ভিসা ছাড়াই ভারতে ঢুকে খুনের পর নেপালে সিয়াম

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৩ জুন ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
ভিসা ছাড়াই ভারতে ঢুকে খুনের পর নেপালে সিয়াম

ভিসা ছাড়া নেপাল থেকে অবৈধ পথে ভারতে ঢুকে ঝিনাইদহের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমকে খুনে অংশ নেয় সিয়াম হোসেন। খুনের পর আবার নেপালে ফিরে যায়। অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করেছে সেই দেশের পুলিশ। তবে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের দলটি এখনো সিয়ামকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনি। এদিকে কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জিভা গার্ডেনের ফ্ল্যাটে আনারকে হত্যার পর হাড় থেকে মাংস আলাদা করা মোস্তাফিজ ও ফয়সালকে দুই সপ্তাহেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, খুনের পর বাংলাদেশে এলেও ফের ভারতে ফিরে গেছে এই দুই খুনি। এ ছাড়া গ্রেপ্তার শিলাস্তি রহমানকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকা-ের সংযোগ বেরিয়ে আসছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ গতকাল নেপাল থেকে টেলিফোনে আমাদের সময়কে জানান, ডিএমপিতে হওয়া মামলার তদন্তে আমরা নেপালে তদন্ত চালাচ্ছি। তিনি বলেন, খুনের মাস্টারমাইন্ড আখতারুজ্জামান শাহিনের সঙ্গে খুনি সিয়ামের নেপালের দেখা হয়েছিল কিনা সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখছি। নেপালের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। তদন্তে অগ্রগতি হয়েছে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মামলার মূল তদন্ত ভারতে হওয়ায় আপাতত সিয়ামকে বাংলাদেশে আনা সম্ভব হচ্ছে না। তাকে ভারতের হাতে হস্তান্তর করা হতে পারে। তবে কবে এবং কী প্রক্রিয়ায় তাকে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হবে সে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হয়নি।

পুলিশ বলছে, আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার পর লাশের খ-াংশ সরাতে নেতৃত্ব দেয় সিয়াম হোসেন। কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জিভা গার্ডেনের বাসা থেকে লাগেজভর্তি লাশের টুকরা বের করে নিয়ে আসে ভোলার বোরহানউদ্দিনের বাসিন্দা এ যুবক। ঘটনার পর সে ভারত থেকে নেপালে পালিয়েছিল। এরপর আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থার (ইন্টারপোল) মাধ্যমে তাকে গ্রেপ্তারের চিঠি দেয় বাংলাদেশ।

পুলিশ বলছে, এমপি আনার হত্যার মাস্টারমাইন্ড তারই বাল্যবন্ধু ও ঝিনাইদহের যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আখতারুজ্জামান ওরফে শাহিন মিয়া। তবে হত্যাকা-টি বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেন চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ। আজিমের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন গত ২২ মে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার শিমুল ভূঁইয়া, তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমানকে দ্বিতীয় দফায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি পুলিশ।

এদিকে আনার হত্যায় শিলাস্তি রহমানকে গ্রেপ্তার করা হলেও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তবে এখন দুই দেশের পুলিশ বলছে, তিনি খুনের পরিকল্পনায় ছিলেন, হত্যাকা-ের সময়ও ফ্ল্যাটে ছিলেন। লাশের টুকরা ফ্ল্যাটের বাইরে নেওয়ার ক্ষেত্রেও তার ভূমিকা ছিল। কলকাতায় সিআইডির এফআইআরে যে সাতজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে তার মধ্যে শিলাস্তি রহমানের নাম আছে। অন্যরা হলেন- আখতারুজ্জামান শাহিন, সৈয়দ আমানুল্লাহ, মোস্তাফিজুর রহমান, ফয়সাল আলী শাহী, জিহাদ ওরফে জুবের ও সিয়াম হোসেন।

খুনের ঘটনায় ভারতের পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার জিহাদ হাওলাদারের দাবি ছিল, আজিমের মরদেহের হাড় এবং মাথার অংশ টুকরা টুকরো করে ভারতের পোলেরহাট থানার কৃষ্ণমাটি এলাকার বাগজোলা খালে ফেলা হয়েছে। সেখানে গত সাত দিন ধরে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি চালিয়েও কিছু পাওয়া যায়নি। কলকাতার একাধিক গণমাধ্যম গতকাল রবিবার জানিয়েছে, আজিমের মরদেহ উদ্ধার করতে এবার ভারতীয় নৌবাহিনী এবং উপকূলরক্ষী বাহিনীর (কোস্টগার্ড) সাহায্য নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি।

গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যান এমপি আনার। ১৩ মে বন্ধু গোপালের বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। তিনি এসএমএসে বলেছিলেন দিল্লি যাচ্ছেন এবং সেখানে পৌঁছে তাকে ফোন করবেন। পরে তার সঙ্গে ভিআইপিরা আছেন জানিয়ে ফোন না দিতে বলেন। পরে ১৮ মে ভারতে নিখোঁজের জিডি করা হয়। ২২ মে ভারতের কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জিভা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে এমপি আনারকে খুন করা হয়েছে বলে জানায় কলকাতার সিআইডি।