বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন টিটি

ইউসুফ সোহেল
২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন টিটি

কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে টিকিট কাটা নিয়ে এক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে ট্রেনের টিটিসহ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। পরিচয় জানার পরও তারা তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ধাক্কা দিতে দিতে ফেলে দেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় রবিবার ও গতকাল সোমবার বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক, ডিআরএম (কমলাপুর), কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজারের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন লাঞ্ছিত বীর মুক্তিযোদ্ধা শরীফ দাদ খান (মুক্তিযোদ্ধা পরিচিতি নম্বর-০১৪৮০০০৩৩০৯)। এ ছাড়া গত রবিবার ঢাকা রেলওয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি নম্বর-৯৫৯) করেছেন তিনি।

জানা গেছে, শরীফ দাদ খানের বাড়ি কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি থানার চান্দপুরে। তিনি পরিবার নিয়ে রাজধানীর উত্তর মুগদাপাড়া এলাকায় থাকেন। ২০ এপ্রিল সকালে ঢাকা থেকে গ্রামে যান। ওই দিনই ঢাকার পথ ধরেন। কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস (৭৮২) ট্রেনে সিট পর্যাপ্ত না থাকায় সচরাচর স্টেশন থেকে ভৈরব বাজার পর্যন্ত শোভন চেয়ার শ্রেণির আসন-জ-৩ নম্বর সিটে অনলাইনে টিকিট কিনে ভ্রমণ করেন শরীফ। একপর্যায়ে ভৈরব বাজার স্টেশনে নেমে ঢাকা পর্যন্ত টিকিট কেনার চেষ্টা করেন। কিন্তু ভিড়ের চাপে টিকিট কিনতে পারেননি বয়োবৃদ্ধ মানুষটি। হাতে সময় না থাকায় তিনি ট্রেনে স্ট্যান্ডিং টিকিট কেনার কথা ভেবে পিছনের বগিতে উঠে পড়েন। তার নির্ধারিত বগিতে আসার পথে সন্ধ্যা ৭টার দিকে এক ব্যক্তি টিটি পরিচয় দিয়ে তার কাছে টিকিট দেখতে চান। ওই টিটির কোনো নেমপ্লেট ছিল না। শরীফ দাদ খান তাকে টিকিট দেখিয়ে পুরো বিষয় খুলে বলেন এবং ভৈরব বাজার থেকে ঢাকার কমলাপুর পর্যন্ত টিকিট করে দেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু ওই টিটি হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে তার সাথে দুর্ব্যবহার শুরু করেন। ‘আপনি এসি কামরায় কেন এসেছেন, বের হন এখান থেকে’- এই বলে টিটি তাকে ধাক্কা দিতে দিতে বের করতে থাকেন। শরীফ দাদ খান নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেন। এতে টিটি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা হইছেন তো কী হইছে, দেশ কি কিইন্যা ফেলছেন নাকি?’ এ সময় তিনি সকল মুক্তিযোদ্ধার উদ্দেশে গালিগালাজ ও বাজে মন্তব্য করতে থাকেন। একপর্যায়ে শরীফ দাদ খানকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে নিচে ফেলে দেন টিটি এবং তার পাশে দাঁড়ানো একজনকে নির্দেশ দেন, ‘সিকিউরিটিকে ডাকো, আর ওনাকে হ্যান্ডকাফ লাগাও।’ এ সময় অন্য যাত্রীরা প্রতিবাদ করে বলেন, ‘আপনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সাথে এমন ব্যবহার করতে পারেন না। উনি তো আপনার কাছ থেকে টিকিট কিনতে চাচ্ছেন, আপনি তাকে দরকার হলে জরিমানাসহ টিকিট দেন। এমন দুর্ব্যবহার করছেন কেন? আপনি মুক্তিযোদ্ধার গায়ে হাত দিলেন কেন?’ একপর্যায়ে টিটি তার আরও সহকর্মীদের জড়ো করে হুমকি-ধমকি দেওয়া শুরু করেন।

শরীফ দাদ খান আমাদের সময়কে বলেন, ‘টিটির এমন ব্যবহারে আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। অভিযুক্তদের শনাক্ত করে বিভাগীয় ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কয়েকটি দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি। বাংলাদেশ রেলওয়ের ডিভিশনাল কমার্শিয়াল অফিসার (ডিসিও) শাহ আলম কিরণ শিশির এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ডিসিও শাহ আলম কিরণ শিশিরের মোবাইল ফোনে গতকাল একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া দেননি তিনি। একপর্যায়ে তিনি লাইন কেটে দেন। ফলে অভিযুক্ত টিটির নাম এবং অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

ঢাকা রেলওয়ে থানার ওসি ফেরদৌস আহমেদ বিশ্বাস আমাদের সময়কে বলেন, ‘ভুক্তভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধার সাথে যে স্থানে ঘটনাটি ঘটেছে- সেটি ভৈরব রেলওয়ে থানা এলাকায় পড়েছে। তার বয়সের কথা মাথায় রেখে আমরা জিডি গ্রহণ করে ভৈরব থানা কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেছি। তদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।’

প্রসঙ্গত, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাক্সিক্ষত সেবা নির্বিঘ্নে ও দ্রুততম সময়ে প্রদানের বিষয়ে সরকারের পক্ষে নির্দেশ রয়েছে।