অচলাবস্থা কাটবে কবে?

এম এইচ রবিন
০৭ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
অচলাবস্থা কাটবে কবে?

সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিম বাতিলের দাবিতে সরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলনে বন্ধ আছে ক্লাস ও পরীক্ষা। এর সঙ্গে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলন যুক্ত হওয়ায় রীতিমতো অচলাবস্থা চলছে বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে। এমতাবস্থায় প্রশ্ন জেগেছে, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এহেন অচলাবস্থা কবে কাটবে? কবে ফিরে আসবে লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ। এক্ষেত্রে সরকার ও আন্দোলনকারীদের পারস্পরিক আলোচনার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষাবিদরা বলছেন, এর কোনো বিকল্প নেই।

পেশাগত মর্যাদা ও সম্মান আদায়ের লক্ষ্যে তারা আন্দোলন করতে বাধ্য হয়েছেন জানিয়ে শিক্ষকরা বলছেন, আমাদের আন্দোলনের কারণে শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হচ্ছে, তা পুষিয়ে দিতে পরবর্তীকালে প্রয়োজনে বাড়তি ক্লাস নেওয়া হবে। কিন্তু দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এদিকে চাকরিতে প্রবেশে বৈষম্যের প্রতিবাদে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচিতে অবিচল। শুধু তাই নয়, দাবি আদায়ে আজ বিকাল ৩টা থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ শীর্ষক কর্মসূচিরও ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ কর্মসূচির আওতায় আজ বিকাল ৩টা থেকে বাংলাদেশ অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় গতকাল।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ব্যানারে বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে চলছে আন্দোলন; ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি চলছে তাদের। শিক্ষকদের দাবিগুলো হচ্ছেÑ ‘প্রত্যয়’ কর্মসূচির প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে (জ্যেষ্ঠ সচিবরা যে ধাপে বেতন পান) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো প্রবর্তন করা।

এদিকে চার দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে। দাবিগুলো হলো- এক. ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধা ভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা; দুই. পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন পূর্বক দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরির সমস্ত গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া (সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী ব্যতীত); তিন. সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং চার. দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

গেল সপ্তাহজুড়ে শিক্ষকদের আন্দোলনে একধরনের আশ^াস সঞ্চালন হয়েছিল সরকারের সঙ্গে আলোচনার ঘোষণা আসায়। কিন্তু সে বৈঠক স্থগিত হওয়ায় আন্দোলনের গতি ভিন্নদিকে প্রবাহিত হয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে দেশের বড় একটি রাজনৈতিক দল বলেছে, শিক্ষক ও ছাত্রদের আন্দোলনে তাদের সমর্থন আছে। এমন প্রেক্ষাপটে বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে দ্রুত সরকারকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বাংলাদেশ বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর এ কে আজাদ চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন হচ্ছে, এটি এক পক্ষ থেকে সমাধান আসবে না। সরকার ও আন্দোলনকারীদের দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় সমাধান সম্ভব। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিশ^বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে হবে।

উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে এমন পরিস্থিতিতে কী করণীয় জানতে চাইলে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তদারক প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর আমাদের সময়কে বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামানো বা সমাধান করা কোনোটিই ইউজিসির এখতিয়ারের মধ্যে নেই। এটি কেবল সরকারের নীতিগত ব্যাপার।

সপ্তাহজুড়ে ক্যাম্পাস অচলাবস্থায় শিক্ষার্থীদের ক্ষতি প্রসঙ্গে গতকাল শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া আমাদের সময়কে বলেন, ‘আন্দোলনের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা ও ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। কিন্তু এটি যেহেতু আমাদের আত্মমর্যাদার আন্দোলন, তাই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তা চলবে। আমাদের দাবিগুলো মেনে নিলে শুক্র-শনিবার বিশেষ ক্লাস ও অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, সেটা পুষিয়ে নেওয়া হবে।’

এদিকে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গতি আরও সঞ্চারিত হচ্ছে, ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। গতকাল পঞ্চম দিনের মতো আন্দোলনে নেমেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। এরই অংশ হিসেবে বিকাল ৩টার পর থেকে শাহবাগে অবস্থান নেন তারা। এ আন্দোলন থেকে সারাদেশে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ঘোষণা অনুযায়ী, আজ রবিবার ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে সর্বাত্মক ব্লকেড (অবরোধ) পালন করা হবে। এ কর্মসূচির ফলে সব ক্যাম্পাসের সামনের সড়ক অবরোধ করবেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ট্রেন অবরোধেরও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

গতকাল এ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ফাহিম। এ সময় তিনি বলেন, রবিবার বিকাল তিনটা থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো। শুধু শাহবাগ মোড় নয়, শাহবাগ ও ঢাকা শহরের সায়েন্স ল্যাব, চানখাঁরপুল, নীলক্ষেত, মতিঝিলসহ প্রতিটি পয়েন্টে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা নেমে এসে কর্মসূচি সফল করবেন। ঢাকার বাইরের জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করবেন।

শাহবাগের সমাবেশে শিক্ষার্থীরা ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ,’ ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ এমন সেøাগান দিতে থাকেন।