২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন
আগামী অর্থবছরে (২০২৪-২৫) ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। এটি চলতি অর্থবছরের বরাদ্দের চেয়ে ২ হাজার কোটি টাকা বেশি। আগামী এডিপিতে ১,৩২১টি উন্নয়ন প্রকল্প থাকবে। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১,১৩৩টি, সমীক্ষা প্রকল্প ২১টি, কারিগরি সহায়তার ৮৭টি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ৮০টি। নতুন অনুমোদিত প্রকল্প রয়েছে ৬০টি এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) প্রকল্প থাকছে ৮০টি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এডিপি অনুমোদন দেওয়া হয়। সভাশেষে ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুস সালাম ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার। এ সময় পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিত কর্মকার, কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) আব্দুল বাকী, জিইডির সদস্য ড. মো. কাউছার আহমেদসহ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আগামী অর্থবছরের এডিপিতে ১০টি প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা। আর ১০ মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে মোট এডিপির ৭১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এবারের এডিপিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাচ্ছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত। মোট এডিপির প্রায় ২৭ শতাংশ বা ৭১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে এ খাতে। রাজধানীর নতুন মেট্রোরেল প্রকল্প, পদ্মা রেলসেতুসহ গুরুত্বপূর্ণ চলমান বেশ কিছু প্রকল্প রয়েছে খাতটিতে।
নতুন এডিপিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকা বা মোট বরাদ্দের ১৫ শতাংশের বেশি। তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে শিক্ষা খাতে। এ খাতে আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৩১ হাজার কোটি টাকা, যা মোট এডিপির প্রায় ১২ শতাংশ।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
আগামী অর্থবছরের এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত ১০টি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫১ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা। এগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল লাইন-১ প্রকল্প, পাওয়ার গ্রিডের নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণ প্রকল্প এবং পদ্মা রেল ও শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল প্রকল্প। এসব প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) প্রকল্প। এ প্রকল্পের জন্য আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১১ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প। এতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬ হাজার ৫ কোটি টাকা। এরপর ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা। ‘ঢাকা মাসর্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট : মেট্রো রেললাইন-১’ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ৩ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা।
এছাড়া পাওয়ার গ্রিডের নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে বরাদ্দ ৩ হাজার ৫৪৪ কোটি, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (প্রথম পর্যায়) প্রকল্পে ৩ হাজার ৫৩৫ কোটি, এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেনদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক আন্ডার ডিপিডিসি এরিয়া শীর্ষক প্রকল্পে ৩ হাজার ৩৮৪ কোটি এবং ৫টি হাসপাতাল ৫শ শয্যায় উন্নীতকরণ প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে প্রস্তাবিত এডিপি অনুযায়ী ৫৮টি মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের মধ্যে সর্বাধিক বরাদ্দ পাচ্ছে ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৮ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য। স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জন্য ৯ হাজার ৩৭১ কোটি, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জন্য ৯ হাজার ২২৭ কোটি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৪ হাজার ৯০৩ কোটি, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জন্য ৪ হাজার ৫৮৮ কোটি, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য ৪ হাজার ৪২৫ কোটি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জন্য ২ হাজার ৯২৭ কোটি এবং সেতু বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আগামীতে সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করতে জেলাভিত্তিক মাস্টারপ্ল্যান করতে হবে; পশ্চাৎপদ বলতে কোনো কথা থাকবে না।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম