুর্নীতির শে^তপত্র প্রকাশ, কমিশন গঠন এবং গণআদালত গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম
আজ গণঅধিকার পরিষদ (রেজা) এবং বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ ও মঙ্গলবার গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠক হবে। বৈঠকের পর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।