হাওরের আধাপাকা ধান কেটে নিচ্ছেন কৃষক

বৃষ্টি-ঢলে ফসল নষ্টের শঙ্কা

চৌধুরী ভাস্কর হোম, মৌলভীবাজার
২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
হাওরের আধাপাকা ধান কেটে নিচ্ছেন কৃষক

বৈশাখের দাবদাহ উপেক্ষা করে ধান কাটা, মাড়াই ও ঘরে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন হাওরের কৃষকরা। আগাম বন্যার আশঙ্কায় আধাপাকা ধানও কেটে নিচ্ছেন তারা। হাওরগুলোতে বৈশাখের প্রথম থেকে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কৃষক মাঠে ছুটছেন। মৌলভীবাজারের রাজনগর, কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা, শ্রীমঙ্গলসহ অন্যান্য উপজেলায় সহস্রাধিক হেক্টর জমির বোরো ধান বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। কৃষি বিভাগ বলছেÑ আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে মৌলভীবাজারে ৬১ হাজার ৬৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ করেছেন কৃষকরা। যেখান থেকে এ বছর ২ লাখ ৩২ হাজার টন চাল উৎপাদিত হবে। এবারে মৌলভীবাজারের ৭ উপজেলায় বোরো ধানের আশাতীত ফলন হয়েছে।

শ্রীমঙ্গলের বর্গাচাষি বাবুল মিয়া বলেন, ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এর মধ্যে বন্যার ভয় আছে। এই ভয়ে আধাপাকা ধান কেটে ফেলছি। বড়লেখার বর্গাচাষি আবদুর রউফ জানান, তার প্রায় ১২ কিয়ার জমিতে ধানের ফলন ভালো হয়েছে। তবে কিছু ধান শিলাবৃষ্টিতে ঝরে পড়েছে। এখনো ধান কাটেননি। দ্রুতই কেটে ফেলবেন।

এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো শিলাবৃষ্টি আর প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হওয়ায় স্বস্তিতে কাটলেও গত দুই-একদিনে উজানের ঢল ও শিলাবৃষ্টির হওয়ার শঙ্কায় আধাপাকা ধান কাটছেন কৃষকরা। যেভাবে ঝড়বৃষ্টি শুরু সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, ধান ঘরে তোলা নিয়ে সত্যি খুব দুশ্চিন্তায় রয়েছেন নিম্নাঞ্চলের কৃষকরা।

রাজনগরের কৃষক মনি শিল জানান, বন্যার ভয়ে আধাপাকা ধান কেটে ফেলছেন। ঋণ করে চাষ করেছেন, তাই আর কোনো ঝুঁকি নিতে চান না।

মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জালাল উদ্দিন সরকার বলেন, বৈশাখ মাসে যেহেতু প্রাকৃতিক দুর্যোগের শঙ্কা থাকে সে জন্য ধান পাকলে তা দ্রুত কেটে ফেলতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ধান উৎপাদনে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইল হাওরে রুস্তমপুর গ্রামে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট আয়োজিত বোরো ধান কর্তন উৎসবের উদ্বোধন শেষে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুস শহীদ দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, সারা বছরের মোট চাল উৎপাদনের অর্ধেকের বেশি জোগান দেয় বোরো ধান। সে জন্য এ বছরও বোরোর আবাদ ও ফলন বাড়াতে আমরা ২১৫ কোটি টাকারও বেশি প্রণোদনা কৃষকদের প্রদান করেছি। এর ফলে এ বছর সারাদেশে ৫০ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এবার ২ কোটি ২২ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, বোরো ধানের উৎপাদন খরচ হিসাব করেই ধানের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, যাতে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পান। গত বছরের চেয়ে এ বছর ধানের মূল্য কেজিপ্রতি দুই টাকা বাড়ানো হয়েছে।