ইসলামি ব্যাংকগুলো আমানত হারাচ্ছে

এক মাসে কমেছে ৮৮৩২ কোটি টাকা

জিয়াদুল ইসলাম
১৬ মে ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
ইসলামি ব্যাংকগুলো আমানত হারাচ্ছে

বিভিন্ন ঋণ অনিয়ম, তারল্য সংকটসহ নানা কারণে দেশের ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর ওপর আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। এতে ব্যাংকগুলো থেকে আমানত তুলে নিচ্ছেন গ্রাহকরা। সর্বশেষ জানুয়ারি মাসেই ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর আমানত কমেছে প্রায় ৮ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা। তবে আমানত কমলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ ধার সুবিধা থেকে অর্থ নিয়ে ঋণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছে ব্যাংকগুলো। এ কারণে জানুয়ারি মাসে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন খাতে ঋণ তথা বিনিয়োগ বেড়েছে ৩ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ইসলামি ব্যাংকিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স স্ট্যাটিস্টিক্স’ শীর্ষক মাসিক প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, গত ডিসেম্বরে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর আমানতের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৮৪ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাসের ব্যবধানে আমানত কমেছে ৮ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা। অথচ একই সময়ে এসব ব্যাংকের ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোর ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। জানুয়ারিতে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৭৩ কোটি টাকা।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ইসলামি ব্যাংকগুলোর আমানত কমলেও প্রচলিত ধারার ব্যাংকের ইসলামি ব্যাংকিং শাখাগুলোর আমানত বেড়েছে ২ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর ইসলামি ব্যাংকিং শাখাগুলোতে আমানতের পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। জানুয়ারিতে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ২৭০ কোটি টাকা। যদিও একই সময়ে এসব ব্যাংকের ইসলামি ব্যাংকিং উইন্ডোগুলোতে আমানত কমেছে ১ হাজার ৮১৬ কোটি টাকা।

সবমিলিয়ে গত জানুয়ারি শেষে ব্যাংক খাতে ইসলামি ধারার ব্যাংকিংয়ে (ইসলামি ধারার সব ব্যাংক এবং প্রচলিত ব্যাংকের ইসলামি ব্যাংকিং শাখা ও উইন্ডোসহ) মোট আমানতের পরিমাণ ৪ লাখ ১৩ হাজার ৯৬৯ কোটি টাকা। আগের মাস ডিসেম্বরে আমানত ছিল ৪ লাখ ২২ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাসের ব্যবধানে ইসলামি ধারার ব্যাংকিংয়ে আমানত কমেছে ৮ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই আমানতের হিসেবেও গরমিল পাওয়া গেছে।

জানা যায়, প্রতি তিন মাস পর বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামি ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ‘কোয়াটারলি রিপোর্ট অন ইসলামি ব্যাংকিং বাংলাদেশ’ নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘ইসলামি ব্যাংকিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স স্ট্যাটিস্টিক্স’ প্রতিবেদনে বড় ধরনের গরমিল পাওয়া গেছে।

এই দুটি প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গেল বছরের ডিসেম্বর প্রান্তিকে প্রকাশিত ‘কোয়াটারলি রিপোর্ট অন ইসলামি ব্যাংকিং বাংলাদেশ’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিসেম্বর পর্যন্ত ইসলামি ব্যাংকিংয়ে আমানতের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। কিন্তু গতকাল প্রকাশিত ‘ইসলামি ব্যাংকিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স স্ট্যাটিস্টিক্স’ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ডিসেম্বর পর্যন্ত ইসলামি ব্যাংকিংয়ে আমানতের পরিমাণ ৪ লাখ ২২ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুই প্রতিবেদনেই ইসলামি ধারার ব্যাংকিংয়ে আমানতে গরমিল ২০ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা।