বাজেটের আকার বাড়ে বাস্তবায়ন সেই তিমিরে

আবু আলী
১০ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
বাজেটের আকার বাড়ে বাস্তবায়ন সেই তিমিরে

প্রতিবছর বাজেটের আকার বাড়ছে; কিন্তু বাড়ছে না বাস্তবায়নের হার। অথচ দেশের অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বাজেটের আকার আরও বড় হওয়া দরকার। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি গত অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের চেয়ে তিনগুণ বড় বিকল্প বাজেট প্রস্তাব করেছিল। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, যেখানে সরকারঘোষিত বাজেট শতভাগ বাস্তবায়ন হয় না, সেখানে বাজেটের আকার বড় করলে বাস্তবায়নের চিত্র বদলাবে না। যদিও বাংলাদেশের প্রায় সমান অর্থনীতির দেশ ভিয়েতনামে বাজেট বাস্তবায়নের হার শতভাগ। ভারত কিংবা আফ্রিকার দেশ উগান্ডায়ও বাজেট বাস্তবায়নের হার বাংলাদেশের চেয়ে বেশি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রশাসনিক অদক্ষতা ও জবাবদিহির অভাবে বাজেট শতভাগ বাস্তবায়িত হয় না। এ ছাড়া বাস্তবায়ন ব্যর্থতা নিয়ে সংসদে তেমন আলোচনাও হয় না। অথচ অর্থনৈতিক কর্মকা-কে উৎসাহিত করতে এবং বিনিয়োগ আকর্ষণ, কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধির জন্য অন্যতম অনুঘটক হচ্ছে এডিপির বাস্তবায়ন। এডিপির বাস্তবায়ন পিছিয়ে থাকলে পুরো বাজেটের বাস্তবায়নই পিছিয়ে পড়ে।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, সরকারের অনুন্নয় বাজেট বা পরিচালন বাজেট বাস্তবায়িত হয়; কিন্তু উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়িত হয় না। আবার উন্নয়ন বাজেটের বাস্তবায়নে তাড়াহুড়া করা হয় অর্থবছরের শেষের দিকে। তখন প্রকল্পের মান ঠিক থাকে না। খরচের ক্ষেত্রে মনিটরিং হয় না।

অর্থ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, অর্থছাড় প্রক্রিয়া সহজ করেও বাজেট বাস্তবায়নের গতি বাড়াতে পারেনি সরকার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ৫৭ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬১ শতাংশ। আর গত ১০ বছরের বাজেট বাস্তবায়নের হার ৮০-৮৫ শতাংশের মধ্যেই আটকে আছে। যদিও ২০১৮ সালে বাজেট বাস্তবায়নের গতি বাড়াতে অর্থছাড় প্রক্রিয়া সহজ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল অর্থবিভাগ। এরপর ৫ বছর কেটে গেলেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে গতি বাড়ানো সম্ভব হয়নি।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের মতে, প্রশাসনিক অদক্ষতা ও জবাবদিহির অভাব- মূলত এই দুই কারণে বাজেটের পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয় না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশাসনিক অদক্ষতা, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক মান উন্নয়ন করতে না পারা, উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়ার আগে সমীক্ষা না করা, যোগ্যতম সরকারি কর্মচারীকে যথাযথ পদে নিয়োগ না দেওয়া, সরকারি কর্মচারীদের অক্ষতা ও জবাবদিহির অভাব, প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি করা এবং রাজস্ব আয়-ব্যয়ের সঠিক প্রাক্কলন না করা- এসব কারণেই বাজেট বাস্তবায়নে গতি বাড়ানো যায় না।

সরকারের বাজেট বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবানের গতি করোনা মহামারির সময়ের চেয়েও কম। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছিল প্রায় ৬৪ শতাংশ। আর পরের বছরের একই সময়ে সেটা হয়েছিল প্রায় ৬২ শতাংশ। অথচ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সেটা ৫৭ শতাংশ।

বাজেট ঘোষণার সময় বিশাল আকারের এডিপি নেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে এসে তা সংশোধন করে কমিয়ে আনা হয়। এরপর সংশোধিত বাজেটের পুরোটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। এবার অবশ্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার কমানো হয়েছে। যদিও সেটা করা হয়েছে, আর্থিক সংকটের কারণে। এ জন্য এবার মোট বাজেটের আকারও কমিয়ে আনা হয়েছে। এদিকে প্রতিবছর অর্থবছরের শেষের তিন মাস তাড়াহুড়া করে এডিপি বাস্তবায়ন দেখানো হয়। না হলে বরাদ্দকৃত অর্থ ফেরত পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোতে।

অর্থবিভাগের ১০ বছরের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবারই বাজেট বাস্তবায়ন হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ। সদ্য সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটও পুরোটা বাস্তবায়িত হয়নি। এ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। সংশোধন করে তা ৭ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। তবে অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো জানায়, শেষ পর্যন্ত এ বাজেটও বাস্তবায়ন হবে ৮৫ শতাংশ, যা মোট টাকার অঙ্কে দাঁড়াতে পারে ৬ লাখ ৪৭ হাজার ৫১৮ কোটি টাকায়। কারণ, গত অর্থবছরের ১১ মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল মাত্র ৫৭ শতাংশ।