ডেঙ্গু রোধে প্রস্তুতি শিথিল
রূপ নিতে পারে ভয়াবহ
পূর্বের বছরগুলোর অভিজ্ঞতা বলছে, এবারও মে মাস থেকে ধীরে ধীরে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার বিস্তার ঘটতে পারে। তাই তীব্র দাবদাহের পর বৃষ্টি শুরু হওয়ার খবরে ডেঙ্গু নিয়ে শঙ্কায় ভুগছেন ঢাকাবাসী। তবে ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি দেখছে না দুই সিটি করপোরেশন। সরকারি এ দুই সেবা সংস্থার দাবি, বৃষ্টি বাড়ার সঙ্গে এডিস মশা বৃদ্ধির ঝুঁকি থাকলেও সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে তারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, সিটি করপোরেশনের যে প্রস্তুতি তাতে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে ডেঙ্গু।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত ৫ মে পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজার ২৮৮ জন। এর মধ্যে এক হাজার ৩৯৫ জন পুরুষ এবং ৮৯৩ জন নারী রয়েছেন। আর ৫ মে ২৪ ঘণ্টার স্বাস্থ্যবার্তা অনুযায়ী একদিনে সারাদেশে ২৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) দুইজন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে তিনজন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে তিনজন, খুলনা বিভাগের (সিটি করপোরেশনের বাইরে) দুইজন, ময়মনসিংহ বিভাগের (সিটি করপোরেশনের বাইরে) একজন, রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের) দুইজন রয়েছেন।
এডিস মশার জীবনচক্র অনুযায়ী মে মাসের পর থেকে ডিমগুলো লার্ভায় পরিণত হতে থাকে। জুন, জুলাই ও সেপ্টেম্বর হচ্ছে এডিসের ভরা মৌসুম। তাই সংস্থাগুলোর আগাম প্রস্তুতি থাকা দরকার বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের মশককর্মীদের সকাল-সন্ধ্যা দেখা যায় না। নির্দিষ্ট কিছু এলাকা ছাড়া সব জায়গায় তারা যান না।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, রোদ ও বৃষ্টি এমন আবহাওয়ায় জমা পানিতে এডিসের লার্ভা জন্মায়। তাই এ সময়ে বেশি সতর্ক থাকতে হবে। বর্ষা শুরুর আগে থেকেই আমরা একযোগে ৫৪টি ওয়ার্ডে মাসব্যাপী জনসচেতনতামূলক প্রচারাভিযান শুরু করেছি। কোথাও এডিসের লার্ভা পেলে ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, সবাই সচেতন না হলে সিটি করপোরেশনের একার পক্ষে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
অভিযান শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও। গত ২৪ এপ্রিল দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ঘোষণা দিয়েছেন, নির্মাণাধীন ভবনে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলে প্রয়োজনে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হবে।
গত ২৭ এপ্রিল থেকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ঢাকা উত্তর সিটির সকল ওয়ার্ডে মাসব্যাপী সচেতনতামূলক প্রচার অভিযান শুরু হয়। গত ২৭ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত ডিএনসিসি অভিযান চালিয়ে ৮টি মামলায় ২ লাখ ২৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে। এ ছাড়া গত ২২ এপ্রিল থেকে ২১ মে পর্যন্ত তারা ৪৪ হাজার ৭৯৯টি বাড়ি পরিদর্শন করেছেন, যার মধ্যে লার্ভা পাওয়া গেছে ৭৭টিতে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
প্রতিবছর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ডেঙ্গুর প্রাক-জরিপ করা হয়। এবারও মাঠপর্যায়ে তথ্য নিয়ে একটি জরিপ করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহের শেষদিকে সেই জরিপ প্রকাশ করা হতে পারে বলে জানা গেছে। জরিপের কাজে যুক্ত থাকা এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমাদের সময়কে জানান, এবারও ডেঙ্গু ভোগাবে ঢাকাবাসীকে।
সিটি করপোরেশনের মশককর্মী শেষ কবে কখন ওষুধ ছিটিয়েছে ভুলে গেছেন বলে জানান জুরাইন মেডিক্যাল রোডের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় প্রচুর মশা; কিন্তু সিটি করপোরেশন থেকে কোনো স্প্রে বা ফগিং করতে দেখি নাই। মিরপুর কালশী এলাকার বাসিন্দা আতিকুর রহমান বলেন, সন্ধ্যা হলে মশার জন্য কোথাও বসা যায় না। সিটি করপোরেশনের লোক মাসে দুই-একবার ওষুধ দেয়। এবার যেভাবে গা-ছাড়াভাব দেখছি, তাতে মনে হচ্ছে ভয়ংকর পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে।
এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ গতবারের চাইতে বেশি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, এবার এডিসের লার্ভার ঘনত্ব বেশি। বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু বেড়ে যেতে পারে। সিটি করপোরেশনের এমন কোনো কাজ চোখে পড়েনি যাতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রিত থাকবে।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (অ.দা.) ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, আগাম প্রস্তুতি হিসেবে সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠানে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। সবাইকে আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। আগামী ২১ মে বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
ঢাকাবাসীর জন্য ডেঙ্গু নিয়ে কোনো সুখবর নেই বলে জানালেন কীটতত্ত্ববিদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, এ বছরও ডেঙ্গু কম হবে না। ভালোই আঘাত করবে। তবে এবার ঢাকার চাইতে চট্টগ্রাম, বরিশাল, বরগুনা, গাজীপুর, চাঁদপুর জেলায় এডিসের লার্ভার ঘনত্ব বেশি। তিনি বলেন, শুধু বিশেষ কোনো প্রতিষ্ঠান ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করবে এই ধারণা ঠিক না। সব মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। খুঁজে বের করতে হবে কোথায় ডেঙ্গু হয়।