মতিউরের পৃষ্ঠপোষকরাও আলোচনায়

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৫ জুন ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
মতিউরের পৃষ্ঠপোষকরাও আলোচনায়

ছেলের ছাগলকাণ্ডে আলোচনায় এসে পদ হারিয়ে আত্মগোপনে চলে যাওয়া রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানের পৃষ্ঠপোষকদের নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনের নামও সামনে এসেছে। এদের মধ্যে একজন ছিলেন ক্ষমতাধর সচিব, যিনি গত মাসেই অবসরে গেছেন। আরেক জন বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম শীর্ষ পদে আছেন। এই দুজনের বদৌলতে মতিউর রহমান সোনালী ব্যাংকের পর্ষদে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান বলে গুঞ্জন রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অন্যতম শীর্ষ এক কর্মকর্তার নামও রয়েছে আলোচনায়। এর বাইরে প্রশ্রয়দাতা হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক এক চেয়ারম্যানের নামও শোনা যাচ্ছে। তার সময়কালেই মতিউরের উত্থান শুরু হয়। অভিযোগ আছে, রাজস্ব কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার সুবাদে পুঁজিবাজারসহ বিভিন্ন ব্যবসায় সুযোগ সুবিধা নিয়ে মতিউর দেশ-বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন।

বিসিএস (শুল্ক ও আবগারি) ক্যাডারের কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে গত রবিবার তার বর্তমান পদ থেকে সরিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে। গতকাল তাকে সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদ থেকে অপসারণ করা হয়। এ ছাড়া প্রথম স্ত্রী ও এক ছেলেসহ মতিউরের বিরুদ্ধে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আসে। ছেলের ছাগলকাণ্ডে বাবার পরিচয় নিশ্চিতের পর থেকেই আত্মগোপনে আছেন মতিউর। সবশেষ গুঞ্জন রয়েছে আখাউড়া স্থলবন্দর এলাকা দিয়ে গোপনে দেশ ছেড়েছেন তিনি।

মতিউরের এমন উত্থানের কাহিনী সামনে আসার পর এখন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, ব্যাংকপাড়া, শেয়ারবাজারসহ সর্বত্র তার উত্থানের পেছনে পৃষ্ঠপোষকদের নাম নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তারা বলছেন, মতিউর রহমানের উত্থান মূলত ২০০৯ সালে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার থাকাকালে। পরে গুরুত্বপূর্ণ একাধিক জায়গায় পদায়ন হয়েছে তার। এনবিআরের সাবেক এক চেয়ারম্যানের আস্থাভাজন হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) ভ্যাটের কমিশনার হিসেবে। সেই সময় বিভিন্ন কোম্পানিতে ভ্যাট ডিমান্ড করে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে মতিউরের বিরুদ্ধে। এরপর ২০১৫ সালে পদোন্নতি পেয়ে কমিশনার হন। ২০২১ সালের ১২ আগস্ট তাকে কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালে সদস্য (টেকনিক্যাল) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

এর আগে ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তিন বছরের জন্য সোনালী ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে মতিউর রহমানকে নিয়োগ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। তৎকালীন অর্থসচিবের সঙ্গে সখ্যতার সুযোগে তিনি ওই পদে নিয়োগ পান বলে আলোচনা রয়েছে। তখনকার ওই অর্থসচিব এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম শীর্ষ পদে কর্মরত রয়েছেন। তার সঙ্গে মতিউরের পারিবারিক ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। গুঞ্জন আছে, মতিউরের সঙ্গে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগও রয়েছে ওই কর্মকর্তার। শুধু তাই নয়, সোনালী ব্যাংকের পরিচালক করার পুরস্কার হিসেবে তাকে একটি বাড়ি উপহার দেন মতিউর। এ ছাড়া মতিউরকে যখন সোনালী ব্যাংকের পরিচালক করা হয়, তখন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ছিলেন শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ। মতিউরের উত্থানের পেছনে তার পৃষ্ঠপোষকতাও ছিল বলে গুঞ্জন রয়েছে।

মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে জমা পড়া অভিযোগটি যাচাই করে কমিশন অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই মধ্যে ঢাকা, গাজীপুর, সাভার, নরসিংদী, বরিশালসহ বিভিন্ন জায়গায় মতিউরের নামে বাড়ি, জমি, ফ্ল্যাট, প্লটসহ অন্যান্য স্থাবর সম্পদের খোঁজ মিলেছে। তার দুই স্ত্রীর নামেও বিপুল সম্পত্তি করার তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের নামে এফডিআর এবং শেয়ারবাজারে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগের খবর পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত শেয়ারবাজারে এক ডজনের বেশি কোম্পানিতে মতিউর রহমান, তার ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণব, মেয়ে ফারজানা রহমান ইপ্সিতা, প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ, দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিবলী, বোন হাওয়া নূর বেগম, ভাই এম এ কাইয়ূম হাওলাদার, নূরুল হুদাসহ তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট একাধিক প্রতিষ্ঠানের প্লেসমেন্ট বাণিজ্যের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর বাইরে গ্রামের বাড়ি বরিশালের মুলাদী উপজেলার কাজীরচর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামেও গড়েছেন বিপুল সম্পদ।