সুদের বোঝা ভারী হচ্ছে
বাজেটের ব্যয় মেটাতে সরকারের ঋণনির্ভরতা আরও বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের মতো আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের জন্যও সরকার বিপুল পরিমাণ ঋণ করতে যাচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুসারে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মোট ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকার বাজেট থেকে সরকার সুদ বাবদ ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করবে।
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরে সুদ বাবদ পরিশোধ করতে হবে ২১ হাজার ৬২৪ কোটি টাকার বেশি। চলতি অর্থবছরে সুদ পরিশোধে ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়, পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ১ লাখ ৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, টাকার অবমূল্যায়নের পাশাপাশি সুদহার বৃদ্ধি ও ঋণের পরিমাণ বাড়ার কারণে চলতি হিসাববছরে সরকারের সুদ পরিশোধের ব্যয় আরও বাড়বে। আর সুদ বাবদ ব্যয় বৃদ্ধিই দেশের অর্থনীতিকে নিচের দিকে টেনে নামাচ্ছে।
বাজেট ঘাটতি মেটাতে চলতি অর্থবছরে মোট ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে নিট বিদেশি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি এবং দেশি বা অভ্যন্তরীণ ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। বিদেশি ঋণের উৎস বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশ। অভ্যন্তরীণ ঋণের বড় অংশই ব্যাংকঋণ, চলতি অর্থবছরে যার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। বাকি ঋণ সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য উৎস থেকে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ঋণের মধ্যে নিট বিদেশি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকার মতো। বাকি ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা হতে পারে দেশি ঋণ। দেশি ঋণের মধ্যে ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা নেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে। বাকি ২০ হাজার কোটি টাকা নেওয়া হবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি ও অন্যান্য উৎস থেকে।
ডলার সংকটের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি চাপের মধ্যে রয়েছে; এর মধ্যে চলতি বছর থেকেই বড় কিছু প্রকল্পের ঋণের কিস্তি পরিশোধ করাও শুরু হয়েছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্সও কাক্সিক্ষত আকারে বাড়ানো যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে ডলারের সরবরাহ না বাড়ানো গেলে বিদেশি ঋণ ঘিরে সংকট জোরালো হতে পারে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।
জানা গেছে, বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হয় সাধারণত মার্কিন ডলার ও ব্রিটিশ পাউন্ডে। এসডিআরের সঙ্গে ডলার ও পাউন্ডের বিনিময় হার ও ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময় হারের তারতম্য এবং ডলার ও ইউরোর বেঞ্চমার্ক রেট বৃদ্ধির কারণে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। অল্প কয়েক মাসের ব্যবধানে ডলারের বিনিময় হার ৮৫ থেকে ১১৮ টাকায় উন্নীত হওয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে সুদহার বাড়ায় দেশি-বিদেশি ঋণে সুদের ব্যয় অনেক বেড়েছে। আগামী বাজেটে প্রাথমিকভাবে এ খাতে ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও সংশোধিত বাজেটে তা বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে।
বাজেট বাস্তবায়নের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাজেট ঘাটতি মেটাতে প্রতিবছরই ঋণ বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে ঋণের সুদ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে বর্তমানে দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে সরকারের পরিচালন বাজেটের সবচেয়ে বেশি অংশ ব্যয় হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, দেশের অর্থনীতিকে নিচের দিকে টেনে নামানোর জন্য সুদের বোঝা বিশাল ভূমিকা রাখছে। ঋণ করে বড় বাজেট দেওয়ায় সুদের বোঝা বাড়ছে। যেসব দেশ ঋণ করে বড় বাজেট দিয়েছে তারাই সমস্যায় পড়েছে। দেশি-বিদেশি ঋণ নিয়ে আমরা শঙ্কিত। বিদেশি টাকা তো ডলার বা পাউন্ডে পরিশোধ করতে হয়। রাজস্ব আয় না বাড়লে দেশি ঋণ পরিশোধে টাকা প্রিন্ট করা হয়, এতে মূল্যস্ফীতির ওপর বড় প্রভাব পড়ে। যার চাপ সইতে হয় দেশের মানুষের।