গ্রাহকের টাকা ফেরতের সুপারিশ গোয়েন্দা সংস্থার
চটকদার বিজ্ঞাপন আর অতিরিক্ত মূল্যছাড়ের লোভনীয় অফার দেখে পণ্যের অর্ডার করেন লক্ষাধিক ক্রেতা। আর পণ্য না দিয়ে মাত্র সাত মাসে কয়েক কোটি হাতিয়ে নিয়ে অফিস বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এমনই এক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘আলাদিনের প্রদীপ’। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী মেহেদী হাসান মুন দেশের মধ্যেই পলাতক রয়েছেন। তার নামে কোনো মামলাও নেই। তবে প্রতিষ্ঠানটির দুটি ব্যাংক হিসাব (ব্র্যাক ও সিটি) জব্দ করা হয়েছে। দুুটি হিসাবে ৫ কোটি ২১ লাখ টাকা জমা আছে। প্রতারিত গ্রাহকদের তালিকা করে জব্দকৃত টাকা গ্রাহকদের ফেরত দেওয়ার সুপারিশ করেছে দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা। ‘আলাদীনের প্রদীপ’-এর কার্যক্রম অনুসন্ধান করে একটি প্রতিবেদন সম্প্রতি বাণিজ্য সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে এমন সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। একই সঙ্গে প্রধান নির্বাহীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রলালয়ের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের কর্মকর্তা (উপসচিব) মুহাম্মদ সাঈদ আলী আমাদের সময়কে বলেন, শিগগিরই সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে বৈঠক করে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আলাদীনের প্রদীপের প্রধান নির্বাহী মেহেদী হাসান মুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। অল্প বয়সেই কোম্পানি খুলে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতা জুটিয়ে মাত্র সাত মাসে হাতিয়ে নেন কয়েক কোটি টাকা। এ কাজে শুরুর দিকে ব্যবহার করেন ঢাবির সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের। পরে কোম্পানির কার্যক্রম দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া হয়। লক্ষাধিক ক্রেতার অর্ডার নিয়ে পণ্য বুঝিয়ে দিচ্ছে না তারা। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ‘আলাদিনের প্রদীপ’-এর প্রধান নির্বাহী মালিক মেহেদী হাসান মুন দেশেই পলাতক রয়েছেন। তার নামে কোনো মামলা নেই। তবে টাকা ফেরত না দিলে মামলা করার কথা জানিয়ে কেউ কেউ উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির দুটি ব্যাংক হিসাবে ৫ কোটি ২১ লাখ টাকা জমা রয়েছে। ব্যাংক হিসাব দুটি জব্দ করা হয়েছে। ওই হিসাব থেকে গ্রাহককে সরাসরি টাকা রিফান্ড করার সুপারিশ করেছে গোয়েন্দা সংস্থাটি। একই সঙ্গে গ্রাহকের বাকি টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
জানা গেছে, মূলত ‘এক টাকায় ডেলিভারি’, ‘দেশের প্রথম শিক্ষার্থীভিত্তিক ই-কমার্স প্ল্যাটফরম’ ইত্যাদি নানা চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয় সাধারণ মানুষ। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত তিনটি অফারে অর্ডার পড়ে প্রায় লাখখানেক। ওই বছরের জুনের অফারে ৬১ হাজারেরও বেশি ক্রেতা আলাদীনের প্রদীপে নানা পণ্য অর্ডার করেন। সর্বশেষ তিনটি অফারে বেশিরভাগই ছিল মোটরসাইকেল, ফ্রিজ, মোবাইল ফোনসহ দামি পণ্য। এর পরই পাল্টে যেতে থাকে আলাদীনের প্রদীপের চরিত্র। ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রাখা, এমনকি কল সেন্টারও বন্ধ করে দেওয়া হয়। যারা বেশি বেশি যোগাযোগের চেষ্টা করেন, তাদের ফেসবুক গ্রুপ এবং পেজ থেকে ব্লক করে দেওয়া হয়Ñ এমন অভিযোগ ক্রেতাদের।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল