নিয়োগ পরীক্ষায় ‘প্রক্সি চক্রের’ সদস্য আটক
সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার জন্য ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে বদলি পরীক্ষার্থী (প্রক্সি) সংগ্রহ করতে এসে পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন কাউছার আলী নামে ‘প্রক্সি পরীক্ষা’চক্রের এক সদস্য। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, অর্থের বিনিময়ে তিনি অন্যের হয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। পাশাপাশি চক্রের সদস্য হিসেবে অন্যদের জন্য বদলি পরীক্ষার্থী সংগ্রহ ও সরবরাহ করেন। তিনি ১০ বছর ধরে চক্রটির সঙ্গে জড়িত।
গত শুক্রবার রাত ৮টার দিকে কাউছার আলীকে ধরে প্রথমে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে সোপর্দ করে একদল শিক্ষার্থী। পরে রাত ৩টার দিকে তাকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয়। তিনি জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার কুয়াতপুর এলাকার বাসিন্দা এবং কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী বলে পুলিশকে জানিয়েছেন।
জিজ্ঞাসাবাদে কাউছার দাবি করেন, জয়পুরহাট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক রেজার
জন্য শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে প্রক্সি পরীক্ষার্থী সংগ্রহের জন্য ঢাকায় আসেন। এজন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে দেখা করতে শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যান। বিশ^বিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থী তাকে ক্যাম্পাসে এনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে নিয়ে যান। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে কাওছার জানান, শনিবার অনুষ্ঠিত এনটিআরটিসির লিখিত পরীক্ষায় ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে দক্ষ প্রক্সি পরীক্ষার্থীর খোঁজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন তিনি। এমন কাউকে পাওয়া গেলে তাকে শুক্রার রাতেই রাজশাহী লোকনাথ হাই স্কুল পরীক্ষা কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিতেন।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
ঢাবি সাংবাদিক সমিতিকে কাউছার জানান, তিনি কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৮-০৯ সেশনে ফলিত পুষ্টি ও খাদ্যপ্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি পড়াশোনা শেষ করেন। প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার একটি ‘প্রক্সি’চক্রের সঙ্গে জড়িত। এ ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের তথ্যপ্রমাণ তার হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট থেকে পাওয়া গেছে। তিনি জানান, শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ছাড়াও রেলওয়ের বিভিন্ন পদ, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিসহ বিভিন্ন সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার নিয়োগ পরীক্ষায় তিনি ও তার সহযোগীরা অংশগ্রহণ করার পাশাপাশি প্রক্সি পরীক্ষার্থী সরবরাহ করেন।
‘প্রক্সি পরীক্ষা ব্যবসা’র ব্যাপারে কাউছার জানান, প্রতিটি পরীক্ষায় বসার জন্য তিনি ২০ হাজার টাকা করে নেন। নিজে পরীক্ষা দিতে না পারলে ‘প্রক্সি পরীক্ষার্থী’ জোগাড় করে দেন। আর পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পর পাস করলে চাকরিভেদে এক থেকে দেড় লাখ টাকা নিয়ে থাকেন। আর প্রক্সি পরীক্ষার্থী জোগাড় করে দিলে এই টাকা ভাগাভাগি হয়।
কাউছার জয়পুরহাট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজার হয়ে যে প্রক্সি পরীক্ষার্থী খুঁজতে এসেছিলেন বলে দাবি করেছেন, তার প্রমাণ হিসেবে রেজার সঙ্গে এ বিষয়ে মোবাইল ফোনের হোয়াটসঅ্যাপ আলাপচারিতা প্রদর্শন করেন। বিষয়টি নিশ্চিত হতে কাউছারের সরবরাহ করা রেজার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হয়। তবে কলটি রিসিভ করা হয়নি।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
জড়িত কয়েকজনের নাম প্রকাশ : প্রক্সিচক্রের সঙ্গে জড়িত আরও বেশ কয়েকজনের নাম জানিয়েছেন কাউছার আলী। তিনি জানান, বিভিন্ন সরকারি পরীক্ষার প্রশ্ন পান বগুড়ার শিমুল নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে। তিনি চক্রের সদস্য হিসেবে শিমুলকে সহায়তা করেন। চক্রের সদস্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থীর নাম জানিয়েছেন কাউছার আলী। তারা হলেনÑ বিজয় একাত্তর হলের ইকবাল হোসেন ও সোলাইমান রবিন এবং মুহসীন হলের ইফরাত হোসাইন ও আব্বাস; বগুড়া আজিজুল হক কলেজের বাংলা বিভাগের আজিজুল, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের রায়হান ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের আবু জার গিফারি এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের রাকিব হাসান। তবে তাদের ব্যাপারে সুস্পষ্ট তথ্য নেই তার কাছে।
কাউছার জানান, রেলওয়ের পয়েন্টসম্যান, খালাসি ও ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ২-এর মিটার রিডার কাম মেসেঞ্জার পদে ভিন্ন তিন জনের পরীক্ষায় ‘প্রক্সি’ প্রার্থী হিসেবে নিজেই অংশ নিয়েছেন তিনি। গত ২৮ জুন রেলওয়ের পয়েন্টসম্যান পদের পরীক্ষা ছিল। ওই পরীক্ষায় সাগর কুমার দেবনাথ নামের এক প্রার্থীর হয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। ১৭০২৬২৭১ রোল নম্বরধারী ওই প্রার্থীর পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল ঢাকার তেজগাঁও আদর্শ কলেজ। পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য সাগরের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন তিনি। গত নভেম্বরে রেলওয়ের খালাসি পদে পরীক্ষায় এক প্রার্থীর হয়ে পরীক্ষায় বসার কথাও জানান কাউছার।