একদিনে ব্যাংকগুলোর ধার ২৬,৩৬৫ কোটি টাকা

তারল্য সংকটে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার বাড়ছেই ব্যাংকগুলোর ।। আন্তঃব্যাংক কলমানি থেকেও ধার বাড়ছে ।। সব ধরনের সুদহারও ঊর্ধ্বমুখী

জিয়াদুল ইসলাম
২৭ মে ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
একদিনে ব্যাংকগুলোর ধার ২৬,৩৬৫ কোটি টাকা

ব্যাংক খাতে তারল্য পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না, বরং দিন দিন অবনতি হচ্ছে। তারল্য সংকটে আন্তঃব্যাংক কলমানির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার বাড়ছে ব্যাংকগুলোর। গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৪৯টি ব্যাংক ও ৩টি নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রায় ২৬ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা ধার করেছে, যা ছিল একদিনে এযাবৎকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধারের রেকর্ড। একই দিন এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকের (আন্তঃব্যাংক) ধারের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ২০৭ কোটি টাকা, যা গতকাল বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা। তবে এদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো কত টাকা ধার করেছে. সেই তথ্য কেউ প্রকাশ করতে রাজি হননি।

খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, বহুদিন ধরে ব্যাংক খাতে চলা তারল্য সংকট সম্প্রতি আরও প্রকট হয়েছে। এর মূলে নানা কারণকে দায়ী করা হচ্ছে। একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আমাদের সময়কে বলেন, সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর জন্য প্রাতিষ্ঠানিক আমানত সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। কারণ আমানতের হারের চেয়ে ২ শতাংশ বেশি সুদ পাওয়ায় অনেক গ্রাহক ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলন করে সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করছেন। আবার একীভূতকরণ আতঙ্ক ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণেও ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটছে। নতুন আমানত আসাও কমে গেছে। এ কারণে অনেক ব্যাংকের তারল্য সংকট বেড়েছে।

সাধারণভাবে ব্যাংকগুলো সহজে বিনিময়যোগ্য সম্পদের (এসএলআর) অতিরিক্ত বিল ও বন্ড লিয়েন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিতে পারে। তবে কিছু ব্যাংকের কাছে ধার নেওয়ার মতো বিল ও বন্ড নেই। টাকা ফেরতের অনিশ্চয়তার কারণে এসব ব্যাংক আন্তঃব্যাংক থেকেও ধার পাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ১৯ মে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ধারের পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার ৯২ কোটি টাকা। তবে ২০ মে ওই ধার কমে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৭০৮ কোটি টাকায়। ২১ মে সেটি আরও কমে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা। তবে ২৩ মে বৃহস্পতিবার সেটি দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে দাঁড়ায় ২৬ হাজার ৩৬৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, যা ছিল একদিনে এযাবৎকালের দ্বিতীয় ধারের রেকর্ড। এর আগে গত ২৭ মার্চ রেকর্ড ২৮ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা ধার দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সূত্র জানায়, সংকটের কারণে অনেক ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিধিবদ্ধ তারল্য সংরক্ষণ করতে পারছে না। অন্তত আটটি ব্যাংক এ ধরনের ঘাটতি নিয়ে চলছে। তাদের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা। তবে বেশ কিছু ব্যাংকের উদ্বৃত্ত থাকায় সার্বিক খাতে ঘাটতি রয়েছে ১৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকার মতো। এদিকে সরকারের ঋণ নেওয়ার উপকরণ ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদহার ইতোমধ্যে ১২ শতাংশে উঠেছে। আইএমএফের শর্ত মেনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সুদহার বাড়ানো, সুদহার বাজারভিত্তিক করা ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের ঋণের চাহিদা বাড়ায় ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদহার এভাবে বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ২২ এপ্রিল পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে প্রায় ৬৫ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। তবে আমানতের প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী প্রবণতায় রয়েছে। গত মার্চে আমানতের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশে। এই প্রবৃদ্ধি গত ৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোনো মাসেই আমানতের প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের নিচে নামেনি। ফেব্রুয়ারিতে আমানতের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আবার ব্যাংক খাতের ১০ শতাংশের কম ঋণ খেলাপি দেখানো হলেও অনাদায়ী ঋণ ৩০ শতাংশের মতো। এসব ঋণের একটি অংশ বেনামি। আবার ডলার সংকট মেটাতে গিয়ে চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ১২ বিলিয়ন ডলার বিক্রির বিপরীতে বাজার থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উঠে এসেছে। সব মিলিয়ে তারল্য সংকটে রয়েছে অনেক ব্যাংক। এক ব্যাংক আরেক ব্যাংক থেকে আশানুরূপ ধার না পেয়ে এখন নিয়মিত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিচ্ছে।