আমি পালাইনি, ফিরে এসেছি
সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিপুল সম্পদ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জব্দ করার পর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার সম্পদের বিষয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এর মধ্যেই তিনি সস্ত্রীক সিঙ্গাপুরে যান। গুঞ্জন ওঠে বেনজীর আহমেদের মতো তিনিও দেশ ছেড়েছেন। তবে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে ফোন করা হলে আছাদুজ্জামান মিয়া আমাদের সময়কে বলেন, অন্যদের মতো আমি পালিয়ে যাইনি। সিঙ্গাপুর থেকে রবিবার দেশে ফিরেছি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও তার পরিবারের বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, পুলিশের সাবেক এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার স্ত্রীর নামে ঢাকায় একটি বাড়ি ও দুটি ফ্ল্যাট এবং মেয়ের নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে স্ত্রী ও সন্তানদের নামে ৬৭ শতক জমি রয়েছে। এই তিন জেলায় তার পরিবারের সদস্যদের নামে রয়েছে আরও ১৬৬ শতক জমি।
এ বিষয়ে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, তার এবং পরিবারের সব সম্পদ বৈধ আয়ে গড়া। তাদের আয়ের সঙ্গে এই সম্পদ সামঞ্জস্যপূর্ণ। সব সম্পদের বৈধ উৎস এবং কাগজপত্র তার কাছে রয়েছে। তিনি বলেন, চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে গিয়েছিলাম। কিন্তু বলা হলো যে, আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় পালিয়ে গেছি। কিন্তু আমি পালিয়ে যাইনি, গত রবিবার দেশে ফিরে এসেছি।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সম্পদের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা সংবাদ প্রসঙ্গে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, এটি ব্যক্তিগত আক্রোশ ও হিংসা থেকে করা হয়েছে। এটা জঘন্য পাপাচার এবং মিথ্যাচার। আমার যা সম্পদ আছে সবই জ্ঞাত আয়। আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যদি একটি সম্পদ থাকে যেটা আমার আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, তাহলে দেশের প্রচলিত আইনে যা শাস্তি হয় সেটা মাথা পেতে নেব।
তাহলে দেশ ছেড়ে পালানোর গুঞ্জন উঠল কেন? এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, ওরা ভেবেছিল হাজার হাজার বিঘা জমি আছে। একজন দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। আমিও হয়তো পালিয়ে যাব।
ডিএমপির সাবেক এই কমিশনার আরও বলেন, আমার বিষয়ে তথ্যগুলো নেওয়া হয়েছে সরকারি একটি তথ্যভাণ্ডার থেকে। তাদের চিহ্নিত করে বরখাস্তও করা হয়েছে। তথ্য গাজীপুর থেকে চলে গেছে দেশের বাইরে জুলকারনাইন সামির কাছে। তার পরদিন গেছে নাজমুস সাকিবের কাছে। এরপর বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে। কোথায় চক্রান্ত হয়েছে, এটা কী আর ব্যাখ্যা করার দরকার আছে? আসলে তারা চেয়েছিল আমার সম্মানহানি করতে, সেটা তারা করে ফেলছে।
আপনার দৃষ্টিতে এটা অপরাধ হলে কী ব্যবস্থা নেবেন? জবাবে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, আমি চাই না আমার তরফ থেকে কোনো বাড়তি কথা, দাম্ভিকতা কিংবা বাড়াবাড়ি হোক। আমি লফুল (আইনগত) পয়েন্টে আছি। আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেব কিনা সেটা একা সিদ্ধান্ত নেব না। আমারও মুরব্বি আছে। আমার পরিবারের সদস্য, বন্ধু, শুভানুধ্যায়ী মুরব্বি ও আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব। প্রয়োজন হলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেব।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন
আমাদের সময়ের এক প্রশ্নের জবাবে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, আমি ফরিদপুর-১ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারি। আমাকে যদি এলিমিনিট (বাদ দেওয়া) করা যায়, তাহলে অন্যদের তো কপাল খুলে যায়। আমার সঙ্গে যেহেতু দলীয় প্রধানের (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) পরিচয় আছে, আমি যদি মনোনয়ন পাই তাহলে অন্যরা তো চান্স পাবে না। তাদের মধ্যেও কেউ কেউ এই ঘটনায় জড়িত আছে বলে আমার মনে হয়।