সিন্ডিকেটে কোরবানির চামড়া বাজারে অস্থিরতার শঙ্কা
কোরবানির পশুর চামড়া বাজার নিয়ে অস্থিরতার শঙ্কা কাটছে না। স্থানীয় প্রভাবশালী, চামড়া ব্যবসায়ী ও লবণ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটে চামড়ার বাজার অস্থির হয়ে ওঠার আশঙ্কা করছে সরকারি সংস্থাগুলো। চামড়া প্রাথমিকভাবে প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রধান উপাদান লবণ। আর বিসিক লবণের দাম নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে তার মূল্য নিয়ন্ত্রণ লবণ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হাতে। সরকারি সংস্থাগুলো ব্যবসায়ীদের কাছে অসহায় হওয়াতেই প্রতিবছর চামড়ার বাজারের অস্থিরতা তৈরি হয়। সিন্ডিকেটের কারণে কোরবানির পশুর চামড়ার ওপর নির্ভরশীল অনেক দুস্থ, এতিমখানা বিপাকে পড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি বছর দেশে যে পরিমাণ চামড়া উৎপাদন হয়, তার অর্ধেকের বেশি উৎপাদন হয় ঈদুল আজহায়। আর এই কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে চামড়ার দাম কমিয়ে দিতে কয়েক বছর ধরে তৎপর বিভিন্ন স্তরের। ফলে চামড়ার প্রকৃত দাম পাওয়া যায় না। সিন্ডিকেটের কারণে অনেক চামড়া পচে নষ্টও হয়ে যায়।
জানা গেছে, চলতি বছর ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর ঢাকার বাইরে নির্ধারণ করা হয় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা।
র?্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম বলেন, চামড়া ব্যবসা নিয়ে কোনো সিন্ডিকেটকে বরদাস্ত করব না। চামড়ার ব্যবসা নিয়ে কোনো এলাকায় গোলমালের সৃষ্টি না হয়, সেজন্য গোয়েন্দা কার্যক্রম চলবে।
গত ১৪ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ঈদুল আজহার কাঁচা চামড়ার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সভায় জানানো হয়, কোরবানির সময় উৎপাদিত প্রায় এক কোটি পশুর চামড়া ট্যানারিগুলো প্রক্রিয়াজাত করতে পারে না। এ সময় উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ কাঁচা চামড়া যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা বেশ চ্যালেঞ্জিং। চাহিদার তুলনায় চামড়ার উৎপাদন বেশি হওয়ায় বাজার স্থিতিশীল রাখায়ও বেশ চ্যালেঞ্জ।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
সভায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি বলেন, যথাযথভাবে চামড়া ছাড়ানোসহ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লবণ লাগানো নিশ্চিতে তারা কাজ করবে। পাশাপাশি সারাদেশের এতিমখানাগুলোতে বিনামূল্যে লবণ সরবরাহ করা হবে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ও ব্যবসায়ীদের সহজ শর্তে ঋণের বিষয়েও সভায় সিদ্ধান্ত হয়।
মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি জানান, সারাদেশে ৩৬ হাজার কসাইকে একদিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে আরও কসাইয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যাপারে বলা হয়।
বিসিকের প্রতিনিধি বলেন, চলতি বছর দেশে সর্বোচ্চ পরিমাণে লবণ উৎপাদন হয়। চামড়ায় ব্যবহৃত অপরিশোধিত লবণের দাম নির্ধারণ করা হয় ১৭ টাকা থেকে সাড়ে ১৭ টাকা। চাহিদামতো এক লাখ মেট্রিক টন লবণ সরবরাহ করা হবে। তবে বিসিক মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও মজুদদাররা লবণের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ঈদের পর সক্ষমতার চেয়ে ট্যানারিগুলো বেশি চামড়া কেনে। গত বছর প্রায় ৩০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়। ট্যানারিগুলো সক্ষমতা অনুযায়ী চামড়া কিনতে পারলে, এ সমস্যার সমাধান হতে পারে। এ ছাড়া গতবার ঈদের পরের সাত দিন ঢাকা থেকে কোনো চামড়া বাইরে যায়নি এবং ঢাকাতেও কোনো চামড়া ঢোকেনি। এই ব্যবস্থায় সফলতা পাওয়া গেছে। তবে গতবার বিদ্যুতের ভোল্টেজ ওঠানামার ফলে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে সমস্যা তৈরি হয়েছিল। চলতি বছর তিনি তিন মাস নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের অনুরোধ জানান।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২৩ সালেও ৬১ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি লবণ উৎপাদন হয়েছিল। তবে বাজারে তার প্রভাব ছিল না। কোরবানির আগে লবণের দাম কমার বদলে, উল্টো কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা বাড়ে। এজন্য সিন্ডিকেটকে দায়ী করেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্য দাম নিশ্চিতে বাধা লবণের বাড়তি দাম। এ জন্য লবণ সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, লবণের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা ও চামড়ার সঠিক মূল্য নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
চামড়া পাচার রোধ ও সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার হুশিয়ারি দিয়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কাঁচা চামড়ার দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হলে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। লবণের সিন্ডিকেট ও অধিক মূল্যে বিক্রির বিষয়গুলোও তারা মনিটরিং করবে। সীমান্ত দিয়ে চামড়া পাচার রোধে বিজিবির সঙ্গে একাধিক সংস্থা কাজ করবে।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম