বেসিকের বাচ্চুর কাছে বাড়ি বিক্রেতা আমিন কারাগারে
শেখ আবদুল হাই বাচ্চু বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালে ১৩টি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করেন। তারপর সেই ঋণ দেওয়ার বদলৌতে সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে ৭৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ১৩১টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ঘুষ নেন। কৌশলে নিজে পে-অর্ডারগুলো গ্রহণ না করে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট বাজার এলাকায় তার কেনা বাড়ির মূল্য বিক্রেতাকে পরিশোধ করেন। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়।
এদিকে এ কা-ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় গতকাল বুধবার আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে শুনানি শেষে বাড়ি বিক্রেতা আমিন আহমেদকে কারাগারে পাঠিয়েছেন ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামস জগলুল হোসেনের আদালত। এ আদালতে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর আমাদের সময়কে বলেন, মামলাটি গেজেট নোটিফিকেশন জারির অপেক্ষায় রয়েছে। এরপর এ মামলার বিচার শুরু হবে।
এক যুগ আগে ৩০ দশমিক ২৫ কাঠা জমির ওপর নির্মিত ওই বাড়িটি ১১০ কোটি টাকা দিয়ে ক্রয় করেছিলেন
বাচ্চু; কিন্তু তাতেও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বাড়ির দলিলে মূল্য দেখান ১৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ওই জমি কিনে ৯৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও পাচার এবং জমির মূল্য কম দেখিয়ে দলিল করে সরকারের ৮ কোটি ৫২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা রাজস্ব ফাঁকিরও অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর গত ২৭ মে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদক সহকারী পরিচালক ও তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
গাজী। এতে শেখ আবদুল হাই বাচ্চুসহ ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।
তদন্তে ওঠে আসে, বাচ্চু বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালীন দুর্নীতির মাধ্যমে বিধিবহির্ভূতভাবে ১৩টি অস্তিস্তহীন ও নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে অবৈধ ঋণ মঞ্জুর করেন। এরপর ওইসব ভুয়া প্রতিষ্ঠানের মালিকদের পক্ষ থেকে ২০১২ সালের ১২ আগস্ট থেকে একই বছরের ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত ওইসব পে-অর্ডারের মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশ্যে সরাসরি নিজে গ্রহণ না করে জমি ক্রয় করার নিমিত্তে জমির দলিলদাতার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে ৭৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকার পে-অর্ডারগুলো ইস্যু করিয়েছেন। জমির বাকি ৩১ কোটি ২৫ লাখ টাকা বিভিন্ন তারিখে সমঝোতা চুক্তিপত্রের উল্টো পাতায় হাতে লিখে পরিশোধপূর্বক দলিলদাতা ও গ্রহীতা উভয়পক্ষ স্বাক্ষর করেন।
২০১২ সালে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট বাজার এলাকার শহীদ সরণিতে অবস্থিত ওই বাড়ি ক্রয় করেন বাচ্চু। বাড়িটি কেনা কেন্দ্র করে গত বছরের ৩ অক্টোবর ৯৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক মো. নুরুল হুদা। মামলায় শেখ আবদুল হাই বাচ্চু ছাড়াও তার স্ত্রী শিরিন আক্তার, ছেলে শেখ রাফা হাই ও শেখ ছাবিদ হাই অনিক, বাচ্চুর ভাই শেখ শাহরিয়ার পান্না ও বাড়ির বিক্রেতা হোটেল লা মেরিডিয়ানের মালিক আমিন আহমেদকে আসামি করা হয়। আমিন আহমেদের কাছ থেকে ওই জমি কিনে বাচ্চু তার পরিবারের সদস্যদের নামে দলিল করেন। মামলার অভিযোগপত্রেও তাদের সবাইকে আসামি করা হয়েছে।
যারা ঋণগ্রহণ করে শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে ঘুষ হিসেবে পে-অর্ডারের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করেছেন তাদের এই মামলায় আসামি করা হয়। তবে বেসিক ব্যাংকের আড়াই হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় ২০১৫ সালে দুদকের দায়ের করা বিভিন্ন মামলায় তাদের আসামি করা হয়।
ঋণ নেওয়া ওই নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের মালিকরা হলেন- আজবিহা অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী মারুফ জামান, বাশার এন্টারপ্রাইজের আইনুল হক, মেসার্স আলী ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের সৈয়দ হামিদুজ্জামান, মেসার্স নীল সাগর অ্যাগ্রোর আহসান হাবিব, ডায়নামিক ট্রেডিংয়ের আবুল কালাম, বর্ষণ অ্যাগ্রোর কামরান শহীন, হার্ব হোল্ডিংসের আবুল ফাত্তাহ, নিউ হাসিব অটো রাইচমিলের শফিকুর রহমান, এসএম অটোর শাহরিয়ার মাহমুদ, কক্স ডেভলপারের সৈয়দ কামরুজ্জামান ও কিশোর কুমার মন্ডল নামে আরেক ব্যক্তি রয়েছে।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন