সেবার মান নিয়ে গ্রাহক অসন্তোষ দূর হয়নি

সৈয়দ রিফাত
১৭ মে ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
সেবার মান নিয়ে গ্রাহক অসন্তোষ দূর হয়নি

দেশের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এলেও সেবার মান নিয়ে এখনো গ্রাহকদের অসন্তোষ রয়েছে। প্রতিবছর মোবাইল অপারেটরদের বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ জমা পড়ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিতে। গ্রাহকরা বলছেন, প্রতিশ্রুত সেবার শতভাগ বাস্তবায়ন করছে না টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। আবার ডিভাইসের উচ্চমূল্য, নেটওয়ার্কের ধীরগতি, উচ্চ করব্যবস্থা ও ডাটার উচ্চমূল্যের কারণে সবার জন্য নিশ্চিত হচ্ছে না নিরবচ্ছিন্ন টেলিকম সেবা। ফলে ডিজিটাল বৈষম্য বাড়ছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

এমন পরিস্থিতিতে আজ শুক্রবার দেশে পালিত হচ্ছে বিশ^ টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘ডিজিটাল উদ্ভাবন, টেকসই উন্নয়ন’। এ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। দিবসটি উপলক্ষে এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপের ফলে দেশব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে বিরাট জাগরণ তৈরি হয়েছে, যার সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য বলছে, চলতি বছরের মার্চ মাস শেষে দেশে মোবাইল ব্যবহারকারীর মোট সংখ্যা ১৯ কোটির বেশি। তবে ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ১৩ কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার। তাদের মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ১২ কোটি ১২ লাখ ৬০ হাজার এবং বাকি ১ কোটি ৩৪ লাখ ৪০ হাজার গ্রাহক আইএসপি এবং পিএসটিএন ব্যবহারকারী।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক এক হিসাব বলছে, ২০২৩ সালে দেশে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে মোবাইল ব্যবহারকারী মোট জনসংখ্যার ৭৪ দশমিক ২ শতাংশ। সংখ্যার হিসাবে যা দাঁড়ায় ১২ কোটি ৫৯ লাখ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) ব্যবহার জরিপ ২০২৩ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৪৩ দশমিক ৬ শতাংশ, স্মার্টফোন ব্যবহারকারী ৬৩ দশমিক ৩ শতাংশ, কম্পিউটার ব্যবহারকারী ৮ দশমিক ৯ শতাংশ এবং সরকারি ল্যান্ডফোন ব্যবহার করে মাত্র শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ নাগরিক।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ব টেলিযোগযোগ দিবসের লক্ষ্য ছিল ডিজিটাল উদ্ভাবন, প্রযুক্তির প্রসার, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং ডিজিটাল বৈষম্য দূর করা। সেই লক্ষ্য এখনো পূরণ হয়নি।

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, নাগরিকদের ডিজিটাল বৈষম্য দূর করতে সরকারকে বৃহৎ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। উচ্চ করহার পরিহার করতে হবে। ইন্টারনেট ব্যবহারে স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে মোবাইল ইন্টারনেটের দাম নিয়ে গ্রাহকদের রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। মোবাইল ইন্টারনেটের দামের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছর মোবাইল ইন্টারনেট প্যাকেজের দাম প্রতি জিবিতে গড়ে ২০ টাকা বেড়েছে। মেহেদি হাসান নামের এক মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বলেন, ‘আগে এক মাসের জন্য যে বান্ডেল প্যাকেজ ৭৫০ টাকায় কিনতাম, এখন সেই প্যাকেজে খরচ হচ্ছে প্রায় এক হাজার টাকা।’

এদিকে উচ্চমূল্যে প্যাকেজ কিনলেও নিরবচ্ছিন্ন সেবা পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। বিটিআরসির তথ্যমতে, সেবার গুণগত মান, ইন্টারনেট তথা ডাটার গতি ও ভলিউম, কল কেটে যাওয়া, প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড, ইনকামিং এবং আউটগোয়িং কল ও এসএমএস, মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি), প্যাকেজ পরিবর্তন, কুইজ ও পুরস্কার, রিচার্জ বা বিলিং, সিম নিবন্ধন বা মালিকানাসংক্রান্ত বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে গ্রাহকদের।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে গ্রাহকদের অভিযোগ নিষ্পত্তির মূল দায়িত্ব বিটিআরসির। আইন অনুযায়ী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তি করার কথা। তবে বেশির ভাগই এই সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি হয় না বলে অভিযোগ। কমিশনে জমা পড়া অভিযোগ পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২২ সালে জমা পড়ে ১৫ হাজার ৭৪৯টি অভিযোগ। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয় ১২ হাজার ২১৯টি বা ৭৮ শতাংশ। ২০২৩ সালের ১১ হাজার ৩৩৪টি অভিযোগের মধ্যে নিষ্পত্তি হয় ৮ হাজার ৬৬৬টি বা ৭৬ শতাংশ।

এ বিষয়ে বিটিআরসির মুখপাত্র ও সচিব নূরুল হাফিজ আমাদের সময়কে বলেন, অভিযোগ জানানোর পর অপারেটরগুলো কী পদক্ষেপ নিল, সেটা সিএমএসের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি। পুরো বিষয়ে কোনো ‘গ্যাপ’ নেই। সব অভিযোগই আমলে নেওয়া হয়। তবে কিছু অভিযোগ আছে, সেগুলো সমাধান করা যায় না বা তাৎক্ষণিক সমাধান হয় না।