বৃষ্টি নিয়ে চিন্তায় পশু ব্যবসায়ীরা

কোরবানির হাট

রেজাউল রেজা
১৫ জুন ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
বৃষ্টি নিয়ে চিন্তায় পশু ব্যবসায়ীরা

কোরবানির ঈদ ঘিরে রাজধানীর পশুর হাটগুলো জমে ওঠার মধ্যেই বাগড়া দিয়েছে বৃষ্টি। গত বৃহস্পতিবার বিকালের হঠাৎ বৃষ্টি কোরবানির পশু বিক্রিতে প্রভাব ফেলেছে। গতকাল শুক্রবার বিকালেও রাজধানীর আকাশ মেঘলাসহ কোথাও কোথাও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে- আগামী তিন দিন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব বিভাগে বজ্রসহ বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বৃষ্টি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন হাটের পশু ব্যবসায়ীরা।

পশু বিক্রেতারা বলছেন, হাতে আর সময়ও তেমন নেই। অন্যান্য বছর এমন সময়ে হাটে মানুষের ঢল থাকে। এবার হাটে যথেষ্ট পশু থাকলেও বেচাবিক্রি কম। তারা বলছেন,

এবার বাড়তি দামের কারণে এমনিতেই বেচাবিক্রি কম। এর মধ্যে বৃষ্টি দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে। তারা বলেন, হাটের জন্য ঝড়বৃষ্টি মোটেই সুখকর নয়। কারণ বৃষ্টি হলেই ক্রেতা কমে যায়। পশু নিয়ে হাটে থাকাও মুশকিল হয়ে পড়ে। তা ছাড়া বৃষ্টি হলে পশুর দামও কমার প্রবণতা দেখা দেয়। ফলে লোকসানের আশঙ্কা থাকে।

গতকাল বিকালে আকাশে মেঘ করে হালকা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি দেখে রাজধানীর দনিয়া কলেজসংলগ্ন কোরবানির হাটের গরু বিক্রেতা মো. আজহার আলী বলেন, ‘ওই যে আবার মেঘ করে বৃষ্টি শুরু হইছে। কালকে হইছে তাতে হয় নাই, আইজকা আবার। এই বছর কপালে যে কী আছে?’ কুষ্টিয়ার এ ব্যাপারী বলেন, ‘এমনিতেই বেচাবিক্রি নাই। ৭ গরুর একটাও বিক্রি করতে পারি নাই। বৃহস্পতিবার বিক্রি করতে পারব ভাবছিলাম। বৃষ্টিতে ব্যবসা মাইর গেল। আজকেও (শুক্রবার) বৃষ্টির ভাব। এভাবে চললে তো ব্যবসায় ধরা খাইয়া যাব।’

আজহার আলীর পাশের এলাকার আরেক ব্যাপারী মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘গতকালের (বৃহস্পতিবার) বৃষ্টিতে বেচাবিক্রি তো হয়ই নাই। উল্টা গরুগুলা নিয়ে বেজায় বিপদে পড়তে হইছে। সঙ্গে ত্রিপল ছিল না। দৌড়াদৌড়ি কইরা পলিথিন কিনা কোনোরকমে ছাউনি দিছি। বৃষ্টিতে সাধের পালা গরু নিয়া মহাবিপদে পড়তে হয়। বৃষ্টির পানি বেশিক্ষণ লাগলে গরু অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।’

এই হাটের আরেক বিক্রেতা চুয়াডাঙ্গার আলম মিয়া আক্ষেপ করে জানান, বড় আশা করে বড় ভাইদের (খামারি) গরুর সঙ্গে ৬টা গরু ঢাকায় এনেছেন। আকারভেদে ১ লাখ ৪০ হাজার থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম চাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার সকালে ১ লাখ ৪৫ হাজারে একটি বিক্রি করতে পারলেও বিকালের পর থেকে ক্রেতা পাননি তিনি।

আলম বলেন, ‘বৃষ্টি মানেই ঝামেলা। ক্রেতা থাকে না, গরুগুলা নিয়ে চিন্তায় থাকতে হয়। আবার ঝামেলা এড়াতে অনেক ব্যাপারী কম দামে গরু ছেড়ে দেয়। এতে বাজারও পইড়া যায়। লোকসানের আশঙ্কা থাকে।’

গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রাজধানীসহ দেশের সব বিভাগে বজ্রসহ বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। সোমবার ঈদের দিনও দেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা রয়েছে।

বৃষ্টিতে বৃহস্পতিবারের ব্যবসায় ব্যাঘাত হয়েছে বলে জানান কমলাপুর স্টেডিয়ামসংলগ্ন কোরবানির হাটের ব্যবসায়ী ঝিনাইদহের তাহের মোল্লা। তাহের বলেন, ‘এই সময়টা হচ্ছে ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ সময়। এমন সময় বৃষ্টি ভাব আমাদের জন্য ভালো নয়। ১২টা গরুর ৩টা বিক্রি করছি। বাকি ৯টা বিক্রি করে বাড়ি ফিরতে পারলেই হয়।’

এ হাটের আরেক বিক্রেতা ঝিনাইদহের মো. নাজমুল হোসেনও বলেন, ‘বৃষ্টি মানেই বিপদ। গরুগুলো নিয়ে দুর্ভোগ, আবার দামও পড়ে যায়। আকাশে মেঘ করলেই চিন্তা বেড়ে যায়। ভালোয় ভালোয় যত তাড়াতাড়ি পারি হাতের ৮টা গরু বিক্রি করে এলাকায় ফেরার অপেক্ষায় আছি। কিন্তু ক্রেতারা এবার ভালো দাম বলছেন না। যা বলছে তাতে আমরা হতাশ।’

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, সারা দেশে এবার গবাদিপশুর সম্ভাব্য চাহিদা ১ কোটি ৭ লাখ ২ হাজার ৩৯৪টি। যার বিপরীতে দেশে কোরবানিযোগ্য পশু আছে ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি। যা গত বছরের তুলনায় ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৩৪টি বেশি। তথ্যমতে, এবার চাহিদার চেয়ে ২২ লাখ ৭৭ হাজার ৯৭৩টি অতিরিক্ত গবাদিপশু রয়েছে।

রাজধানীর হাট ঘুরে দেখা গেছে, উদ্বৃত্ত পশু থাকা সত্ত্বেও এবার দামে স্বস্তি মিলছে না। সব ধরনের পশুর দামই গতবারের তুলনায় বেশি। গতবারের হাটে বিক্রি হওয়া এক লাখ টাকার গরু এবার অন্তত ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা বাড়তি। ছোট গরুর দামও এবার বেশি। ফলে কম বাজেটের ক্রেতারা সাধ্যের মধ্যে পছন্দের কোরবানির পশু কিনতে গিয়ে ভাবনায় পড়েছেন। সাধ্যের মধ্যে পশুর খোঁজে তারা হাট থেকে হাটে ঘুরছেন। অনেকে অপেক্ষায় আছেন দাম কমার। কিন্তু বিক্রেতারাও এবার নাছোড়বান্দা। কিছুতেই দামে ছাড় দিতে চাচ্ছেন না।