পণ্য খালাসে দেরি করলে জরিমানা
৬ জুন থেকে নতুন শুল্ক আইন কার্যকর
বন্দরে কনটেইনার জট কমানো, রাজস্ব সংগ্রহ ও বাণিজ্য সহজীকরণের লক্ষ্যে ‘কাস্টমস আইন ২০২৩’ আগামী ৬ জুন থেকে কার্যকর হচ্ছে। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আইনের ৩২ ধারায় বলা আছে, আমদানি পণ্যের শুল্ক-কর, চার্জ নির্ধারণের পর তা ১০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এ সময় অতিক্রম করলে শুল্ক-কর পরিশোধের সর্বশেষ তারিখ থেকে খালাসের সময় পর্যন্ত বার্ষিক ১০ শতাংশ হারে সাধারণ সুদ পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া শুল্ক-কর বকেয়া থাকলে তার ওপরে ১০ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। এতে ব্যবসার খরচ বাড়তে পারে।
আইনে বন্দরে পৌঁছানোর ৫ দিনের মধ্যে পণ্যের ঘোষণা বা বিল অব এন্ট্রি জমার বিধান রাখা হয়েছে। এ নিয়ম ভঙ্গ করলে আমদানিকারককে জরিমানা গুনতে হবে। যদিও বিল অব এন্ট্রি সংশোধনের সুযোগ এবং শুল্ক ফাঁকি উদঘাটনের আগে অপরাধ স্বীকার করলে জরিমানা থেকে অব্যাহতির বিধান রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, বর্তমানে বন্দরে পণ্য ফেলে রাখলে কাস্টমসের জরিমানা নেই। সেক্ষেত্রে শুধু পোর্ট ও শিপিং ডেমারেজ দিতে হয়। কিন্তু নতুন আইন অনুযায়ী, শুল্কায়নের ১০ দিনের মধ্যে শুল্ক-কর পরিশোধ সাপেক্ষে পণ্য বন্দর থেকে খালাস নিতে হবে। এ সময়ের মধ্যে পণ্য খালাসে ব্যর্থ হলে ১০ শতাংশ সুদ পরিশোধ করতে হবে। আইনপ্রণেতাদের দাবি, কনটেইনার জট কমাতে নতুন কাস্টমস আইনে এ বিধান রাখা হয়েছে।
এর আগে গত বছরের ৩১ অক্টোবর জাতীয় সংসদে কাস্টমস আইন-২০২৩ পাস হয়। পুরনো আইনে ২২৩টি ধারা ছিল। নতুন আইনে ২৬৯টি ধারা আছে। রাজস্ব সংগ্রহ এবং বাণিজ্য সহজীকরণের লক্ষ্যে বিশ্ব কাস্টমস সংস্থার (ডব্লিউসিও) অনুমোদিত আন্তর্জাতিক চুক্তি ও কনভেনশন অনুযায়ী নতুন আইন করা হয়েছে। আইনে নতুন কিছু ধারা যুক্ত করা হয়েছে, যা শিল্পের ব্যয় বাড়িয়ে দেবে।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
নতুন আইনে আদতে কাস্টমস কর্মকর্তাদের ক্ষমতা কমানোর কথা বলা হলেও ক্ষেত্রবিশেষে তা বহুলাংশে বাড়ানো হয়েছে। এতে হয়রানি বাড়তে পারে। আইনের ১৫৪ ধারায় বলা আছে, বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের কাস্টমসের কাছে ব্যাগেজ সম্পর্কে তথ্য দিতে হবে। যাত্রী বা ক্রু ব্যাগেজে রক্ষিত পণ্য সম্পর্কে কাস্টমস কর্মকর্তার কাছে লিখিত বা মৌখিক ঘোষণা দিতে পারবেন এবং কাস্টমস কর্মকর্তার প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। ব্যাগেজ তল্লাশির আগে যাত্রী যদি ব্যাগেজে রক্ষিত পণ্য সম্পর্কে সঠিত তথ্য দিতে ব্যর্থ হন এবং তল্লাশিকালে ঘোষণাবহির্ভূত পণ্য পাওয়া যায়, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে কাস্টমস কর্মকর্তা সর্বনিম্ন ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা করতে পারবেন।
আইনের ৮২ ধারায় বলা হয়, পণ্য ঘোষণা বা বিল অব এন্ট্রিতে দেওয়া তথ্যের সত্যতা ও সঠিকতা সম্পর্কে আমদানিকারক-রপ্তানিকারক দায়বদ্ধ থাকবে। একই সঙ্গে পণ্য খালাসে জড়িত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টও দায়ী থাকবে। পণ্যের সঠিকতা যাচাইয়ে কাস্টমস কর্মকর্তা দলিলাদি চাইতে পারবেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তথ্য না দিলে সংশ্লিষ্ট আমদানি-রপ্তানিকারককে সর্বনিম্ন ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা জরিমানা গুনতে হবে।
আইনের ৮৪ ধারায় বলা আছে, কাস্টমস স্টেশনে পণ্য নামার পর আমদানিকারককে ৫ দিনের মধ্যে পণ্যের ঘোষণা বা বিল অব এন্ট্রি জমা দিতে হবে। চাইলে পণ্য বন্দরে পৌঁছানোর ৩০ দিন আগেও বিল অব এন্ট্রি জমা দেওয়া যাবে। এ নিয়ম ভঙ্গ করলে আমদানিকারককে সর্বনিম্ন ৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হবে। এ ধারাগুলোতে হয়রানি বাড়ার পাশাপাশি ব্যবসার খরচ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
আইনে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার অংশ হিসেবে বেশকিছু নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। ফলে আমদানিকারকদের হয়রানি হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। আইনের ৮৬ ধারায় বলা আছে, আমদানিকারক-রপ্তানিকারক চাইলে মূল কাগজপত্রের (প্রোফরমা ইনভয়েস, প্যাকিং লিস্ট, এলসি ডকুমেন্ট প্রভৃতি) সঙ্গে সংগতি রেখে কমিশনারের কাছে আবেদনের মাধ্যমে একাধিকবার বিল অব এন্ট্রি সংশোধন করতে পারবেন। তবে পণ্য পরীক্ষার কথা জানানো হলে বা কাস্টমস কর্মকর্তার দ্বারা পণ্যের বিবরণ সঠিক প্রতিষ্ঠিত হলে বিল অব এন্ট্রি সংশোধন করা যাবে না।
এদিকে ১৭১ (২) ধারায় বলা আছে, যদি কোনো ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কাস্টমস কর্মকর্তার কাছে বিল এন্ট্রিতে উল্লিখিত পণ্যের বিবরণের (পণ্যের পরিমাণ, গুণাগুণ, প্রকৃতি, শ্রেণিবিন্যাস, শুল্কায়নযোগ্য মূল্য, উৎস দেশের সঠিকতা) ত্রুটি উল্লেখ করে দোষ স্বীকার করেন, তাহলে মিথ্যা ঘোষণার দায়ে জরিমানা আরোপ করা হবে না। এক্ষেত্রে আমদানিকারককে পণ্য অ্যাসেসমেন্ট বা কায়িক পরীক্ষার আগে ঘোষণা দিতে হবে।
যদিও ইচ্ছাকৃত মিথ্যা ঘোষণার জরিমানা বাড়ানো হয়েছে। আইনের ১৭২ ধারায় বলা আছে, যদি কোনো ব্যক্তি একই অপরাধ পুনরাবৃত্তি করেন বা দ্বিতীয়বার সংঘটন করেন, তাহলে প্রথমবার আরোপিত জরিমানা বা অর্থদণ্ডের দ্বিগুণ জরিমানা বা অর্থদণ্ড আরোপ করা হবে।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম