ঈদের ছুটিতে ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তায় ১৭ পদক্ষেপ

সাজ্জাদ মাহমুদ খান
১৬ জুন ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
ঈদের ছুটিতে ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তায় ১৭ পদক্ষেপ

প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়ি ফিরছে মানুষ। রাজধানীতে জীবিকার তাগিদে বসবাসকারীদের বড় অংশ ইতোমধ্যে গ্রামে ফিরে গেছেন। ঈদ আনন্দের মাঝেও তাদের উদ্বেগে থাকতে হচ্ছে ফাঁকা ঢাকার বাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিয়ে। এদিকে রাজধানীর স্বর্ণের দোকানগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) চিঠি দিয়েছে বাজুস।

পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- ঈদের ছুটিতে ঢাকাকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হচ্ছে। পুলিশ, র‌্যাব ছাড়াও আনসার সদস্যরা মাঠে থাকবেন। ফাঁকা ঢাকায় নিরাপত্তায় ১৭টি পদক্ষেপ নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশ (ডিএমপি)। এর মধ্যে রয়েছেÑ ডিএমপির প্রতিটি থানা থেকে প্রতিদিন ৩টি মোটরসাইকেল মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক টহল দেবে। মার্কেট, স্বর্ণের দোকান ও ব্যাংকের নিরাপত্তায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে ডিএমপির সংশ্লিষ্ট বিভাগের ডিসি ও ওসিরা নিরাপত্তা পরিকল্পনা করেছেন। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, এবার ঈদকেন্দ্রিক নিñিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এজন্য পুলিশ সদস্যদের ছুটিও সীমিত করা হয়েছে।

এ ছাড়া র‌্যাব দেশের অপরাধপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রস্তুত করেছে। সারাদেশে র‌্যাবের অন্তত ৮ হাজার সদস্য ঈদকেন্দ্রিক নিরাপত্তায় মাঠে থাকবে। বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অর্ধলক্ষাধিক সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তায় মাঠে থাকবেন।

ডিএমপি সূত্র জানিয়েছে, ডিএমপির অপারেশন্স বিভাগ প্রণীত এ ছকে প্রাধান্য পাচ্ছে প্রতি থানায় টহলে মোটরসাইকেল মোবাইল টিম স্বর্ণের দোকান মার্কেট, ব্যাংকে বিশেষ ব্যবস্থা প্রবেশপথে ২৪ ঘণ্টার চেকপোস্ট ঈদগাহ মাঠ, বিপণিবিতান, মার্কেট, ব্যাংক এবং এটিএম বুথ। এ ছাড়া গোয়েন্দা বিভাগের পক্ষ থেকেও নিরাপত্তা ছক তৈরি করা হয়েছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের দেহ ও অন্যান্য বস্তু তল্লাশি করবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ঈদগাহ প্রাঙ্গণ এবং আশপাশের এলাকায় যাতে ভিক্ষুক বা হকার ঢুকতে না পারে, সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে পুলিশ কন্ট্রোলরুম বা হাইকোর্ট অভ্যন্তরে স্থাপিত সাব-কন্ট্রোলরুমে যোগাযোগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঈদের দিন থেকে বিপণিবিতান, স্বর্ণের দোকান, ব্যাংক এবং এটিএম বুথের নিরাপত্তা জোরদার করা হবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনায় বলা হয়- কোরবানির পশু পরিবহন ও পশুর হাটের নিরাপত্তা, ফিটনেসবিহীন গাড়িতে কোরবানির পশু পরিবহন করবেন না। অনলাইনে কোরবানির পশু কেনায় সতর্ক থাকুন। কোরবানির পশুবাহী পরিবহন/নৌযানের সামনে পশুর গন্তব্যস্থান/পশুর হাটের নাম লিখে ব্যানার টানিয়ে রাখুন। ট্রাক, লঞ্চ বা ট্রলারে অতিরিক্ত পশু পরিবহন করবেন না। কোরবানির পশু চুরি/ডাকাতি রোধে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে নৈশকালীন প্রহরার ব্যবস্থা রাখুন। ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করুন। বড় আর্থিক লেনদেন বা অর্থ বহনের ক্ষেত্রে পুলিশের সহায়তা নিন। কোনো নোট জাল সন্দেহ হলে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে জানান। কাউকে অজ্ঞানপার্টি, প্রতারকচক্র, চাঁদাবাজ বা অতিরিক্ত হাসিল আদায়কারী সন্দেহ হলে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে খবর দিন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে বাসের ছাদে কিংবা ট্রাক, পিকআপ ও অন্যান্য পণ্যবাহী যানবাহনে ভ্রমণ করবেন না।

ডিএমপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ছুটির সময়ে ব্যাংক এবং স্বর্ণের দোকানের ছাদ ছিদ্র করে বা সিঁধ কেটে চুরি-ডাকাতির আশঙ্কা থাকে। এই চুরি-ডাকাতি প্রতিরোধে নিরাপত্তাকর্মীকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত, মার্কেট, ব্যাংক, স্বর্ণের দোকান এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় প্রাইভেট সিকিউরিটিকে গুরুত্ব দিতে হবে। রাতে মোবাইল প্যাট্রোলগুলোকে হুটার বাজিয়ে টহল দিতে হবে। চেকপোস্টে সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। ছুটিকালে বেপরোয়া চলাচলকারী যানবাহনের চালকদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে রাজধানীর প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে ২৪ ঘণ্টা চেকপোস্ট বসিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

ঈদঘিরে ফাঁকা ঢাকার সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, পরিবারের প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে প্রতিবছর ঢাকা থেকে প্রায় এক কোটি মানুষ গ্রামের বাড়িতে যায়। একই সময়ে বাসাবাড়ি, রাস্তাঘাট, অফিস-আদালত ফাঁকা থাকে। প্রতিবছরই পুলিশ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিয়ে ঢাকাকে নিরাপদ রাখতে সক্ষম হয়। এবারও সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এবারও চেকপোস্ট, টহল, ফুট প্যাট্রোল ও গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে। একই সঙ্গে প্রতিটি বাসাবাড়িতে এক বা দুজন প্রহরী থাকেন, তারাও আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করবেন।

ডিএমপির একাধিক থানার ওসি বলেন, ঈদের ছুটিতে ফাঁকা ঢাকায় টানা পার্টির দৌরাত্ম্য বাড়ে। এটি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে পুলিশ। এ ছাড়া যারা ঢাকার বাইরে গেছেন, তারা যাতে নিরাপদে ঢাকায় ফিরতে পারেন, সে বিষয়টিকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।

অন্যদিকে আইজিপিকে পাঠানো চিঠিতে বাজুস সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, ঈদের লম্বা ছুটির কারণে বাংলাদেশের প্রায় সব জুয়েলারি মার্কেট ও দোকান বন্ধ থাকে। এ সময়ে চুরি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। জুয়েলারি দোকানের বিশেষ নিরাপত্তার লক্ষ্যে জুয়েলারি মার্কেট ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ও অধিকতর নজরদারির ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করছি।