অর্থ সংকটে থমকে গেছে কাজের গতি

শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল

গোলাম সাত্তার রনি
০৭ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
অর্থ সংকটে থমকে গেছে কাজের গতি

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থার্ড টার্মিনাল চালু হওয়ার কথা ছিল চলতি বছর ৫ এপ্রিল। শতভাগ কাজ শেষ না হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় এই মেয়াদ বাড়িয়ে দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয় আগামী অক্টোবর। কিন্তু অক্টোবরেও হবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, অর্থ সংকটের কারণে শেষ মুহূর্তে থমকে গেছে প্রকল্পের কাজের গতি। ঠিকাদারের বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে না। আমদানিকৃত মালামাল পড়ে আছে বিভিন্ন বন্দরে। ট্যাক্স-ভ্যাট পরিশোধ করতে না পারায় সেসব খালাস করা যাচ্ছে না। বিল বকেয়া থাকায় ঠিকাদাররাও যথাসময়ে মালামাল দিচ্ছে না। এ অবস্থায় আগামী অক্টোবরে উদ্বোধনের কথা থাকলেও সেটা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যথাসময়ে অপারেশনে না গেলে প্রকল্পের ইকুইপমেন্ট নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ ইলেক্ট্রনিকস যন্ত্রপাতি চালু না থাকলে সেগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ পরিস্থিতি কাটাতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সহায়তা চেয়েছেন প্রকল্প পরিচালক (পিডি) একেএম মাকসুদুল ইসলাম। গত সোমবার তিনি বেবিচক চেয়ারম্যানের কাছে ১৫০ কোটি টাকা ঋণ চেয়ে চিঠি দিয়েছেন।

চিঠিতে পিডি উল্লেখ করেন, ২০২৪-২৫ আর্থিক সালে বাজেট বরাদ্দের বিপরীতে জিওবি খাতে বরাদ্দকৃত তহবিল পাওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ে প্রকল্পের আয়কর ও ভ্যাট এবং আমদানিকৃত মালামালের কাস্টম ডিউটি পরিশোধের জন্য ১৫০ কোটি টাকা ঋণ প্রয়োজন। কর্তৃপক্ষের নিজস্ব তহবিল থেকে এই ঋণ প্রদানের জন্য তিনি চিঠি দেন।

বেবিচক সূত্র জানায়, গত বছর ৭ অক্টোবর ‘স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবতার সংযোগ’ সেøাগান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন করেন। ২১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ের তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর শুরু হয়। সরকার দিয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা এবং অবশিষ্ট অর্থায়ন করেছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। তৃতীয় টার্মিনালের ডাবল এন্ট্রি ব্রিজসহ ১২টি বোর্ডিং গেট শুরুতে চালু হবে এবং পরে আরও ১৪টি বোর্ডিং সেতু স্থাপন করা হবে। ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে তৃতীয় টার্মিনালে ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটারের একটি ফ্লোর স্পেস, ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার, ৬৬টি ডিপারচার ইমিগ্রেশন ডেস্ক, ৫৯টি অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন ও তিনটি ভিআইপি ইমিগ্রেশন ডেস্ক রয়েছে।

চলতি বছর ৫ এপ্রিলের মধ্যে থার্ড টার্মিনালের প্রথম পর্বের শতভাগ কাজ শেষ হওয়ার এবং পরদিন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এডিসির কাছ থেকে এই থার্ড টার্মিনাল বুঝে নেওয়ার কথা ছিল। সবকিছু যাচাই-বাছাই করে অক্টোবরের শুরুতেই টার্মিনালটি দেশি-বিদেশি বিমান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে নিশ্চিত ছিল বেবিচক। কিন্তু পিডি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করায় তা সম্ভব হয়নি। যদিও বিমানবন্দরের সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন ও ক্যালিবারেশনের কাজ শেষ। ইতোমধ্যে একাধিকবার যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। টার্মিনালটি ফ্লাইট উড্ডয়ন-অবতরণের জন্য প্রায় প্রস্তুত। নতুন টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে বিশ্বমানের সব সুযোগ-সুবিধা এবং যাত্রী পরিষেবায় দেশের ভাবমূর্তি পাল্টে যাবে। বার্ষিক যাত্রী ও কার্গো হ্যান্ডলিং ক্ষমতা দ্বিগুণ হবে। বার্ষিক যাত্রী হ্যান্ডলিং ক্ষমতা হবে ২৪ মিলিয়ন (পুরনো টার্মিনালসহ)। বর্তমানে যার সক্ষমতা যাত্রী ৮ মিলিয়ন ও কার্গো ৫ লাখ টন। এখানে ৩৭টি নতুন এয়ারক্রাফ্ট পার্কিং এরিয়া এবং অ্যাপ্রোন এলাকায় সংযোগকারী দুটি ট্যাক্সিওয়ে রয়েছে। থার্ড টার্মিনালটিকে মাল্টিমোডাল পরিবহন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে যাত্রীরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবেশ ও প্রস্থান করতে সক্ষম হয়। নতুন টার্মিনালটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ভূগর্ভস্থ রেলপথ (এমআরটি-৫, কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর অংশ) ও একটি ভূগর্ভস্থ টানেলের মাধ্যমে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। এছাড়া আশকোনা হজ ক্যাম্প থেকে আন্ডারগ্রাউন্ড টানেলের মাধ্যমে হজযাত্রীরা তৃতীয় টার্মিনালে যেতে পারবেন। বিশ্বমানের এই টার্মিনালে ১০৪৪টি গাড়ি রাখার সক্ষমতাসহ বহুতল পার্কিংলট তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া ১৬টি ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হয়েছে। অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য চারটি পৃথক বেল্ট রয়েছে। একটি করিডরের মাধ্যমে পুরনো দুটি টার্মিনালের সঙ্গে নতুন টার্মিনালকে যুক্ত করা হবে। থার্ড টার্মিনালে যেতে যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হবে না। এজন্য অবকাঠামো তৈরি হয়েছে।

থার্ড টার্মিনালের কাজের সর্বশেষ অগ্রগতি ও পিডির ঋণ আবেদনের বিষয়ে জানতে গতকাল বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার কমোডর সাদিকুর রহমান চৌধুরীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সাড়া দেননি তিনি।