স্বীকারোক্তি প্রত্যাহারের আবেদন তিন আসামির
আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যা মামলার তিন আসামি অভিযোগ তুলেছেন- রিমান্ডে নির্যাতন চালিয়ে জোর করে তাদের কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করা হয়েছে। কাজেই স্বীকারোক্তি প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছেন তারা। এ তিনজন হচ্ছেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু, শিমুল ভূঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্যাহ সাঈদ ও তানভীর ভূঁইয়া। আদালত সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, আদালতে গ্যাস বাবু আরও অভিযোগ করেছেন, তাকে কারাগারে ২৪ ঘণ্টা লক-আপের মধ্যে রাখা হয়েছে। কোনো আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। আইন অনুযায়ী মোবাইল ফোনেও যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার এক ভিডিও বার্তায় ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, আনার হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার সাতজনের মধ্যে ছয়জনই হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া আরও যাদের নাম এসেছে, তাদেরও গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে।
অন্যদিকে গতকাল এ মামলায় প্রতিবেদন দাখিলের ধার্য তারিখ ছিল। কিন্তু পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল না করায় আদালত আগামী ৮ আগস্ট প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ঠিক করেছেন।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এ দিন উল্লেখিত আসামিদের জবানবন্দি প্রত্যাহারের ওপর শুনানি হয়। শুনানিকালে আসামিদের আদালতে উপস্থিত করা হয়। গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা অন্য আসামিদের আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর এহসানুল হক সমাজীসহ কয়েকজন আইনজীবী আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন। শুনানিতে অভিযোগ তোলা হয়, রিমান্ডে নির্যাতন করে আসামিদের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে। এ কারণে তা প্রত্যাহারের আবেদন করেন আইনজীবীরা। একই সঙ্গে নির্যাতনের কারণে আসামিরা অসুস্থ মর্মে চিকিৎসার আবেদন করলে আদালত কারাবিধি অনুযায়ী কারা কর্তৃপক্ষকে চিকিৎসার নির্দেশ দেন।
শুনানির সময় আইনজীবীদের পাশাপাশি আসামি গ্যাস বাবু ও শিমুল ভূঁইয়া বক্তব্য দেন। বক্তব্যে গ্যাস বাবু বলেন, রিমান্ডে নির্যাতন করে তাকে দিয়ে স্বীকারোক্তি করানো হয়েছে। কারাগারে ২৪ ঘণ্টা তাকে লক-আপের মধ্যে রাখা হয়। সকল বন্দিকে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হলেও তাকে দেখা করতে দেওয়া হয় না। কারাগারে বন্দিদের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সপ্তাহে একদিন মোবাইল ফোনে কথা বলতে দেওয়া হলেও তাকে তা দেওয়া হচ্ছে না। তিনি অসুস্থ। তবু তার কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তাকে সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে কারা কর্তৃপক্ষ। আইনজীবী এ বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে একটি আদেশ দেওয়ার আবেদন করেন। অপর আসামি শিমুল বলেন, রিমান্ডে তাকে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি করানো এবং নির্যাতনে তার বাম পা মচকে যাওয়ার অভিযোগ তুলে বলেন, তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না।
শুনানির পর ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুর রহমান স্বীকারোক্তি প্রত্যাহারের আবেদনগুলো নথিভুক্ত রাখার নির্দেশ দেন। একই সাথে চিকিৎসার বিষয়ে কারাবিধি অনুযায়ী কারা কর্তৃপক্ষকে চিকিৎসার নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন
আসামি বাবুর ১৬৪ ধারার জবানবন্দি প্রত্যাহারের শুনানি শেষে তার আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন, জবানবন্দিতে যে বক্তব্য বলা হয়েছে সেটা সত্য ও ইচ্ছাকৃত না। এই বক্তব্য তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বলানো হয়েছে। মূলত মামলাটি তদন্তাধীন। তদন্তাধীন কোনো মামলায় আসামির দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি জনসম্মুখে প্রকাশ করার একটা বাধা রয়েছে। কারণ, এটা হচ্ছে প্রাইভেট ডকুমেন্টস। এটা নিয়ে বক্তব্য দেওয়া ন্যায়বিচারের পরিপন্থি। কি করে গণমাধ্যমে তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রকাশ পেল?