চামড়ার দাম কম, পণ্যে অতিমুনাফা
সিন্ডিকেট করে দেশীয় বাজারে কাঁচা চামড়ার দাম কমিয়ে অতিমুনাফায় বিক্রি করছে চামড়াজাত পণ্য। চামড়ার মান, কেমিক্যালের বাড়তি দাম, বাড়তি উৎপাদন খরচসহ অন্যান্য অজুহাতে কোম্পানিগুলো পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাঁচা মালের দাম কমলে পণ্য উৎপাদনে খরচ কম হবে। এতে পণ্যের দাম কমানোর কথা। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। গেল পাঁচ বছরে চামড়াজাত পণ্যে দাম বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৭ সালে ঢাকার হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে স্থানান্তর,
করোনা মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মারাত্মক প্রভাব এবং আন্তর্জাতিক লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ না থাকার কারণে ফিনিশড চামড়ার চাহিদা বিশ^বাজারে কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে দেশীয় বাজারে। বর্তমানে সাভারের চামড়া শিল্পনগরে ১৪২টি ট্যানারি থাকলেও এর একটিও এলডব্লিউজি সনদ পায়নি। দেশে এলডব্লিউজি সনদ পাওয়া চামড়া কারখানার সংখ্যা এখন পাঁচটি। সব কয়টি কারখানা সাভারের বাইরে অবস্থিত।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
এদিকে চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনকারীরা বলছেন, কাঁচা চামড়ার দাম কম হলেও এর প্রক্রিয়াজাতকরণে অনেক খরচ বেড়েছে। এর পাশাপাশি কেমিক্যালসহ আনুষঙ্গিক কাঁচামালগুলো আমদানি করতে হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে সব কিছুর দাম বেড়েছে। ফলে এর চাপ পড়েছে পণ্যের ওপর। স্থানীয় বাজারে এক জোড়া জুতার দাম দুই হাজার থেকে শুরু করে ৮-৯ হাজার টাকা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর বেশি দামেরও রয়েছে। আর চামড়ার স্যান্ডেলের দাম ১২শ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকার বেশিও রয়েছে।
এ ছাড়া বেল্টের দাম ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকা, মানিব্যাগ ৮০০ থেকে এক হাজার ৭০০ টাকা। মেয়েদের ব্যাগের দাম এক হাজার ৫০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা।
অন্যদিকে একটি কাঁচা চামড়ার দাম আকার ভেদে ৫০০ টাকা থেকে হাজার টাকা। একটি চামড়া থেকে ৮-১০ জোড়া জুতা তৈরি হয়।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
জানতে চাইলে লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহসভাপতি মো. নাসির খান আমাদের সময়কে বলেন, কাঁচা চমড়ার দাম কম হলেও এক জোড়া জুতা তৈরি করতে নানা ধাপ পার হতে হয়। একটি কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতের পরে ৪টি গ্রেডে ফেলা হয়। অধিকাংশ সময় একশ চামড়ার মধ্যে এ গ্রেডের চামড়া পাওয়া যায় ১০টির মতো। ফলে ডি গ্রেডের চামড়াও গড় করে চামড়ার দাম নির্ধারণ হয়। এ কারণেই ফিনিশড চামড়ার দাম অনেক বেশি পড়ে যায়। এ ছাড়াও অন্যান্য কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় সব কিছুর দাম বেড়েছে। এর বাইরে শ্রমিকের মজুরি, শো-রুমের অ্যাডভান্স, ভাড়া, কারখানা ভাড়া, গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারীর বেতনসহ অন্যান্য খরচ ধরলে চামড়াজাত পণ্যের দাম তেমন বাড়েনি। এ ছাড়া অবিক্রীত পণ্যের খরচও এর ওপর ধরা হয়। বরং এ খাতের উদ্যোক্তারা চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। লড়াই সংগ্রাম করে টিকে থাকার চেষ্টায় রয়েছেন।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, করোনার পর ইউরোপ-আমেরিকায় মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। ইউরোপ-আমেরিকায় চামড়াজাত পণ্যের ব্যবহার কমে গেছে। এ ছাড়াও আর্টিফিশিয়াল লেদারের ব্যবহার বেড়ে গেছে। ক্রেতাদের হাতে টাকা না থাকায় তারা এখন চামড়াজাত পণ্য কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। এ কারণেই চামড়ার চাহিদা কমেছে। ফলে দেশীয় বাজারেও চামড়ার দাম পড়ে গেছে।
তবে এ খাতে সম্পৃক্ত এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে ে বলেন, কাচাঁমালসহ অন্যান্য খরচ যতটুকু বেড়েছে, তার চেয়ে উৎপাদনকারীরা পণ্যের দাম কয়েকগুণ বাড়িয়েছে।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম