কঠিন সময়ে চাপের বাজেট

আবু আলী
০৭ জুন ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
কঠিন সময়ে চাপের বাজেট

দুঃসময় পার করছে দেশের অর্থনীতি। ডলার সংকট, বৈদেশিক মুদ্রার চাপ, বারবার টাকার অবমূল্যায়ন- ফলে কমে যাচ্ছে টাকার মান। এ অবস্থায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে পণ্যমূল্য। করোনার ধাক্কায় শুরু হওয়া মন্দায় বিনিয়োগের খরা এখনো চলমান। নতুন কর্মসংস্থানের শ্লথগতি। কমে গেছে ভোক্তার আয়। ক্রমবর্ধমান দায়দেনার পরিস্থিতি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় চোখ রাঙাচ্ছে। দেশের অভ্যন্তর থেকে নেওয়া ঋণ সরকারের দায়দেনা বাড়িয়ে চলেছে, সঙ্গে আছে বিদেশি ঋণও। বাজেটে অর্থের জোগান দিতে সরকারকে আগের চেয়ে বর্তমান সময়ে বেশি ঋণ নিতে হচ্ছে। ফলে বাড়ছে ঋণ পরিশোধের চাপ। অর্থনীতির বাঁকে বাঁকে সংকট বারবার সামনে আসছে; সেসব পাশ কাটিয়ে অর্থনীতিকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টাও খাচ্ছে ধাক্কা। মূল্যস্ফীতিও থাবা বসিয়েছে ভোক্তার বাজারে। সেই বাস্তবতা মেনেই প্রবৃদ্ধির উচ্চাশা কমিয়ে এনে, খরচের হাত সংযত রেখে অর্থনীতিকে টেনে তোলার ছক থাকছে আগামী বাজেটে।

চতুর্থ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকার বাজেটে স্বাভাবিকভাবেই ভোক্তার প্রত্যাশা ছিল, বাজার পরিস্থিতি থেকে মানুষকে কিঞ্চিৎ হলেও উপশম দেবে। বেকারদের প্রত্যাশা ছিল চাকরির বাজারে দীর্ঘ খরা কাটিয়ে নতুন সুখবরের। ঘোষিত বাজেটে সে রকম দিকনির্দেশনা দেখা যায়নি। বরং মূল্যস্ফীতি কমানোর দোহাই দিয়ে আকার ছোট করা হয়েছে। ফলে সরকারি বিনিয়োগ কমবে। কমবে বেসরকারি বিনিয়োগও। কারণ শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানিতে ১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্য খাতেও কর বাড়ানো হয়েছে। এটা নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি আরও এক দফা উসকে দেবে। মূল্যস্ফীতি এক ধরনের ‘কর’। এমনিতেই মূল্যস্ফীতির ‘করে’ মানুষ পিষ্ট হচ্ছে। তার ওপর বাজেটে আরোপ করা হয়েছে করের চাপ। ফলে একদিকে মানুষকে নানাভাবে সরাসরি কর দিতে হবে, অন্যদিকে এর প্রভাবে বেড়ে যাবে পণ্যমূল্য।

গতকাল ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট দিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এটি এ সরকারের প্রথম বাজেট আর অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল হাসান মাহমুদ আলীর প্রথম বাজেট। বাংলাদেশের ৫৩তম বাজেট।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এ বাজেট-প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। লাল ব্রিফকেস হাতে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংসদে প্রবেশ করেন তিনি। তার আগে বিশেষ মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর প্রস্তাবটিতে সই করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। এ সময় অর্থমন্ত্রী ছাড়াও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) সিনিয়র সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুমিন, অর্থ বিভাগের সচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার এবং বঙ্গভবনের সংশ্লিষ্ট সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। বাজেটের স্লোগান ‘টেকসই উন্নয়নের পরিক্রমায় স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা।’

এবারের বাজেটে জনতুষ্টির খুব সীমিত কিছু পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জনভোগান্তি বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়নে করের আওতা বাড়ানো হয়েছে। এর প্রভাবে সব ধরনের পণ্য ও সেবার দাম বাড়বে। ডলারের দাম ও সুদের হারও বাড়বে। এতে শিল্পের ও ব্যবসার খরচ বেড়ে যাবে। সব মিলিয়ে পণ্যমূল্য আরও উসকে দেবে, যা মোকাবিলা করার মতো যথেষ্ট পদক্ষেপ নেই বলে মনে করছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদরা। বিনিয়োগ বাড়িয়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মতো যথেষ্ট পদক্ষেপও নেই প্রস্তাবিত বাজেটে। প্রধান চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার কোনো পথনির্দেশ দেওয়া হয়নি।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবসম্মত নয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলের উপনেতা জিএম কাদের। তিনি বলেছেন, বাজেটের কোনো বিশেষত্ব নেই। এতে মূল্যস্ফীতি, দ্রব্যমূল্য ও রিজার্ভ নিয়ে যে সংকট চলছে, তার সমাধানে পরিকল্পিত দিকনির্দেশনাও নেই।

প্রস্তাবিত বাজেটকে দেশবিরোধী উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার লুটেরাতে পরিণত হয়েছে। লুটেরাদের বাজেট তো হবে লুট করার জন্য।

অন্যদিকে প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবসম্মত, সাহসী ও গণমুখী হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে অঙ্গীকারের বিশেষ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলো যেমন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীকে বাজেটে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বাজেটে কালো টাকা ঢালাওভাবে সুযোগ দেওয়ার সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৯ থেকে সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে যে পথরেখা দরকার তা দিতে পারেননি অর্থমন্ত্রী।

সংসদে ৩৪৫ পৃষ্ঠার এ বাজেট বক্তৃতার পুরোটা পড়েননি অর্থমন্ত্রী। তবে বাজেট বক্তৃতাটি পঠিত হবে বলে গণ্য হয়েছে। এর আগে কখনই এত বড় বাজেট বক্তৃতা প্রণয়ন করা হয়নি। পুরো বক্তৃতায় সরকারের বিগত ১৫ বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন ৮২ বছর বয়সী অর্থমন্ত্রী। বাজেটে বহুল প্রত্যাশিত ব্যাংক খাতের সংস্কারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়নি। সুখবর আসেনি শেয়ারবাজারের। বরং নতুন করে কর বসানো হয়েছে। বাজারে ভোক্তাকে সাশ্রয় দেওয়ার বিষয়েও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি এবং আগামীতে আরও বেশি উন্নয়ন হবে ও গ্রামের মানুষ আরও উন্নত সুবিধা পাবেÑ এমন স্বপ্নের জাল বোনা হয়েছে। বাজেটে মূল প্রতিপাদ্য বিষয় রাখা হয়েছে, ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার।’

বাজেট প্রণয়নে আইএমএফের শর্তগুলো সরকার খুব নিবিড়ভাবে মনে রেখেছে। বাজেটের পদে পদে তাদের শর্ত বাস্তবায়নের রূপরেখাও স্পষ্ট। শর্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বাজেটের আকার খুব বড় করা হয়নি। মূলত অর্থসংকটে কৃচ্ছ্র সাধনের জন্যই বাজেটের আকার কমানো হয়েছে। বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা, যা বর্তমানের চেয়ে ৪ শতাংশের একটু বেশি। সংশোধিত বাজেটের তুলনায় সাড়ে ১১ শতাংশ বেশি। এর আগের আওয়ামী লীগ সরকারের ঘোষিত বাজেটের আকার ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ বেশি বেড়েছে। অর্থনীতির আকার ৭ শতাংশ বাড়লে এবং মূল্যস্ফীতির ১০ শতাংশ ধরে নিলে স্থিরমূল্যে বাজেটের আকার ১২ শতাংশের বেশি সংকুচিত হয়েছে। এবারের বাজেটে সরকার সহজ করে নজর দিয়েছে বেশি। এর মধ্যে ব্যাংক খাত ও মোবাইল ফোন খাত থেকে করের একটি বড় অংশ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কর দেওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমানে যেসব খাত ছাড় বা অব্যাহতি পাচ্ছে, সেগুলো থেকে তা ধীরে ধীরে প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করছে সরকার।

বাজেটের বড় দিক বিশাল ঘাটতি। এ ঘাটতি মোকাবিলায় সরকার দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেবে। আবার ঋণের টাকা পরিশোধ করা হবে নতুন ঋণের অর্থ দিয়ে। দেশ সম্মিলিত প্রয়াসে বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত রাখা হবেÑ এমন অঙ্গীকার করেছেন অর্থমন্ত্রী তার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচি সীমিত পরিসরে চালু রাখা হলেও উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে নিম্নআয়ের মানুষের সুরক্ষা প্রদান কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশের বাজারে সরবরাহ-শৃঙ্খলে ত্রুটি মূল্যস্ফীতির অন্যতম কারণ। তবে আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার অবচিতি (মান কমে যাওয়া)। ২০২২ সালের জুলাই থেকে চলতি অর্থবছরের মে পর্যন্ত মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান ২৫.৫ শতাংশ কমেছে। এতে আমদানি করা পণ্যের দাম বেড়েছে, যা মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দিয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশের দর্শনকে দর্পণে রূপান্তরের লক্ষ্যে প্রতিটি খাতে আধুনিকায়ন ও প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উপযোগী ভৌত, সামাজিক ও প্রযুক্তি অবকাঠামো বিনির্মাণের প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে; স্মার্ট সমাজ, স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার এবং সর্বোপরি স্মার্ট অর্থনীতির সুফল দেশের শেষ প্রান্তে থাকা নাগরিকের কাছেও পৌঁছে দেওয়ার কথা জানান অর্থমন্ত্রী।

আগামী জুলাই থেকে এক বছরের জন্য কালোটাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ দেওয়া হয়েছে। নগদ টাকা ১৫ শতাংশ কর দিয়ে বিনা প্রশ্নে বৈধ বা সাদা করা যাবে। একইভাবে জমি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট কিনেও এলাকাভেদে নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে টাকা সাদা করা যাবে। সংসদ সদস্যদের আমদানি করা গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসানো হয়েছে। পাশাপাশি আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাবও করা হয়েছে। ফলে সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ির সুবিধা পুরোপুরি থাকছে না।

ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা বাড়েনি। আগের মতোই বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। বরং ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে ৩০ শতাংশ হারে নতুন একটি কর স্তর তৈরি করার প্রস্তাব করেছেন তিনি।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬.৭৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী বলেন, উচ্চমূল্যস্ফীতির কারণে দেশের অর্থনীতি বর্তমানে কিছুটা চাপের মুখে থাকলেও প্রাজ্ঞ ও সঠিক নীতিকৌশল বাস্তবায়নে জিডিপি প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত আছে। আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নেমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির হার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হচ্ছে এবং রাজস্ব নীতিতেও সহায়ক নীতিকৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দিতে ফ্যামিলি কার্ড, ওএমএস ইত্যাদি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।

নির্বাচনী ইশতেহারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রাথমিক ভিত্তি রচনা করার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, এবারের বাজেটের এটিই মূল লক্ষ্য। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা; বিজ্ঞান শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উদ্ভাবন সহায়ক শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিতকরণ; কৃষি খাতে প্রয়োজনীয় সহায়তা এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ; মৌলিক স্বাস্থ্য সেবা উন্নত ও সম্প্রসারিতকরণ; তরুণদের প্রশিক্ষণ ও আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ; সম্ভাব্য সব সেবা ডিজিটাইজ করাসহ সর্বস্তরে প্রযুক্তির ব্যবহার; ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন, সামুদ্রিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার, আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণ; ২০৩১ সালের মধ্যে অতি দারিদ্র্য নির্মূলকরণ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ সাধারণ দারিদ্র্যের হার তিন শতাংশে নামিয়ে আনা; শিল্প স্থাপন ও বিনিয়োগে সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিতকরণ; জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় পদক্ষেপ গ্রহণ ও জনকল্যাণমুখী, জবাবদিহিতামূলক, দক্ষ ও স্মার্ট প্রশাসন গড়ে তোলা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত রাখা।

একনজরে বাজেট

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৩৫ হাজার ২১৫ কোটি টাকা বেশি। অন্যদিকে সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৮২ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা বেশি। মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৪১ হাজার কোটি টাকা বেশি আর সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৬৩ হাজার কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত করে আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৫০ হাজার কোটি টাকা বেশি আর সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭০ হাজার কোটি টাকা বেশি। এনবিআরবহির্ভূত কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৫ হাজার কোটি টাকা কম আর সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার কোটি টাকা কম। কর ব্যতীত প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা ৪৬ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৪ হাজার কোটি টাকা কম আর সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার কোটি টাকা কম। বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪.৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা। ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এ ছাড়া ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। ব্যাংকবহির্ভূত ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরে ছিল ২৩ হাজার কোটি টাকা আর সংশোধিত বাজেটে কমিয়ে ৬৯০ কোটি টাকা করা হয়। আগামী অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৩ হাজার কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরে পরিশোধের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮২ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরে ছিল ১২ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা।