ঘাটতির অর্ধেকের বেশি মিটবে ব্যাংকঋণে

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৭ জুন ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
ঘাটতির অর্ধেকের বেশি মিটবে ব্যাংকঋণে

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ঘাটতি পূরণে ব্যাংকঋণ নির্ভরতা অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে। এবার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এটি প্রস্তাবিত মোট ঘাটতির ৫৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ। অর্থাৎ বাজেট ঘাটতির অর্ধেকেরও বেশি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পূরণের পরিকল্পনা ঠিক করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এতে তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংক খাতে আরও চাপ সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে এবার বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে।

গতকাল জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছে (অনুদানসহ) ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে অনুদান বাদে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নিয়ে অর্থমন্ত্রীকে এই ঘাটতি পূরণ করতে হবে। এবার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ঋণ করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এর মধ্যে ব্যাংকব্যবস্থা থেকেই নেওয়া হবে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের ঘাটতির চেয়ে ৫ হাজার ১০৫ কোটি টাকা বেশি।

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের ব্যাংকঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে- চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকার নিট ঋণ নিয়েছে প্রায় ৭৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা। তবে একই সময়ে আগের নেওয়া ঋণের ১৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে সরকার। এতে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের নেওয়া নিট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এবার ব্যাংকঋণের পুরোটার জোগান দিচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এতে তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংক খাত চাপে রয়েছে। তারপরও নতুন অর্থবছরের জন্য রেকর্ড ব্যাংকঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেওয়া হবে ৭২ হাজার ৬৮২ কোটি। আর স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেওয়া হবে ৬৪ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা।

সঞ্চয়পত্র : এবার সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা আরও কমানো হয়েছে। এর মূল কারণ- চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ধস নেমেছে। আবার আইএমএফও সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ কমানোর শর্ত দিয়েছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে নতুন অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে সঞ্চয়পত্র থেকে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। তবে বিক্রিতে নেতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকায় সংশোধিত বাজেটে সেটি কমিয়ে ৭ হাজার ৩১০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

বৈদেশিক উৎস : নতুন অর্থবছরের বাজেটে বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে। আগামী অর্থবছরে বিদেশি উৎস থেকে নিট ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা আসবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী। এটি চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ১১ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা কম। চলতি অর্থবছরে মূল বাজেটে বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরা হয় ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে বিদেশি ঋণের লক্ষ্য কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় ৭৬ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা।