সব লণ্ডভণ্ড করে সেই ছাগল এখন সাভারে
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আলোচিত কর্মকর্তা ড. মতিউর রহমানের সাম্রাজ্য তছনছ করে শেষমেষ সাদিক অ্যাগ্রোকেও লণ্ডভণ্ড করা ছাগলকাণ্ডের সেই ছাগলটি এখন সাভারে। নিরীহ এই ছাগলটির ওপরে যেন ক্ষোভের শেষ নেই খামারসংশ্লিষ্টদের! কেউ বলছেন অপায়া ছাগল। কারও চোখে অশুভর প্রতীক। তাই কেউ কোউ তা দেখামাত্র চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ৫ লাখ টাকা দাম হাঁকানো সেই ছাগল এখন যেন বোঝা হয়ে উঠেছে অনেকের কাছে। তবে কেউ কেউ ছাগলটি দেখে ‘শাবাশ’ বলে বাহ্বাও দিচ্ছেন।
গত বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের খাল এবং সড়কের জায়গা দখল করে অবৈধভাবে নির্মিত সাদিক অ্যাগ্রোতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। অবশ্য সেই খামারে থাকা অন্যান্য পশুর সঙ্গে অভাগা ছাগলটিকেও সরিয়ে নেওয়া হয় অন্যত্র। আলোচিত সেই ছাগলটির সন্ধানে বেরিয়ে খোঁজ মেলে সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নের ভাঙ্গাব্রিজ এলাকার সাদিক অ্যাগ্রো ফার্মে।
সেখানে গিয়ে দেখা যায়, জনসাধারণের দৃষ্টির আড়ালে রাখতে খামারের একটি অংশে ছাগলটিকে রাখা হয়েছে কাপড় আচ্ছাদিত অবস্থায়। উচ্ছেদের আগের রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের খামার থেকে সরিয়ে আনা পশুসহ গরু-বাছুর মিলিয়ে এই খামারে রয়েছে প্রায় আড়াইশ পশু। এ ছাড়া ১২টি উট ও দুটি ঘোড়াসহ রয়েছে হাস-মুরগি। ব্যবস্থাপক হিসেবে ফার্মের দায়িত্ব রয়েছেন জাহিদ খান।
স্থানসংকুলান না হওয়ায় অনেকটা চাপাচাপি করে রাখা হয়েছে পশুগুলোকে। মাস দেড়েক আগে দায়িত্ব নেওয়া জাহিদ খান জানান, এই খামার থেকেই প্রতিদিন গড়ে ৬০০ লিটারের মতো দুধ উৎপাদন হয়। দেখভালের জন্য ৩৫ জন কর্মী নিয়োজিত থাকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আগে এখানে কোনো নিরাপত্তা ছিল না?। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে এখন নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
খামারটি ঘুরে কয়েকটি অংশে দেখা গেল, ইতস্তত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ভাঙা শেড, শীতাতপ যন্ত্রের আউটডোরসহ থাকা-খাওয়ারটির ব্যবস্থা। আলোচিত ছাগলটি কোথায়? বলতেই নিয়ে যান একটি শেডের কাছে। এ সময় খামারের একজন কর্মচারী বিড়বিড় করে বলতে থাকেন, ‘এই ছাগলডারে এইহানে আনাই ঠিক অয় নাই। দুনিয়াদারি খাইয়া ছাগলটা অহন এইহানে কার কপাল খায় কে জানে!’ বোঝাই গেল, ‘অতি মূল্যবান’ ছাগলটি এদের অনেকের কাছেই এখন যেন এক ধ্বংসের প্রতীক।
এর মধ্যেই হঠাৎ করে গাড়ির আওয়াজ শোনা যায় খামারের বাইরে। দুটি মাইক্রোবাস থেকে মুহূর্তেই নেমে আসতে থাকেন দুর্নীতি দমন কমিশনের জ্যাকেট গায়ে চাপানো ব্যক্তিরা। তা দেখেই ভ্রƒকুঞ্চিত করে ‘অজানা শঙ্কায়’ সেদিকে এগিয়ে যান খামারের কর্মীরা। একজন আরেকজনের উদ্দেশে বলতে থাকেন, ছাগলের কারণে তো দেহি আপৎ এইহানেও চইল্যা আসছে! উত্তরে একজন বলেন, ছাগলডারে দরকার চিড়িয়াখানায় পাঠানো। এ যেইখানে যাইবো সেই খানেই সর্বনাশ!
গতকাল সোমবার বিকালে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে ৯ সদস্যের একটি এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান চালায় সাভারে সাদিক অ্যাগ্রোর এই খামারটিতে। অভিযানে নেতৃত্ব দেন দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ। এ সময় একটি শেডে তিনটি নিষিদ্ধ ব্রাহামা জাতের গাভী ও সাতটি ব্রাহামার বাছুরের সন্ধান পান তারা।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
অভিযানে থাকা দুদকের সদস্যরা এ সময় কাপড় দিয়ে ঘিরে রাখা ছোট একটি কক্ষে যান। সেখানে ১৫ লাখ টাকা দাম হাঁকানো বিটল জাতের আলোচিত সেই ছাগলটিও প্রত্যক্ষ করেন। এ সময় ছাগলটি লক্ষ্য করে ‘শাবাশ’ বলেও বাহবা দেন অনেকে।
অভিযান শেষে দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের জানান, ব্রাহামা জাতের গরু উৎপাদন পালন ও বিপণন নিষিদ্ধ। আমরা এখানে বেশ কয়েকটি ব্রাহামা জাতের গরু দেখতে পেয়েছি। এখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু নথি জব্দ করা হয়েছে। যেখানে খামার কর্তৃপক্ষ নিজেরাই উল্লেখ করেছে এখানে কতগুলো ব্রাহামা আছে। পাশাপাশি জবাই করার উদ্দেশ্যে কতগুলো পশু এখান থেকে নেওয়া হয়েছে, সেই তথ্যগুলোও আমরা সংগ্রহ করেছি।
প্রসঙ্গত ১৫ লাখ টাকার ‘উচ্চ বংশীয়’ ছাগলকে কেন্দ্র করে ঈদের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল (ছড়িয়ে পড়া) হন মুশফিকুর রহমান ওরফে ইফাত নামের এক তরুণ। এর পর থেকে তার বিলাসী জীবনযাপনের নানা তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পায়। এই ছাগলকাণ্ডের জের ধরেই আলোচনায় আসেন ইফাতের বাবা এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান। তখন মতিউর বেসরকারি একটি টেলিভিশনকে জানান ইফাত তার সন্তান নন। এমনকি স্ত্রীকেও অস্বীকার করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে নিশ্চিত হয় এই ইফাতের বাবাই মতিউর রহমান। সেই আলোচনার জেরে বেরিয়ে আসতে থাকে মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের বিপুল সম্পদের তথ্য, যা গড়িয়েছে দুদকের তদন্তে।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম