এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব বেশি চট্টগ্রামে
চট্টগ্রাম নগরীতে মিলেছে এডিস মশার লার্ভার সবচেয়ে বেশি ঘনত্ব। গত এপ্রিল মাসে বর্ষা-পূর্ববর্তী মাঠপর্যায়ে জরিপ চালিয়ে এমন তথ্য পেয়েছেন কীটতত্ত্ববিদরা। তাদের দাবি, ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বন্দরনগরী। জুলাই ও আগস্টে ছড়াতে পারে আতঙ্ক। বিষয়টি ‘উদ্বেগজনক’ জানিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) কর্তৃপক্ষকে এডিস মশার সম্ভাব্য প্রজননস্থলগুলো চিহ্নিত করে ধ্বংসের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে চসিকের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা এখনই ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি দেখছেন না। তারা বলেছেন, ডেঙ্গু মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি আছে সংস্থাটির। এ ক্ষেত্রে নগরবাসীর সচেতনতার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে চসিক।
চট্টগ্রামে এডিসের ঘনত্ব বেশি জানিয়ে গতকাল কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার আমাদের সময়কে বলেন, বৃষ্টি হওয়ার পর মাঠপর্যায়ে এডিস মশার ঘনত্ব আমরা লক্ষ্য করছি। বেশ কয়েকটি জেলায় কাজ করে আমরা এডিসের ঘনত্ব গতবারের তুলনায় বেশি পেয়েছি। এর মধ্যে চট্টগ্রামে এডিসের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। তিনি বলেন, এপ্রিল মাসে আমাদের একটি টিম চট্টগ্রামে কাজ করেছে। প্রায় ৪ থেকে ৫টি ওয়ার্ড
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
তারা পর্যবেক্ষণ করেছেন। তারা সবচেয়ে বেশি এডিসের ঘনত্ব পেয়েছেন তিনটি জায়গায়। এর মধ্যে জলাবদ্ধতার কারণে আটকে থাকা পানি অন্যতম। এ ছাড়া নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানির সংকটের কারণে বিভিন্ন ড্রাম ও পাত্রে সংগৃহীত পানিতে মিলেছে এডিসের লার্ভা। শেষ স্থানটি হচ্ছে গাছের গর্ত। সেখানেও পাওয়া গেছে লার্ভা। জুলাই ও আগস্ট মাস আশার আগে নগরবাসীসহ সিটি করপোরেশনকে আগাম সচেতন হতে হবে। না হয় গতবারের চেয়ে এবার চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা আরও প্রকট হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেন এ কীটতত্ত্ববিদ।
ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ডের বছর ছিল ২০২৩ সাল। সে বছর ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে যান। তার মধ্যে ২ লাখ ১১ হাজার ১৭১ জনই ভর্তি হন ঢাকার বাইরে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, এ বছরও ঢাকা মহানগরীর বাইরেই ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেশি। জানুয়ারি থেকে গতকাল ১২ মে পর্যন্ত সারাদেশে যে ৩ হাজার ১১৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন, তাদের মধ্যে ঢাকায় ভর্তি হন ১ হাজার ১৩৩ জন এবং ঢাকার বাইরে এ সংখ্যা প্রায় ২ হাজার। ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি রোগী চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে। চট্টগ্রাম বিভাগে গত ৬ মাসে ৮৮১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে নগরীতে আক্রন্ত হয়েছেন ১৬৫ জন। ৬ মাসে নগরীতে মারা গেছেন তিনজন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করতে চসিকের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে মাঝে মধ্যে শুধু ফগার মেশিন দিয়ে ধোঁয়া দিতেই দেখা যায়। নালা নর্দমাসহ অন্যান্য প্রজনন ক্ষেত্রগুলো পরিষ্কার করার জন্য তেমন কোনো উদ্যোগই চোখে পড়ে না। ফলে অপরিচ্ছন্ন নালা-নর্দমা ও বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানিতে এডিস মশার প্রজনন বেড়ে যাচ্ছে।
গবেষকরা বলছেন, এডিস মশার জীবনচক্র অনুযায়ী এপ্রিল-মে মাসের পর থেকে ডিমগুলো লার্ভায় পরিণত হতে থাকে। জুন থেকে ডেঙ্গুর মৌসুম। কারণ এ সময়ে বর্ষাকাল শুরু। তখন বৃষ্টির পানি বিভিন্ন স্থানে জমে থাকে। আর এই প্রাদুর্ভাব চলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তাই এই সময়টাকে ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশার প্রজননকাল ধরে নেওয়া হয়। যদিও মশাবাহিত রোগটি এখন সারা বছরই ভোগাচ্ছে।
জেলা কীটতত্ত্ববিদ এনতেজার ফেরদাওছ আমাদের সময়কে বলেন, অতিবৃষ্টি এডিস মশার ঘনত্বকে কমিয়ে দেয়। আর থেমে থেমে বৃষ্টি এডিস মশার ঘনত্বকে বাড়ায়। ঘূর্ণিঝড় রেমালের সময় ও এর পরবর্তীতে বৃষ্টিপাত কিছুটা শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামে। তবে গতবারের তুলনায় চট্টগ্রামে এবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভালো। আক্রান্তের হারও কম। জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর হচ্ছে ডেঙ্গুর মূল সময়কাল। তখন পরিস্থিতি বলে দিবে ডেঙ্গু কেমন আকার ধারণ করবে। তাই এখন থেকে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
চসিকের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আফরোজা জহুর আমাদের সময়কে বলেন, এখনো পর্যন্ত চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর মহামারী আকার ধারণ করেনি। তবুও আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। ঈদের পর নিয়মিত এডিস মশার সম্ভাব্য প্রজননস্থলগুলো চিহ্নিত করে ধ্বংসের জন্য ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করা হবে।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন