চিনি চোরাচালান বেড়েছে কমেছে আমদানি

আবু আলী
১২ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
চিনি চোরাচালান বেড়েছে কমেছে আমদানি

চোরাচালানের কারণে দুর্দিনে পড়েছে দেশের চিনি শিল্প। চোরাচালান বেড়ে যাওয়ায় চিনিশিল্পের উদ্যোক্তারা অপরিশোধিত চিনি আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। এতে সরকার সরাসরি বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে। অন্যদিকে দেশের চিনি শিল্প অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয় ১৮ লাখ ৪৮ হাজার টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানি কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৮৬ হাজার টন। অর্থাৎ এক বছরে চিনি আমদানি কমেছে ৪ লাখ ৬২ হাজার টন। এনবিআরের হিসাব অনুসারে ২০২২-২৩ অর্থবছরে চিনি আমদানিতে শুল্ক বাবদ আয় হয় ৮ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আয় হয়েছে ৯ হাজার ১৯ কোটি টাকা। মূলত ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে টাকার অঙ্কে শুল্ক আহরণ এক বছরে ১২২ কোটি টাকা বেশি হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ৪ লাখ ৬২ হাজার টন চিনি কম আমদানি হওয়ায় সরকার রাজস্ব হারিয়েছে অনেক বেশি।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভারতে চিনির দাম দেশের তুলনায় কম হওয়ায় সেখান থেকে পণ্যটি চোরাই পথে আসছে। এজন্য চোরাচালান বন্ধ করতে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

জানা গেছে, দেশের বাজারে বর্তমানে চিনির দাম প্রতি কেজি ১৪০ টাকা। অথচ ভারতে একই চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭০-৭৭ টাকায়। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মূলত চোরাচালানের কারণে আমদানি কমছে। তবে চোরাচালান রোধে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। তারা আরও জানিয়েছেন, চোরাই পথে আসা চিনির মাত্র ১ শতাংশ ধরা পড়ছে। বাকি চিনি বাজারে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে, এতে দুর্দিনে পড়েছে দেশি কোম্পানিগুলো।

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, চিনি চোরাচালানের বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এটি বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনা দরকার। তবেই এটি সমাধান হবে বলে। একই সঙ্গে ড্রোন সিস্টেমের মাধ্যমে চোরাচালান চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শও দেন তিনি।

কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে চিনি আমদানি কমছে। এর আগের পাঁচটি অর্থবছরের প্রতিটিতেই ২১ থেকে প্রায় ২৩ লাখ টন চিনি আমদানি হয়েছে। কিন্তু ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে এসে তা ২০ লাখ টনের নিচে নেমে গেছে। চট্টগ্রাম বন্দর ও এনবিআরের সূত্র মতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২১ লাখ ৬১ হাজার ৯৭২ টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২২ লাখ ৯৫ হাজার ৯৮৮ টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২২ লাখ ৩৮ হাজার ৮২৯ টন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২১ লাখ ৭০ হাজার ১৬৮ টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২২ লাখ ৮৫ হাজার ৬০৩ টন এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৯ লাখ ৮৬ হাজার টন চিনি আমদানি হয়।

আব্দুল মোনেম লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন মোনেম আমাদের সময়কে বলেন, অবৈধ পথে চিনি আসায় দেশ রাজস্ব হারাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা পাচার হচ্ছে। তিনি বলেন, গত জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত (পাঁচ মাস) তিন থেকে চার লাখ টন কম আমদানি হয়েছে র-সুগার। চোরাই পথে চিনি ঢোকার কারণে কেউ চিনি বিক্রি করতে পারছে না। তাই আমাদানিও কমে গেছে।

বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা রয়েছে ৩০টি। এই সীমান্তের বড় অংশ দিয়েই চিনি আসছে দেশে। অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, সিলেট বিভাগ; ফেনী, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সাতক্ষীরা জেলা এবং যশোরের বেনাপোলÑ এসব সীমান্ত দিয়ে চিনি চোরাচালান বেশি হচ্ছে। চোরাই পথে আসা চিনি দেশীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামে মোড়কজাত করে বিক্রি করা হচ্ছে।

জানা গেছে, দেশে প্রতিদিন চিনির চাহিদা কম-বেশি ৬ হাজার টন। এখন কারখানাগুলো থেকে সরবরাহ হয় সর্বনিম্ন ২ থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার টন। এ হিসাবে অন্তত গড়ে প্রতিদিন ২ হাজার টন চিনি দেশের বাজারে অবৈধভাবে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ঢুকছে। এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, চোরাচালান বন্ধ করতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। কেননা, বৈধ পথে আমদানিতে শুল্ক-কর দিতে হলেও চোরাইপথে আসা চিনিতে শুল্ক-কর দিতে হয় না। এতে সরকার বড় ধরনের রাজস্ব আয় হারাচ্ছে।