প্রশাসনিক কর্মকর্তার এ কী কাণ্ড

শাহজাহান মোল্লা
২৫ জুন ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
প্রশাসনিক কর্মকর্তার এ কী কাণ্ড

প্লটের বর্তমান অবস্থান জানিয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক কর্মকর্তার। এ কাজটি করতে খুব বেশি সময় দরকার না হলেও প্রায় ৬ মাস আটকে রেখেছেন সংস্থাটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আরিফুজ্জামান। অভিযোগ, তিনি টাকা ছাড়া প্রতিবেদন দেন না।

জানা গেছে, ব্যবসায়ী কাজী জয়নাল আবেদিন তার মায়ের কাছ থেকে হেবা দলিলের মাধ্যমে মিরপুর সেকশন-১, ব্লক-ক (উত্তর বিশিল)-এর ৫৯নং পুনর্বাসন প্লটটি নিজের নামে নিয়ে নেন। এ জায়গাটি ছিল মূলত জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের। সংস্থাটি থেকে সরকারি নিয়ম মেনে প্লটটি কিনেছিলেন মো. খবির উদ্দিন নামে একজন ব্যবসায়ী। তার কাছ থেকে জয়নাল আবেদিনের বাবা মো. সাইদ কাজী ১৯৮১ সালের ৬ আগস্ট কিনে নেন। এর পর তিনি স্ত্রী ফয়জন নেছার নামে দলিল করে দেন।

তবে প্লটের মূল মালিকানা জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বিক্রি ও হস্তান্তর হয়। নিয়মানুযায়ী গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের প্লট বিক্রি করতে হলে সংস্থার অনুমতি লাগে। কিন্তু খবির উদ্দিন নিয়ম মানেননি। যিনি কিনেছেন তিনিও তা যাচাই করেননি।

গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ লিজ দলিলের মাধ্যমে খবির উদ্দিনকে প্লটটি হস্তান্তর করেছিল। তাই পরবর্তী বসবাসকারীকে নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। যখন কাজী জয়নাল আবেদিনের নামে নামজারি করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, তখনই বেরিয়ে আসে প্লটটির হস্তান্তর সংক্রান্ত এই জটিলতার বিষয়টি।

ক্রয়সূত্রে মালিক ফয়জন নেছা গত বছর তার ছেলে কাজী জয়নাল আবেদিনের নামে প্লটটি লিখে দেন। তাই নিজের নামে নামজারি করতে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে জাগৃকে আবেদন করেন জয়নাল আবেদিন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে জাগৃক উপপরিচালক আরএম সেলিম শাহনেওয়াজ স্বাক্ষরিত একটি অফিস আদেশ দেওয়া হয় চলতি বছর ২২ জানুয়ারি। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের মিরপুর হাউজিং এস্টেট প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আরিফুজ্জামানকে চিহ্নিত করে অফিস আদেশে বলা হয়, প্লটটিতে বর্তমানে কে বা কারা কিসের ভিত্তিতে বসবাস করছেন বা দখলে রেখেছেন, প্লটটির যাবতীয় কর ও খাজনা পরিশোধ করা হয়েছে কিনা ইত্যাদি আবেদনকারীর মূল কাগজপত্রের সঙ্গে ফটোকপি মিলিয়ে দেখার পর মতামতসহ প্রতিবেদন এই দপ্তরে পাঠাতে হবে।

প্রায় ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো প্রতিবেদন দেননি মো. আরিফুজ্জামান। অভিযোগ রয়েছে, তিনি টাকা ছাড়া প্রতিবেদন দেন না। টাকা নেওয়ার অভিযোগ আগেও উঠেছিল তার বিরুদ্ধে।

জয়নাল আবেদিন জানান, প্রতিবেদন দিতে তার সঙ্গে দেড় লাখ টাকার চুক্তি হয় মো. আরিফুজ্জামানের। তাকে তিনি গত রমজানের প্রথম সপ্তাহে ৫০ হাজার টাকা এবং রোজার শেষ দশ দিনে আরও ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেন। বাকি ৫০ হাজার না দেওয়াতে প্রতিবেদন দিচ্ছেন না আরিফুজ্জামান। ফলে নামজারিও করতে পারছেন না জয়নাল আবেদিন।

অভিযোগের বিষয়ে আরিফুজ্জামান আমাদের সময়কে বলেন, ‘ঘুষ নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমার কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে হাজির হয়নি- প্রতিবেদন দেব কীভাবে।’

তবে তার এই কথার সঙ্গে বাস্তবতা মিলছে না। কারণ টাকা নেওয়ার পর গত ২১ এপ্রিল প্রয়োজনীয় ফি বাবদ ৫ হাজার ৩৭১ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার জন্য চালান কেটে দেন আরিফুজ্জামান।