২২ ঘণ্টা পর জেলের মরদেহ উদ্ধার, পরিবারের দাবি হত্যা
বরগুনার পাথরঘাটায় বিষখালী নদী থেকে নিখোঁজের ২২ ঘণ্টা পর মো. রিপন (৪১) নামের এক জেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরিবারের দাবি, বরগুনা সদর মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা রিপনকে মারধর করে হত্যার পর নদীতে ফেলে দিয়েছে।
গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে নদীর কালমেঘা টুলু পয়েন্টর কাছ থেকে ভাসমান অবস্থায় ওই জেলের মরদেহ উদ্ধার করে জেলেরা। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে বিষখালী নদী থেকে ওই জেলে নিখোঁজ হন।
নিহত জেলে মো. রিপন উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের দক্ষিণ কুপদোন গ্রামের মো. আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে।
নিহত রিপনের স্ত্রী পাখি বেগম জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে বিষখালী নদীতে অভিযান চালায় বরগুনা মৎস বিভাগ। এ সময় মৎস বিভাগের লোকজন তার স্বামীকে আটক করে মারধর করে হত্যার পর নদীতে ফেলে দেয়।
স্থানীয় জেলেরা জানান, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বিষখালীর নদী থেকে বরগুনা সদর মৎস্য বিভাগের লোকজন রিপনকে তাদের ট্রলারে তুলে নিয়ে যায়। পরদিন সকাল ৯টার দিকে জেলে রাসেল ও দেলোয়ার মৎস বিভাগের লোকজনের কাছে রিপনের কথা জানতে চাইলে তারা দুজনকে বেধড়ক মারধর করে এবং রিপন নদীতে ঝাপ দিয়েছে বলে জানায়। এ ঘটনায় মো. রাসেল ও দেলোয়ার হোসেন নামে আরও দুজন জেলে আহত হন।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে রিপনের মরদেহ কালমেঘা টুলু পয়েন্টে আনা হয়। এ সময় উপস্থিত প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বরগুনা মৎস বিভাগের কর্মকর্তাদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এ সময় পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির, বরগুনা জেলা পরিষদের সদস্য এনামুল হোসাইন, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান গোলাম নাসির উপস্থিত ছিলেন।
আহত দুই জেলে জানান, প্রতিদিনের মতো রিপন, রাসেল ও দেলোয়ার দুটি ট্রলার নিয়ে বিষখালী নদীতে মাছ ধরতে যান। রাত আড়াইটার দিকে স্পিডবোট নিয়ে বরগুনা সদর মৎস্য বিভাগ অবৈধ খুঁটি অপসারণের জন্য বিষখালী নদীতে অভিযানে আসেন। তখন ওই দুটি ট্রলারকে ধরে সেখানে থাকা জেলেদের মারধর করেন। পরে রিপনকে তাদের স্পিডবোটে তুলে নিয়ে যান এবং মৎস্য বিভাগের কিছু লোক রাসেলের ট্রলারে উঠে অভিযান পরিচালনা করেন। পরদিন সকাল ৯টার দিকে তাদের ট্রলারের কাছে স্পিডবোট আসলে রিপনের কথা জানতে চাইলে রাসেল ও দেলোয়ারকে বাঁশ ও লাঠি দিয়ে মারধর করেন।
স্থানীয়রা জানান, নদী থেকে ফিরে আসা জেলেদের কাছ থেকে নিখোঁজের ঘটনা জানাজানি হয়। পরে স্থানীয়রা নদীতে রিপনকে খোঁজাখুঁজি করে। শুক্রবার রাত ১২টার দিকে কালমেঘা টুলু পয়েন্টের কাছের একটি বনের ভেতর রিপনের মরদেহ ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায়।
কালমেঘা ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম নাসির জানান, মরদেহের সন্ধান পাওয়ার পর পাথরঘাটা থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ বিষখালী নদী থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।
পাথরঘাটা থানার পুলিশ পরিদর্শক সাইফুজ্জামান জানান, মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।
বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, বরগুনা সদর মৎস্য বিভাগ বৃহস্পতিবার রাতে বিষখালী নদীতে অবৈধ খুঁটি অপসারণের জন্য একটি অভিযান পরিচালনা করে। তবে কোনো জেলেকে মারধর বা আটক করা হয়নি। তাদেরকে মারধরের অভিযোগ সত্য না। তিনি স্থানীয় লোকের মাধ্যমে ফোনে মারধর এবং নিখোঁজের কথা শুনেছেন। পরে তিনি বরগুনা জেলা প্রশাসককে বিষয়টি অবহিত করেন।