শেষ মুহূর্তে চাঙ্গা পশুর হাট

লাখের নিচে মিলছে না গরু

রেজাউল রেজা
১৬ জুন ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
শেষ মুহূর্তে চাঙ্গা পশুর হাট

দেরিতে হলেও রাজধানীর কোরবানির হাটগুলোতে বেচাবিক্রি বেড়েছে। গতকাল সকাল থেকেই হাটে ক্রেতারা আসতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে বিক্রিও বেড়ে যায়। এতে ব্যাপারীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন, তবে দাম বেশি চাওয়া হচ্ছে বলে জানান বেশিরভাগ ক্রেতা। গত ঈদে যে গরুর দাম ছিল ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা, এবার সেই মাপের গরুর দাম ১ লাখ ৪০Ñ৫০ হাজার টাকা বলে জানা গেছে।

এবার পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় স্থায়ী দুটিসহ মোট ২০টি পশুর হাট বসেছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে হাটগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হলেও উল্লেখযোগ্য ক্রেতা না থাকায় ভালো সময় কাটেনি ব্যবসায়ীদের। সাপ্তাহিক ছুটির দিন গত শুক্রবার হাটগুলোতে ভিড় দেখা গেছে। তবে বিক্রি সেভাবে বাড়েনি। গতকাল ছিল ভিন্ন চিত্র- দিনভর হাটগুলো থেকে পশু কিনে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে অসংখ্য ক্রেতাকে। ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত হাট থাকলেও এখন ক্রেতা-বিক্রেতাদের কেউই ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। হাট ঘুরে দর-দামে মিল করে কিনে নিচ্ছেন পছন্দের পশুটি।

ব্যবসায়ীরা জানান, গতবারের চেয়ে এবার দাম বাড়তি থাকায় বিক্রি কম। শুরুতে বেচাবিক্রি ছাড়াই দিন কেটেছে। ঈদ কাছে চলে আসায় এখন বিক্রি অনেকখানি বেড়েছে। অনেক বিক্রেতা হাতের গরু দ্রুত বিক্রি করে বাড়ি ফিরতে এখন দামেও একটু ছাড় দিচ্ছেন।

গতকাল রাজধানীর কমলাপুর স্টেডিয়ামসংলগ্ন কোরবানির হাট থেকে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকায় গরু কিনে বাড়ি ফিরছিলেন বাসাবোর বাসিন্দা মো. খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, এবার দাম বেশি হবে জানা ছিল। তাই বাজেট বেশি রেখেছিলাম। কিন্তু হাট ঘুরে দেখি দাম খুব বেশি। দেড় লাখ টাকার মধ্যে কিনতে চাইলেও শেষমেশ পছন্দের গরু কিনতে ১৫ হাজার টাকা বাড়তি খরচ করতে হয়েছে। তারপরও খুশি, সময়মতো কেনা গেছে।

এ হাট থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকায় গরু কিনে তিলপাপাড়ার বাসিন্দা মো. ওসমান বলেন, গতবার এ রকম গরু ১ লাখ ২০ হাজারে কিনেছি। এবার দাম বেশি। দেড় লাখ টাকা দাম চেয়ে ১ লাখ ৪০ পর্যন্ত নেমেছেন বিক্রেতা। হাতে বেশি সময় নেই। তা ছাড়া গরুটাও অনেক পছন্দ হয়েছে ছেলেদের। তাই বাজেট একটু বাড়িয়ে কিনে ফেললাম।

গরুটির বিক্রেতা চুয়াডাঙ্গার খামারি মো. আশফাক আলী বলেন, গরু পালতে খরচাপাতি যে হারে বেড়েছে, তাতে কম দামে বিক্রি করার উপায় নেই। দেড় লাখের নিচে এ গরু ছাড়লে লাভ থাকে না। কিন্তু বিক্রি নেই, তাই সামান্য লাভে ছেড়ে দিলাম। তারপরও খুশি যে বিক্রি করতে পেরেছি। এখন হাতের বাকি গরুগুলোর যদি ন্যায্য দাম না পাই, তা হলে বড় লোকসান হয়ে যাবে।

রাজধানীর দনিয়া কলেজসংলগ্ন কোরবানির হাট ঘুরেও দেখা গেছে, ছোট থেকে বড় সব ধরনের গরুই বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ ক্রেতা মাঝারি ও ছোট গরুর খোঁজ করছেন। বড় গরুর তুলনায় এসব গরুর দাম এবার বেশি বলে অভিযোগ করেন ক্রেতারা।

এমনই একজন ক্রেতা সানারপাড় এলাকার বাসিন্দা মো. সাফিন আহমেদ বলেন, ৮০ হাজার টাকা বাজেট নিয়ে দুই দিন ধরে হাটে ঘুরছি। কিন্তু মাননসই গরু পাচ্ছি না। গতবার এ দামে যেসব গরু বিক্রি হয়েছে, এবার তা এক লাখের ওপর চাচ্ছে। বিক্রেতারা কিছুতেই দাম কমাচ্ছেন না।

এ হাট থেকে ৭৬ হাজার টাকায় গরু কিনেছেন শনিরআখড়া এলাকার বাসিন্দা কাজী সাফায়াত হোসেন। তিনি বলেন, ৭০ হাজার টাকার মধ্যে গরু মেলাতে পারিনি। যেটাই পছন্দ হয় সেটাই লাখ টাকার ওপর। বাধ্য হয়ে ছোট গরু কিনলাম। তাও বাজেটের চেয়ে ৬ হাজার টাকা বেশি খরচ করে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে এবার গবাদিপশুর সম্ভাব্য চাহিদা ১ কোটি ৭ লাখ ২ হাজার ৩৯৪টি। যার বিপরীতে দেশে কোরবানিযোগ্য পশু আছে ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি। যা গত বছরের তুলনায় ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৩৪টি বেশি। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবার চাহিদার চেয়ে ২২ লাখ ৭৭ হাজার ৯৭৩টি অতিরিক্ত গবাদিপশু রয়েছে। উদ্বৃত্ত পশু থাকা সত্ত্বেও ক্রেতাদের বেশি দামে পশু কিনতে হচ্ছে।

বিক্রেতারা বলছেন, গো-খাদ্যের অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধি ও পরিবহন খরচসহ অন্যান্য ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এবার পশুর দাম গতবারের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি। তবে শেষ মুহূর্তের বাজারে দামে কিছুটা ছাড় দিচ্ছেন বিক্রেতারা।