কিছু স্থানে জট থাকলেও নির্বিঘ্ন ঈদযাত্রা
ঈদে বাড়ি ফেরা
রাত পেরোলেই পবিত্র ঈদুল আজহা তথা কোরবানির ঈদ। বাড়ি ফিরে প্রিয়জনদের সঙ্গে সম্মিলনই শুধু নয়, কিনতে হবে পশুও। আর যাদের পশু কেনা হয়ে গেছে, তাদের তীব্র আকাক্সক্ষা বাড়ি ফিরে একনজর তা দেখার। স্বজনের সান্নিধ্য ও কোরবানির পশুÑ এ দুই আকর্ষণে শহরের মানুষজন ছুটে চলছেন বাড়ির পানে। সরকারি চাকরিজীবীরা আগেই রাজধানী ছেড়েছেন। কিন্তু ব্যবসায়ী ও বেসরকারি কর্মজীবীদের বড় অংশকেই গতকাল ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে। এদিন তাই বাসটার্মিনাল, রেলস্টেশন ও লঞ্চঘাটে ছিল ঘরমুখো যাত্রীর স্রোত। বিকল্প বাহনেও বাড়ি ফিরছেন কেউ কেউ। আগের দিনের মতো গতকালও ছিল গাড়ির চাপ। তবে কিছু স্পটে জট সত্ত্বেও এবারের ঈদযাত্রাকে অনেকটা নির্বিঘ্নই বলা যায়।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে মৌচাকের তেলিরচালা থেকে কালিয়াকৈর বাইপাস এবং কালিয়াকৈর-নবীনগর সড়কের জিরানী থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত গতকাল দুপুরের পর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কে থেমে থেমে যানজট সৃষ্টি হয়। যানবাহনের চাপের পাশাপাশি উল্টোপথে অটোরিকশা চলাচল এবং সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে শাখা সড়ক থেকে মহাসড়কে যাত্রী বোঝাই বাস ওঠার কারণেই মূলত এ যানজট। ২০ মিনিটের সড়ক পাড়ি দিতে তাই সময় লেগেছে এক ঘণ্টারও বেশি।
গতকাল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে কোথাও যানজট ছিল না। যার কারণে স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়ি ফিরছেন মানুষ। তবে মহাসড়কে রয়েছে যানবাহনের চাপ। যান চলাচল নির্বিঘ্নে রাখতে হাইওয়ে পুলিশ ছিল বেশ তৎপর।
ঢাকা থেকে কুমিল্লাগামী যাত্রী কিব?রিয়া জানান, যাত্রাবাড়ী থেকে সকাল ৮টায় বাসে উঠি। এখানে আসতে মাত্র আড়াই ঘণ্টা সময় লেগেছে। পুরো মহাসড়কের কোথাও যানজট নেই। তবে মহাসড়কসংলগ্ন বিভিন্ন বাজারে যানবাহনের কিছুটা ধীরগতি রয়েছে।
ঢাকা থেকে সিলেটের পথেও যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক। তবে সাভার এলাকায় যানবাহনের সংকট দেখা গেছে। সিরাজগঞ্জের পথে ছিল স্বস্তি।
ব্যক্তিগত গাড়িতে ঢাকার মিরপুর থেকে ৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ পৌঁছেছেন মামুন। তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে আসতে ৩ ঘণ্টা লাগে। সে হিসাবে ঈদে ৪ ঘণ্টা খুব বেশি সময় নয়। রাস্তায় তেমন যানজট ছিল না। তবে কিছু জায়গায় ধীরগতি ছিল।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও আরিচা ঘাটে ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। তবে যানবাহনে তেমন জট সৃষ্টি হয়নি। গতকাল সকাল থেকেই এ দুই ঘাটে পারের অপেক্ষায় শত শত যাত্রী আসে। তবে কোনো প্রকার ভোগান্তি ছাড়াই ফেরি-লঞ্চে এসব যাত্রী পার হয়ে যায়।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল বলেন, কোথাও কোনো যানজট হচ্ছে না বলে লাভ নেই। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়নি। আশা করি, সামনের দিনগুলো ভালো যাবে।
গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ধীরগতির পশুবাহী গাড়ি, সড়কের পাশে পশুর হাট একটা সমস্যা। যানজটের জন্য রাস্তা কোনো সমস্যা নয়। এবার সড়কে অনেক বেশি যানবাহন। যানবাহনের ভিড়টা অনেক বেশি। আজ ও আগামীকাল গার্মেন্টস ছুটি হলে কোনো কোনো জায়গায় চাপ বাড়তে পারে।
শেষ মুহূর্তে লঞ্চে ভিড়
গত কয়েক দিনের তুলনায় গতকাল লঞ্চে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। সকাল থেকেই রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাটে ছিল জনস্রোত। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড়ের মাত্রাও বাড়তে থাকে। দেশের দক্ষিণের পথে রওনা দিতে নারায়ণগঞ্জ, সাভার ও গাজীপুর থেকেও অনেকে সদরঘাটে ভিড় করেন।
যাত্রীর চাপ সামাল দিতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) দায়িত্বরতদের তৎপর দেখা গেছে। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ৮০টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। আর ৯৫টি লঞ্চ ঢাকায় এসেছে।
এদিকে গতকাল বিকাল ৩টা ২০ মিনিট থেকে ঢাকা নদীবন্দরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা শুরু করে বিআইডব্লিউটিএ। এ সময় এমভি প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চটির সিঁড়িতে রেলিং না দেওয়ায় ৩ হাজার টাকা, এমভি আল শাফিন সাত্তার খান ও এমভি বালিয়াকে সিঁড়ি দুর্বল ও রেলিং না দেওয়ায় ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।
ঢাকা থেকে ট্রেনের যাত্রী দেড় লাখ
গতকাল সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দুটি বিশেষ ট্রেনসহ মোট ১৩৮টি ট্রেন ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। এসব ট্রেনে যাত্রী ছিল প্রায় দেড় লাখ। শেষ দিনে শৃঙ্খলা টিকিয়ে রাখা যায়নি কমলাপুর ও বিমানবন্দর স্টেশনে। যাত্রীর চাপে নিয়ন্ত্রণ বিঘ্নিত হয়।
ঢাকা (কমলাপুর) রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, গত ১২ জুন থেকে এবারের পবিত্র ঈদুল আজহার যাত্রা শুরু হয়েছে। গত তিন দিনে ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের গন্তব্যে যেসব ট্রেন আমরা পরিচালনা করেছি, সেসব ট্রেনের যাত্রীরা তাদের নিজ নিজ গন্তব্যে নিরাপদে এবং ভোগান্তিহীনভাবে পৌঁছাতে পেরেছেন।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন
পদ্মায় ৫ কোটি, বঙ্গবন্ধুতে ৪ কোটি টাকার টোল আদায়
গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত এ সেতু দিয়ে ৪৪ হাজার ৩৩টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় করা হয়েছে ৪ কোটি ৮০ লাখ ৩০ হাজার ১০০ টাকা। এর আগে গত ঈদুল ফিতরে একদিনে টোল আদায় করা হয়েছিল ৪ কোটি ৮৯ লাখ ৯৪ হাজার ৭০০ টাকা। সে হিসাবে গত ২৪ ঘণ্টায় আদায় করা টোল পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এযাবৎকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বলছে সেতু বিভাগ।
আর গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ৫৩ হাজার ৭০৮টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এ থেকে টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ ৬৩ হাজার ৪০০ টাকা।