বেনজীরের পর আলোচনায় এবার আছাদুজ্জামান মিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক
২০ জুন ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
বেনজীরের পর আলোচনায় এবার আছাদুজ্জামান মিয়া

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। ইতোমধ্যে তিন দফায় তার বিপুল সম্পদ জব্দ করা হয়েছে; অবরুদ্ধ করা হয়েছে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। বেনজীরের দুর্নীতি নিয়ে চলমান আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার দুর্নীতি তথা অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। এ নিয়ে শুরু হয়েছে জোর আলোচনা, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তিনি সস্ত্রীক বিদেশে পালিয়ে গেছেন বলেও গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

অবশ্য অবৈধ সম্পদের যেসব তথ্য গণমাধ্যমে এসেছে, সেসব ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন’ দাবি করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, তার সব

সম্পদ ‘বৈধ আয়ে উপার্জিত অর্থ’ দিয়ে কেনা।

সস্ত্রীক দেশ ছেড়ে আমেরিকায় পাড়ি জমানোর তথ্যও সঠিক নয় মন্তব্য করে ডিএমপির এই সাবেক কমিশনার বলেছেন, চিকিৎসার জন্য সপরিবারে সিঙ্গাপুরে গেছেন তিনি।

আছাদুজ্জামান মিয়া গত মঙ্গলবার বলেন, দু-একদিনের মধ্যে আমি চিকিৎসা শেষ করে দেশে আসব। আমি যখন চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে এলাম, তার কয়েকদিন পর পরিকল্পিতভাবে এসব খবর প্রকাশ করা হয়েছে।

আছাদুজ্জামান মিয়ার অবৈধ সম্পদ অর্জন নিয়ে গত ১৬ জুন ‘মিয়া সাহেবের যত সম্পদ’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে তুলে ধরা প্রতিবেদনে বলা হয়Ñ বাড়ির পর বাড়ি, জমি ও ফ্ল্যাটের সারি। কী নেই সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান মিয়ার। রীতিমতো গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। তবে শুধু নিজের নামে নয়। স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ের নামেও বিপুল সম্পত্তি গড়েছেন ডিএমপির সাবেক এই কমিশনার।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, পুলিশের সাবেক এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার স্ত্রীর নামে ঢাকায় একটি বাড়ি ও দুটি ফ্ল্যাট এবং মেয়ের নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামে ৬৭ শতক জমি রয়েছে। এই তিন জেলায় তার পরিবারের সদস্যদের নামে রয়েছে আরও ১৬৬ শতক জমি।

আছাদুজ্জামান মিয়া অবৈধ উপায়ে এসব সম্পদের মালিক হয়েছেন কিনা, তা খতিয়ে দেখতে দুদক ‘তদন্তে নামতে পারে’ বলেও প্রতিবেদন প্রকাশ করে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম।

আছাদুজ্জামান মিয়া ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ডিএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তাকে জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত সেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেয় সরকার। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়।

দুর্নীতি ও দেশত্যাগের খবরের বিষয়ে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, এসব সংবাদ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও সরকারকে বিতর্কিত করতে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমার সব সম্পদ বৈধ আয়ে উপার্জিত অর্থ দিয়ে কেনা। বাবার একমাত্র সন্তান হিসেবে পারিবারিকভাবে বেশকিছু সম্পদও পেয়েছি। সেসবের কিছু বিক্রি করে নতুন করে সম্পদ কেনা হয়েছে। সেসব আয়কর নথিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে।

আছাদুজ্জামান মিয়া বলছেন, তার ছেলে একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে বড় পদে আছেন এবং ছেলের বউ একটি বিদেশি ব্যাংকে চাকরি করেন। তার মেয়ে ও জামাতা চিকিৎসক। তাদেরও সম্পদ কেনার যোগ্যতা আছে। ছেলে-মেয়ের অর্থ দিয়ে কেনা সম্পত্তিও পত্রিকার প্রতিবেদনে তার নামে প্রচার করা হয়েছে। তার ভাষ্য, অতীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, তাদের বিতর্কিত করতে একটি চক্র কাজ করছে। ওই চক্র এরই মধ্যে অনেককে নিয়ে রিপোর্ট করেছে।

আছাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকেও সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। গত মঙ্গলবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, সরকার ‘অন্ধকারে ঢিল ছুড়তে’ চায় না। আছাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত করেনি। তার ব্যাপারে কী করে জানব? সরকারের নজরে আসার আগে সরকার কীভাবে ব্যবস্থা নেবে?

দুর্নীতি দমন কমিশন আছাদুজ্জামান মিয়ার বিষয়ে তদন্তের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে কিনা জানতে চাইলে দুদক কমিশনার জহুরুল হক বলেন, এ ব্যাপারে তার কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছেন, আছাদুজ্জামান মিয়ার সম্পদের বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন তিনি দেখেছেন। তার মতে, এসব অভিযোগ কতটুকু সত্য, দুদকের উচিত তা যাচাই-বাছাই করা। কেউ অভিযোগ না করলেও দুদক স্বউদ্যোগে এ বিষয়ে তদন্ত করার ক্ষমতা রাখে বলে জানান এ আইনজীবী।

সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সম্পদ অনুসন্ধান করছে দুদক। এর মধ্যেই গত ৪ মে তিনি সপরিবারে দেশ ছাড়েন। পরিবারসহ তাকে তলবও করেছে দুদক। বেনজীর আহমেদের পরিবারের সদস্যদের নামে ঢাকায় মোট ১২টি ফ্ল্যাট, দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬৯৭ বিঘা জমি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এর বাইরে আদালতের নির্দেশে ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ৩৩টি ব্যাংক হিসাব, একটি বেসরকারি টেলিভিশনসহ দুটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার এবং ৩টি বিও হিসাবও (শেয়ার ব্যবসার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) অবরুদ্ধ করা হয়েছে।