জীবন দিয়ে রেখে গেলেন দেশপ্রেমের অনন্য নজির
কর্ণফুলীতে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে পাইলটের মৃত্যু
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর পতেঙ্গা এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। বিমানটিতে আগুন ধরে যাওয়ার পর বড় ধরনের ক্ষতি এড়াতে দুই বৈমানিক অত্যন্ত সাহসিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে বিমানটিকে বিমানবন্দরের কাছে অবস্থিত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যেতে সক্ষম হন। এরপর বিমানটি কর্ণফুলী নদীতে পড়ে বিধ্বস্ত হয়। শেষ মুহূর্তে দুই পাইলট প্যারাসুট নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। তাদের উদ্ধার করা হলেও চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ; নিজের জীবন দিয়ে রেখে যান দেশপ্রেমের এক অনন্য নজির। উদ্ধারকৃত অন্য বৈমানিকের নাম উইং কমান্ডার মো. সোহান হাসান খান পিএসসি।
জাওয়াদ পতেঙ্গায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর জহরুল হক ঘাঁটিতে কর্মরত ছিলেন। প্রশিক্ষণ শেষে ঘাঁটিতে ফেরার পথে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। জানা গেছে, বিমানবাহিনীর ওয়াইএকে১৩০ নামের যুদ্ধবিমানটিতে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। এর কিছুক্ষণ পরই সেটি বিধ্বস্ত হয়। স্থানীয়দের ধারণ করা এক ভিডিওতে দেখা যায়, শুরুতে উড়োজাহাজের পেছনের অংশে আগুন লাগে। এরপর দুই বৈমানিক প্যারাসুট নিয়ে উড়োজাহাজ থেকে বেরিয়ে পড়েন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে উড়োজাহাজটিতে। পরক্ষণে এটি কর্ণফুলী নদীতে বিধ্বস্ত হয়।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে বলা হয়, আনুমানিক সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে বিমানটি কর্ণফুলী নদীর মোহনার কাছে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। দুর্ঘটনার পর বৈমানিকদ্বয় উইং কমান্ডার মো. সোহান হাসান খান পিএসসি এবং স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ জরুরি প্যারাসুট দিয়ে বিমান থেকে নদীতে অবতরণ করেন। তাদের বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর উদ্ধারকারী দল এবং স্থানীয় জেলেদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে আসিম জাওয়াদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় দ্রুত চিকিৎসার জন্য বিএনএস পতেঙ্গাতে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক সর্বাত্মক প্রচেষ্টার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (বন্দর) শাকিলা সোলতানা বলেন, বিমানবাহিনীর বিধ্বস্ত হওয়া প্রশিক্ষণ বিমানটির পাইলট ও কো-পাইলট প্যারাসুট দিয়ে নেমে এলে তাদের আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বানৌজা ঈসা খাঁ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত অপর উইং কমান্ডার মো. সোহান হোসেন খান জহুরুল হক ঘাঁটির মেডিক্যাল স্কোয়াড্রনে চিকিৎসাধীন আছেন।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
আইএসপিআর জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পরপরই সহকারী বিমানবাহিনী প্রধান (পরিকল্পনা) এয়ার ভাইস মার্শাল মু. কামরুল ইসলাম ঢাকা থেকে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছেন এবং উদ্ধার কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন। বিমানবাহিনী প্রধানের নির্দেশক্রমে দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনের জন্য ইতোমধ্যে বিমানবাহিনীর পক্ষে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
উদ্ধার অভিযান
বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমান উদ্ধারে কর্ণফুলী নদীতে বিভিন্ন বাহিনী যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে। বিমানবাহিনীর নিজস্ব ইউনিটের পাশাপাশি অভিযানে যোগ দেয় কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। নদীর যে স্থানে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়, সেখানে বিমানবাহিনীর একাধিক উদ্ধারকারী স্পিডবোড, টাগবোড, সী অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন ধরনের নৌযান দিয়ে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হয়। টানা ১১ ঘণ্টা চেষ্টার পর কর্ণফুলীর মোহনা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিমানটির ধ্বংসাবশেষ।
প্রধানমন্ত্রী ও বিমানবাহিনী প্রধানের শোক
বিমানবাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তুপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তুপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।