নীতিমালা ভেঙে ফ্ল্যাট নিলেন জাগৃক চেয়ারম্যান
আলাদিনের চেরাগ যেন হাতে পেয়েছেন জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের (জাগৃক) চেয়ারম্যান খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে জাগৃকে যোগ দেন তিনি। অবশ্য এরই মধ্যে তাকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে বদলি করেছে সরকার। জানা গেছে, জাগৃকের ৯ মাসের চেয়ারম্যান হয়েই নীতিমালা ভেঙে নিজের নামে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট বরাদ্দ নিয়েছেন এ কর্মকর্তা। যদিও বরাদ্দসংক্রান্ত বোর্ড ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছে- অতীতেও এভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সেটি অনুসরণ করেই তাকে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এতে নীতিমালা ভঙ্গ হয়নি।
জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের আসাদ অ্যাভিনিউয়ে বাস্তবায়নাধীন ‘গৃহায়ণ দোলনচাঁপা’ প্রকল্পে ১৬৬০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট বরাদ্দ নিয়েছেন তিনি। জাগৃক কর্তৃক এই দোলনচাঁপার ফ্ল্যাটের মূল্য কমনস্পেসসহ প্রতি বর্গফুট ৬ হাজার ৫৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ তিনি যদি ১৬৬০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের মূল্য পরিশোধ করেন, তা হলে তাকে দিতে হবে ১ কোটি ৮ লাখ ৮১ হাজার ৩০০ টাকা। তার সঙ্গে আরও ৬ লাখ টাকা পার্কিং চার্জ পরিশোধ করতে হবে। অর্থাৎ ফ্ল্যাটের মূল্য দাঁড়াবে ১ কোটি ১৪ লাখ ৮১ হাজার ৩০০ টাকা।
সরকারের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান। তাই ফ্ল্যাটের মূল্য পরিশোধ করতে হয়তো অন্য পথে হাঁটতে হয় না তাকে। তবে প্রশ্ন উঠেছে- চেয়ারম্যান হয়ে কীভাবে এত দ্রুত একটি ফ্ল্যাট বরাদ্দ নিলেন।
জাগৃক সূত্রে জানা গেছে, ফ্ল্যাট বরাদ্দসংক্রান্ত কমিটির সদস্যদের অনেকেই আপত্তি করেছিলেন, কিন্তু কারও কথাই টেকেনি। বরাদ্দের নীতিমালার ৫.৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে- মন্ত্রণালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের (পদায়ন/প্রেষণে নিয়োজিত) ন্যূনতম এক বছরের চাকরিকাল পূর্ণ হতে হবে। জাগৃকের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের ক্ষেত্রে চাকরি স্থায়ী হতে হবে। তবে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান পদে থাকলে বিশেষ কোনো সুবিধা থাকবে কিনা বা তাদের জন্য আলাদা কোটা রয়েছে কিনা, তা নীতিমালায় উল্লেখ নেই।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
গত ১৫ জানুয়ারি জাগৃকের ২৫১তম বোর্ডসভায় আবেদনটি নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে বোর্ড সদস্য (প্রকৌশল ও সমন্বয়) মোসলেহ্উদ্দীন আহাম্মদ এবং সদস্য (পরিকল্পনা, নকশা ও বিশেষ প্রকল্প) বিজয় কুমার ম-ল আবেদনটির বৈধতার বিষয়ে কয়েকটি পয়েন্ট উপস্থাপন করেন। বিষয়টি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনে আইনি মতামত গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এরপর চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাগৃকের প্যানেল আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. ইসমাইল হোসেন এবং জাগৃক আইন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আসাদুজ্জামানের মতামত গ্রহণ করেন বলে আমাদের সময়কে লিখিতভাবে জানান। উভয় আইন কর্মকর্তার মতামতে বলা হয়েছে- খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমানের ফ্ল্যাট পাওয়ার আবেদনটি বৈধ এবং জাগৃক সংরক্ষিত কোটায় তিনি ফ্ল্যাট বরাদ্দ পেতে পারেন।
তবে খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান প্রেষণে জাগৃক চেয়ারম্যান হয়েছেন বলে নীতিমালা অনুযায়ী তার ওই ফ্ল্যাট বরাদ্দ পাওয়ার কথা নয়। তিনি অবশ্য দাবি করেছেন, সব নিয়ম ও নীতিমালা অনুসরণ করে বরাদ্দ কমিটি যাচাই-বাছাই করেই বরাদ্দ দিয়েছে।
এ বিষয়ে খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, হ্যাঁ- আমি ফ্ল্যাট পেয়েছি। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষে যোগদানের ২/৩ মাস পর জানতে পারি, দোলনচাঁপা প্রকল্পে ১৬৬০ বর্গফুট আয়তনের একটি ফ্ল্যাট জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সংরক্ষিত কোটায় খালি আছে। যেহেতু ঢাকা শহরে আমার নিজ নামে বা স্ত্রীর নামে বা পুত্র-কন্যা-পিতামাতার নামে বা বেনামে প্লট/ফ্ল্যাট নেই, তাই সংরক্ষিত কোটায় খালি হওয়া ওই ফ্ল্যাটের জন্য গত ১০ জানুয়ারি আবেদন করি। সব নিয়মনীতি মেনেই ফ্ল্যাট পেয়েছি। বিধি অনুযায়ী প্রথম কিস্তির টাকা পরিশোধ করেছি।
এ বিষয়ে জানতে বোর্ড সদস্য মোসলেহ্উদ্দীন আহাম্মদের ফোনে একাধিকার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, দপ্তর প্রধান হিসেবে চেয়ারম্যান মহোদয় এ বিষয়ে একমাত্র মন্তব্য করতে পারেন।
বোর্ডের অপর সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কাজী আতিয়ুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, নীতিমালার বাইরে কিছু করা হয়নি। তবে এ বিষয়ে চেয়ারম্যান মহোদয় ভালো বলতে পারবেন।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন
খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন ২০২৩-এর ১৯ সেপ্টম্বর। গত ১৫ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন নিয়োগ-১ শাখা হতে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাকে গ্রেড-১ পদোন্নতি প্রদানপূর্বক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে পদায়ন করা হয়। গতকাল পর্যন্ত তিনি জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবেই দায়িত্ব পালন করেন।
অভিযোগ রয়েছে, বদলি হওয়ার পরও তিনি পদোন্নতি ইস্যুতে সরব হয়েছেন। এ জন্য গতকাল সোমবার একটি মিটিংও ডেকেছিলেন। তবে নানা সমালোচনার মুখে শেষ মুহূর্তে মিটিং বাতিল করেন।