ফিরতে পারে তিনদিনের ইন্টারনেট প্যাকেজ
মোবাইল অপারেটরদের ডাটা প্যাকেজসংক্রান্ত বিষয়ে গ্রাহকের মতামত জরিপ শুরু করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এর মাধ্যমে বাতিলকৃত তিনদিন মেয়াদি ইন্টারনেট প্যাকেজ ফেরত আসতে পারে বলে জানিয়েছে বিটিআরসির একটি সূত্র। তবে গ্রাহকদের দাবি মেয়াদবিহীন ইন্টারনেট। যদিও বিটিআরসির ওই জনমত জরিপে মেয়াদবিহীন ইন্টারনেট নামে আলাদা কোনো মতামতে ভোট প্রদানের সুযোগ রাখা হয়নি। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিটিআরসির এই জনমত জরিপের মাধ্যমে ডাটা প্যাকেজসংক্রান্ত একটি নতুন জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।
বিটিআরসি পরিচালিত ওই অনলাইন জনমত জরিপে বেশকিছু প্রশ্ন রাখা হয়েছে। যার ভেতর একটি তিনদিন মেয়াদি প্যাকেজসংক্রান্ত। ওই প্রশ্নে গ্রাহকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, তিনদিন মেয়াদি প্যাকেজ প্রবর্তন করা হলে সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৬ জিবি পর্যন্ত কোন
ডাটা ভলিউমটি যৌক্তিক হবে। বিটিআরসি সূত্র জানায়, মূলত তিনদিনের ইন্টারনেট প্যাকেজের বিষয়ে গ্রাহকের আগ্রহ জানার জন্যই জনমত জরিপটি করা হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসির সচিব মো. নুরুল হাফিজ আমাদের সময়কে বলেন, মোবাইল অপারেটরদের ইন্টারনেট প্যাকেজগুলো নিয়ে গ্রাহকের মতামত জানার জন্য জরিপটি করা হচ্ছে। গ্রাহকের মতামতের ওপর ভিত্তি করে বিটিআরসি পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে।
তিনদিনের প্যাকেজ ফেরত আসা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছে মোবাইল অপারেটরগুলো। নতুন করে তিনদিন মেয়াদি ইন্টারনেট প্যাকেজ ফেরত আনলে তা গ্রাহকবান্ধব হবে কিনা, সে বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘তিনদিনের ইন্টারনেট প্যাকেজের বিষয়ে মোবাইল অপারেটরদের সুস্পষ্ট অবস্থানের পরেও এটি যখন বন্ধ করা হয়, তখন এর সামগ্রিক নেতিবাচক প্রভাব গ্রাহক ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ওপর পড়েছিল। ধীরে ধীরে হলেও সেই পরিবর্তনের সঙ্গে গ্রাহকরা এখন অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। এখন হঠাৎ করে যদি আবার তিনদিনের প্যাকেজ পুনর্বহাল করা হয়, তা হলে কতটা গ্রাহকবান্ধব হবে সেটি গভীরভাবে বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে।
তবে বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, সরকার যদি কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যা দেশের ডিজিটাল অগ্রযাত্রার পথে সহায়ক, বাজারে প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করে ও একই সঙ্গে গ্রাহকবান্ধব হয়, বাংলালিংক তা সমর্থন করে।
এর আগে তিনদিন মেয়াদি ইন্টারনেট বাতিলে আপত্তি জানিয়েছিল মোবাইল অপারেটরগুলো। সে সময় তারা জানিয়েছিল, প্রায় ৭০ শতাংশ গ্রাহক তিনদিন মেয়াদি প্যাকেজ ব্যবহার করে। তবে তাদের আপত্তি সত্ত্বেও বিটিআরসি তিনদিন মেয়াদি প্যাকেজটি বাতিল করে।
বিটিআরসির জনমত জরিপের মাধ্যমে ডাটা প্যাকেজ নিয়ে নতুন করে জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করেন মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি এভাবে না করে শুরুতে এই খাতের অংশীদারদের মতামত নেওয়া উচিত ছিল। বেশি জরুরি ছিল প্রথমে ডাটার দাম ঠিক করা। তাতে গ্রাহক উপকৃত হতো সবচেয়ে বেশি।
আরও পড়ুন:
ডেমরায় এক কক্ষে কিশোরী ও যুবকের মরদেহ
এর আগে গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে ‘মোবাইল ফোন অপারেটরসমূহের ডেটা এবং ডেটাসংশ্লিষ্ট প্যাকেজ-সম্পর্কিত নির্দেশিকা-২০২৩’ কার্যকর করে বিটিআরসি। বিটিআরসির নির্দেশিকায় প্যাকেজের সংখ্যা সর্বোচ্চ ৪০; মেয়াদ ৭ দিন, ৩০ দিন ও আনলিমিটেড (নির্দিষ্ট মেয়াদহীন) করা হয়। ছয় মাস পার না হতেই আবারও তারা জরিপ করছে।
বিটিআরসির পরিচালিত ওই জনমত জরিপে ডাটা প্যাকেজের মেয়াদকাল সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। যেখানে গ্রাহকদের পছন্দমতো ৩ দিন, ৭ দিন, ১৫ দিন, ৩০ দিন এবং আনলিমিটেড মেয়াদি ইন্টারনেট ডাটা প্যাকেজের বিষয়ে মতামত দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে গ্রাহকরা চাচ্ছেন মেয়াদবিহীন ইন্টারনেট। যদিও ওই জরিপে কোথাও শুধু মেয়াদবিহীন ইন্টারনেট ডাটা মতামত বেছে নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়নি।
জরিপে অংশ নেওয়া আজাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার টাকায় কেনা ইন্টারনেটের মেয়াদ কেন থাকবে। আবারও একই প্যাকেজ কিনলে অব্যবহৃত ডাটা ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এটা তো ঠিক নয়। জরিপে মতামত অংশে আমি মেয়াদবিহীন ইন্টারনেটের দাবি জানিয়েছি।’
আরও পড়ুন:
আফরোজা পারভীন পেলেন অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার