বাইডেন কি প্রার্থী থাকবেন?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

ফাহিমা কানিজ লাভা
১৪ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
বাইডেন কি প্রার্থী থাকবেন?

যুক্তরাষ্ট্রে নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রার্থী থাকা নিয়ে তার দলেই বাড়ছে অস্বস্তি। বিশেষ করে গত ২৭ জুন রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কে চরমভাবে হেরে যাওয়ার পর থেকে নিজ দলীয় আইনপ্রণেতা, নীতিনির্ধারক ও দাতাদের পক্ষ থেকে বাইডেনকে সরে দাঁড়াতে বলা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে- যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক, ৮১ বছর বয়সী এই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে। তবে এসব কথা আমলে না নিয়ে নিজেকে এ পদের জন্য সবচেয়ে যোগ্য বলে দাবি করছেন বাইডেন, এমনিক ঈশ্বর ছাড়া আর কেউ তাকে এ পদ থেকে টলাতে পারবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। তবে দলের ভেতরে ও বাইরে থেকে প্রবল চাপের মুখে যদি জো বাইডেন দলের হয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন, তাহলে তার বিকল্প কে হবেন?

ডেমোক্র্যাট দলীয় সূত্র বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ছাড়া নির্বাচনে দাঁড়ানোর মতো জাতীয় পর্যায়ে সুপরিচিত কোনো প্রার্থী ডেমোক্র্যাটদের নেই। প্রায় সব ডেলিগেটের (প্রতিনিধি) সঙ্গে কমলা হ্যারিসের ব্যক্তিগত যোগাযোগ রয়েছে, যা দলে আর কারও নেই। তাই তাকেই বাইডেনের বিকল্প ভাবা হচ্ছে। যদিও প্রার্থীর চূড়ান্ত মনোনয়ন নিশ্চিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্য থেকে ডেমোক্রেটিক পার্টির ৩ হাজার ৯৪৯ জন ডেলিগেটের সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিকল্প কাউকে বেছে নিতে ডেলিগেটদের প্রতি বাইডেনেরও সমর্থন থাকতে হবে। কেউ যদি কয়েকটি রাজ্য মিলে ৩০০-৫০০ ডেলিগেটের সমর্থন আদায় করতে পারেন, তাহলে তিনি জাতীয় সম্মেলনে চূড়ান্ত মনোনয়নের ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পেতে পারেন। তখন যদি বাইডেন সরে না দাঁড়ান, তাহলে ভোট হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে নতুন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়া যাবে। তবে এই মুহূর্তে জো বাইডেনের বিপরীতে যুৎসই বিকল্প প্রার্থী নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আগেও এমন হয়েছিল বলে ইতিহাস আছে। ১৯৮০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারকে সরে দাঁড়াতে হয়েছিল। সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি তাকে চ্যালেঞ্জ করে বসেন এবং জিতে যান ডেলিগেটদের ভোটে। ১৯৬৮ সালেও ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসনকে চাপের মুখে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হয়েছিল। ১৯৭৬ সালে রিপাবলিকান পার্টির নেতা রোনাল্ড রিগান ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডকে চ্যালেঞ্জ করে বসেন। তবে সামান্য ব্যবধানে পরাজিত হন রিগান। সুতরাং ডেমোক্র্যাট দলের ডেলিগেটরা চাইলে কমলা হ্যারিসও বাইডেনের বদলে নির্বাচনে লড়তে আসতে পারেন।

তবে এত আলোচনা-সমালোচনাকে পাত্তা না দেওয়া জো বাইডেন তার কাজ করে যাচ্ছেন। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডেট্রয়েটের এক নির্বাচনী প্রচার সভায় তিনি বলেছেন, ‘আমিই (ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট) প্রার্থী। আমি কোথাও যাচ্ছি না। আপনাদের মতো ১ কোটি ৪০ লাখ ডেমোক্র্যাট প্রাইমারিতে আমাকে ভোট দিয়েছেন। আপনারাই আমাকে মনোনীত করেছেন, অন্য কেউ না। আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি না।’ যদিও নিজের দলের ১৯ জন আইনপ্রণেতা ইতোমধ্যে বাইডেনের স্বাস্থ্য ও মানসিক দুর্বলতার কথা তুলে তাকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। মার্কিন কংগ্রেসের সাবেক ২৪ জন ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতাও গত শুক্রবার একটি খোলাচিঠি চিঠিতে জো বাইডেনকে অন্যদের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সরে যেতে অনুরোধ জানিয়েছেন। ওই দিন বাইডেনের প্রচারশিবিরের জন্য সংগ্রহ করা ৯০ মিলিয়ন ডলার আটকে দিয়েছেন দাতারা। কিন্তু বাইডেন তার সিদ্ধান্তে অনড় আছেন, নির্বাচন তিনি করবেনই।

দলের বেশ কিছু শীর্ষনেতার সঙ্গে বৈঠক করে তাদের সমর্থন আদায়ের জোর চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন বাইডেন। ইতোমধ্যে দলের প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা হাকিম জেফরিস, জেমস ক্লাইবার্ন ও ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম বাইডেনকে সমর্থন দিয়েছেন। ইউনাইটেড অটো ওয়ার্কার্সের সভাপতি শন ফেইনও বাইডেন সমর্থন দিয়েছেন। এর আগে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বাছাইয়ের প্রাইমারি পর্বে বিপুলভাবে জয়ী হয়েছিলেন বাইডেন। এখনো অধিকাংশ ডেলিগেট তার পক্ষেই রয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাইডেনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর চূড়ান্ত মনোনয়নে ভোট দিতে আসা ডেলিগেটরা যদি অন্য কোনো প্রার্থীকে চান, তাহলে সেই প্রার্থী বাইডেনের সমর্থন পাবেন কিনা? জবাবে বাইডেন বলেছেন, ‘তারা যা চান, স্বাধীনভাবেই তা করতে পারেন। তবে সেটা হবে না।’ এ জবাবের মধ্য দিয়ে বাইডেন তার শক্ত অবস্থানের ইঙ্গিতই দিয়েছেন গণমাধ্যমকে।

এদিকে কমলা হ্যারিসের প্রার্থী হওয়া উচিত কিনা- এমন প্রশ্নের মুখে প্রায়ই পড়তে হচ্ছে খোদ কমলা হ্যারিসকে। এ নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করার ব্যাপারটা বরাবরই এড়িয়ে গেছেন তিনি। গতকাল শনিবার নিউ অরলিন্সে এক অনুষ্ঠানের আলোচনায় কমলা হ্যারিস সমালোচকদের কথায় কান না দিতে শ্রোতাদের পরামর্শ দেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়লে কমলা হ্যারিস জিতবেন বলে মনে করছেন ক্যালিফোর্নিয়ার কংগ্রেস সদস্য অ্যাডাম শিফ এবং সাউথ ক্যারোলাইনার কংগ্রেস সদস্য জিম ক্লেবার্ন।

কমলার সমর্থকরা কিছু জরিপের ইঙ্গিত তুলে ধরে বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাইডেনের তুলনায় ভালো করবেন তিনি। তাদের যুক্তি, জাতীয় পর্যায়ের একজন নেতা হিসেবে কমলার স্বীকৃতি রয়েছে, আছে নির্বাচনী প্রচার চালানোর সক্ষমতা ও তরুণ ভোটারদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা। সিএনএনের সাম্প্রতিক এক জরিপের ফলে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের বিপরীতে বাইডেনের চেয়ে কমলা ভালো করবেন। জরিপে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বাইডেন ৬ পয়েন্ট পিছিয়ে ছিলেন। আর কমলার ব্যবধান মাত্র ২ পয়েন্ট। নারী ভোটার, কৃষ্ণাঙ্গ, লাতিন ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের তরুণ ভোটারদের মধ্যে কমলার জনপ্রিয়তা ভালো। তবে বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, বাইডেন প্রার্থিতা থেকে সরে গেলে ডেমোক্রেটিক দল নিয়ে নিরপেক্ষ ভোটারদের মন বদলে যেতে পারে।