চার মহানগরে ফের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা বিএনপির

নজরুল ইসলাম, ঢাকা; মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, চট্টগ্রাম ও আল মামুন, বরিশাল
০৮ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
চার মহানগরে ফের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা বিএনপির

ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ, চট্টগ্রাম ও বরিশাল- এই চারটি মহানগরে ফের নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে বিএনপি। গত ১৩ জুন এই মহানগরগুলোয় আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছিল।

গতকাল বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কমিটি গঠনের বিষয়টি জানানো হয়। গত ১৩ জুন চারটি মহানগর কমিটি বিলুপ্ত এবং ১৫ জুন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে ৪৫ নেতাকে পদায়ন বিষয়ে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা খুব একটা জানতেন না, তা নিয়ে দলের মধ্যে বিতর্ক তৈরি হয়। তবে এবার দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা জানতেন কাদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। কয়েকজন নেতার কাছ থেকে মতামতও নিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

নতুন কমিটিতে ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক করা হয়েছে কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরবকে। আগের কমিটির সদস্য সচিব আমিনুল হককে আবারও একই পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আগের কমিটির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুকে পদোন্নতি দিয়ে আহ্বায়ক করা হয়েছে। আগের কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীর আহমেদ রবিনকে করা হয়েছে সদস্য সচিব।

চট্টগ্রাম মহানগরের আগের কমিটির সদস্য এরশাদুল্লাহকে আহ্বায়ক ও আগের কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক নাজিমুর রহমানকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। বরিশাল মহানগরে পুনরায় মনিরুজ্জামান খান ফারুককে আহ্বায়ক করা হয়েছে, আগের কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়াকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক হয়েছেন ছাত্রদলের সাবেক নেত্রী আফরোজা খানম নাসরিন।

এই চার কমিটি সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আমাদের সময়কে বলেন, ‘মাঠের কর্মীদের আস্থার প্রতিফলন ঘটেছে, মাঠের নেতাদের উপযুক্ত মূল্যায়ন হয়েছে। যারা দায়িত্ব পেয়েছেন তাদের লক্ষ্য হবে সবাইকে নিয়ে কাজ করা।’

২০২১ সালের ২ আগস্ট আমানউল্লাহ আমানকে আহ্বায়ক ও আমিনুল হককে সদস্য সচিব, দক্ষিণে আবদুস সালামকে আহ্বায়ক ও রফিকুল আলম মজনুকে সদস্য সচিব করে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। চট্টগ্রাম মহানগরে কমিটি করা হয় ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর। ওই সময় ডা. শাহাদত হোসেনকে আহ্বায়ক ও আবুল হাশেম বক্করকে সদস্য সচিব করা হয়। ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর মনিরুজ্জামান খান ফারুককে আহ্বায়ক ও মীর জাহিদুল কবিরকে সদস্য সচিব করে বরিশাল মহানগর কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই চার কমিটিকে গত ১৩ জুন রাতে একযোগে বিলুপ্ত ঘোষণা করে বিএনপি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন চার মহানগর কমিটিতে যাদের স্থান দেওয়া হয়েছে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে আগে থেকেই তাদের আলাপ-আলোচনা হচ্ছিল। কমিটি বিলুপ্তির পর যোগাযোগ আরও বাড়ে। সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এবং দলের কিছু সিনিয়র নেতার পরামর্শও নেওয়া হয়। গত শনিবার রাতে ‘ঐক্যবদ্ধ’ভাবে সবাইকে নিয়ে কাজ করার শর্তে চার মহানগর কমিটির শীর্ষ নেতাদের নাম চূড়ান্ত করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের দায়িত্ব পাওয়া চার নেতার মধ্যে তিনজনই আগের কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। আহ্বায়ক কমিটিতে নতুন কেবল সাইফুল আলম নিরব। ওয়ার্ড ছাত্রদলের রাজনীতি দিয়ে হাতেখড়ি সাইফুল আলম নিরব কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি অবিভক্ত ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

সাইফুল আলম নিরব আমাদের সময়কে বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমার ওপর আস্থা রেখে যে নতুন দায়িত্ব দিয়েছেন, আমি তার প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করব। বিগত আন্দোলনে ত্যাগী ও মাঠের কর্মীদের মূল্যায়নের মধ্যদিয়ে কাজ শুরু করতে চাই।

দেশব্যাপী পরিচিত আমিনুল হক জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক এবং গোলরক্ষক ছিলেন। দলের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদকও তিনি। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক মজনুও ছাত্রদল থেকে উঠে আসা নেতা। তিনি প্রথমে ছাত্রদল ও পরে যুবদলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ছিলেন। সদস্য সচিব রবিন সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদের ছেলে।

দলীয় নেতা-কর্মীরা মনে করেন, উত্তরের কমিটিতে ভারসাম্য থাকলেও দক্ষিণের কমিটি অপেক্ষাকৃত জুনিয়রদের নেতৃত্বে আনা হয়েছে। ঢাকা মহানগরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতা মনে করেন, নতুন কমিটি গঠনে অনেক ইতিবাচক দিক থাকলেও কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। এর মধ্যে উত্তরের দুই শীর্ষ নেতা নিরব ও আমিনুল উভয়ের পৈতৃক বাড়ি ভোলা। একজন নেতা বলেন, বিষয়টি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নজরে আনা হয়েছিল। তিনি পাত্তা দেননি। ঢাকা মহানগরের রাজনীতিতে নিরব বেশ অভিজ্ঞ, এ কারণে তাকে এ পদে আনা হয়েছে। আর আমিনুল আগে থেকেই ছিলেন।

দক্ষিণের কমিটির শীর্ষ পদে অপেক্ষাকৃত জুনিয়রদের আনা হয়েছে। তরুণ কর্মীদের মূল্যায়ন করতে গিয়ে অনেক অভিজ্ঞ নেতার রাজনীতি হুমকির মধ্যে পড়েছে। বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক নবীউল্লাহ নবীর অনুসারী একজন নেতা বলেন, এখন মহানগর দক্ষিণে জ্যেষ্ঠ নেতাদের রাজনীতি করার সুযোগ অনেক কমে গেল।

চট্টগ্রাম ও বরিশাল : নতুন কমিটি নিয়ে পদপ্রত্যাশীদের মাঝে ক্ষোভ থাকলেও মাঠকর্মীদের বড় কোনো অভিযোগ নেই। চট্টগ্রামে এরশাদুল্লাহকে দায়িত্ব দেওয়ায় দলের কেউ কেউ ভেতরে ভেতরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান উভয় বলয়ের সমন্বয় ঘটাতে এরশাদুল্লাহ ও নাজিমুরকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এরশাদুল্লাহ চট্টগ্রাম মহানগরের মীর নাসির-দস্তগীর নেতৃত্বাধীন কমিটির প্রথম যুগ্ম সম্পাদক, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এবং সদ্য বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। অন্যদিকে নাজিমুর রহমান চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি এবং এ্যানী-সোহেল কমিটির কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ছিলেন। বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাকে নিয়ে চট্টগ্রামের রাজনীতিতে বড় সমালোচনা তার পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুরে।

একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, চট্টগ্রামে যে দুই নেতা দায়িত্ব পেয়েছেন, অনেকদিন তারা মূল দায়িত্বেও ছিলেন না। তবে দুজনই সাংগঠনিকভাবে মোটামুটি দক্ষ। বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল আমাদের সময়কে বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব হিসেবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যাদের দায়িত্ব দিয়েছেন তারা মাঠের নেতা।

এদিকে অপেক্ষাকৃত তরুণ আফরোজা খানম নাসরিনকে ১ নং যুগ্ম আহ্বায়ক করায় বরিশাল মহানগরে জ্যেষ্ঠ ও অভিজ্ঞ নেতাদের পক্ষে রাজনীতি করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। স্থানীয় একজন নেতা বলেন, এখানে মূলত সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদারের ওপর নির্ভর করে কমিটি সাজানো হয়েছে। তিনি মজিবর রহমান সরোয়ার কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন।

বরিশাল বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান মনে করেন, কমিটিতে সিনিয়র-জুনিয়রের সমন্বয় করা হয়েছে।