জলাবদ্ধতায় বড় আর্থি কক্ষতি ব্যবসায়ীদের

রেজাউল রেজা
১৪ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
জলাবদ্ধতায় বড় আর্থি কক্ষতি ব্যবসায়ীদের

গত শুক্রবার সকালের টানা বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন রাজধানীর ব্যবসায়ীরা। অনেকেরই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম অকেজো হয়ে গেছে; নষ্ট হয়ে গেছে নানান আসবাবপত্র ও দোকানপাটের মালামাল।

সেদিন রাজধানীর অলিগলি, রাজপথসহ অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেলেও দিনভর গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আলোচনায় ছিল নিউমার্কেট এলাকা। দুপুরে ভারী বৃষ্টিপাত থেমে গেলেও সারাদিনÑ এমনকি মধ্যরাত পর্যন্ত পানির নিচে ডুবে ছিল নিউমার্কেটসহ আশপাশের পুরো মার্কেট এলাকা। জলাবদ্ধতার কারণে বেশিরভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানই বন্ধ রাখতে হয়েছে। এতে পুরো দিনের ব্যবসা হারানোর পাশাপাশি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জিনিসপত্র ও মালামালের ক্ষতি হজম করতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের।

নিউমার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী মো. ইমতিয়াজ উদ্দিন ও নুরজাহান মার্কেটের শেখ ফরহাদ হোসেনসহ একাধিক ব্যবসায়ী গতকাল জানান, শুক্রবার ছুটির দিনের ব্যবসা নষ্ট হয়েছে তাদের। শনিবার (গতকাল) ভোরে পানি নেমে যাওয়ার পর দোকান খোলা হয়েছে। কিন্তু সারাটা দিন পেরিয়ে গেছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও দোকান ঠিকঠাক করাতেই। ফলে এদিনও ব্যবসা হয়নি। এ ছাড়া জলাবদ্ধতার কারণে দোকানের গদিসহ অনেক পণ্য নষ্ট হয়েছে, বিশেষ করে মেঝেতে যেসব পণ্য রাখা হয়েছিল, সেগুলো আর বিক্রিযোগ্য নয়। তারা জানান, আগেও পানি জমেছে, তবে এবারের জলাবদ্ধতায় ক্ষতি অনেক বেশি হয়েছে। 

ঢাকা নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন বলেন, আশপাশের এলাকাগুলোর চেয়ে নিউমার্কেট এলাকা কিছুটা নিচু হওয়ায় বৃষ্টি হলেই এখানে পানি জমে। এ বছর এ নিয়ে তিনবার জমলো। এতে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হন। এখানকার সারফেস ওয়াটার ড্রেনেজব্যবস্থা তিনটির মধ্যে বর্তমানে মাত্র একটি কাজ করছে। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন শুধু আশ্বাসই দিয়ে যাচ্ছে, জলাবদ্ধতার সমাধান করছে না। 

ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন আরও বলেন, শুক্রবার মধ্যরাত পর্যন্ত এখানে পানি জমে ছিল। আজ (শনিবার) দিন কেটেছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায়। দুদিনের ব্যবসা নেই। তার চেয়েও বড় বিষয়­­Ñ পানিতে দোকানের আসবাবপত্র, ইনটেরিয়র, মালামালসহ বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। অতীতে জলাবদ্ধতায় ব্যবসার ১০-১৫ শতাংশ ক্ষতি হলেও এবার ক্ষতির পরিমাণ হবে ৩০ শতাংশ। তিনি বলেন, আর কোনো আশার বাণী নয়, আমরা জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান চাই।

গতকাল শনিবার রাজধানীর মতিঝিল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এখানকার ফটোকপির দোকান, বেকারি, ট্রাভেল এজেন্সি ও বৈদ্যুতিক পণ্যের দোকানগুলোও ক্ষতির শিকার হয়েছে। পানি নেমে যাওয়ায় গতকাল অনেক ব্যবসায়ী দোকানের ভেজা মালামালÑ এমনকি ভেজা টাকার নোটও রোদে শুকাতে দিয়েছেন।

এখানকার মাইক্রো পিসিএস ইলেক্ট্রনিকের ব্যবসায়ীরা জানান, বৃষ্টি ও পানির কারণে দোকানের ইলেক্ট্রনিক পণ্যের অনেক ক্ষতি হয়েছে। অনেক যন্ত্রপাতিই নষ্ট হয়ে গেছে।

অলিম্পিক বেকারির এক কর্মচারীকে এদিন দেখা গেছে, ভেজা নোট রোদে শুকাচ্ছেন। তিনি বলেন, দোকানের মালামালের সঙ্গে ক্যাশে রাখা টাকাও ভিজে গেছে।

পাশের ফকিরাপুল এলাকায় রয়েছে প্রিন্টিং ও প্যাকেজিংয়ের অসংখ্য ছাপাখানা। শুক্রবারের জলাবদ্ধতায় সেখানকার নিচতলার সব প্রতিষ্ঠানের বিপুল আর্থিক ক্ষতির শিকার হতে হয়েছে। এ এলাকার প্রতিষ্ঠান ডিজাইন ক্রিয়েশনের কর্ণধার বিকাশ পাল আকাশ বলেন, পানিতে আমার কারখানার মেশিন ও কম্পিউটারের ক্ষতি হয়েছে। মেশিন মেরামত করতে পাঠিয়েছি। জানি না কত খরচ হবে। ২০ হাজার টাকাও হতে পারে, আবার ৬০ হাজার টাকাও লাগতে পারে। ইলেক্ট্রনিক মেশিন। যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে আমার ২৮ লাখ টাকা জলে যাবে। তার ওপর মেশিন ঠিক হয়ে আসতে ১৫ দিন লাগবে। একদিন ব্যবসা বন্ধ থাকলে দৈনিক ৪০-৫০ হাজার টাকার বাণিজ্য বন্ধ থাকবে। এই জলাবদ্ধতায় আমার মতো অন্যরাও এমন ক্ষতির মুখে আছেন।  

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন আমাদের সময়কে বলেন, রাজধানীতে জলাবদ্ধতার সমস্যা নতুন নয়। আমরা বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। জলাবদ্ধতার কারণ, কোন কোন পয়েন্টে জলাবদ্ধতা বেশি হচ্ছেÑ এর সবই জানে সিটি করপোরেশন। কোথায় অবহেলা রয়েছে, সমাধান কী, তাও তাদের জানা। তিনি বলেন, আমাদের ঢাকা মহানগরীর ‘কসমেটিক উন্নয়ন’ হয়েছে, টেকসই উন্নয়ন হচ্ছে না। নগরবাসী ও ব্যবসায়ীরা যে বাড়তি ভ্যাট-ট্যাক্স দিচ্ছেন, তা নগরীর সৌন্দর্যবৃদ্ধিতে ব্যয় করা হচ্ছে। নগরবাসীর দীর্ঘদিনের ভোগান্তি ও কষ্টগুলো দূরীকরণে মনোযোগ কম। জলাবদ্ধতার সমাধান আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ। মেয়ররা প্রতিবার আশ্বাস দেন। কিন্তু আমাদের পরিত্রাণ মিলছে না।

এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফিদা হাসান ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাছিম আহমেদ জানান, মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের কাজের জন্য অনেক ড্রেনের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে জলাবদ্ধতা বেশি হয়েছে এবার। তা ছাড়া খাল ভরাট হয়ে গেছে। যেসব খাল দখল হয়েছে, সেগুলোর উদ্ধার ও খননকাজ চলমান রয়েছে। দখলমুক্ত হলে অনেকটা স্বস্তি পাওয়া যাবে।

সিটি করপোরেশনের ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে তারা আরও বলেন, জনগণকে কষ্ট থেকে পরিত্রাণ দেওয়ার জন্য সিটি করপোরেশন আপ্রাণ চেষ্টা করছে। শিগগিরই জলাবদ্ধতা থেকে পরিত্রাণ মিলবে।