কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে সুনসান নীরবতা

এম এইচ রবিন
২২ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে সুনসান নীরবতা

জাল সনদ প্রিন্ট ও বিক্রির অভিযোগে সিস্টেম অ্যানালিস্ট প্রকৌশলী একেএম শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তারের পর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে এখন সুনসান নীরবতা। গতকাল রবিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, সেবাপ্রার্থীদের আনাগোনা নেই। বোর্ডের ক্যাম্পাসজুড়ে যেন সুনসান নীরবতা। গেটে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন আনসার সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি ডিবি পুলিশের আনাগোনায় বাইরের লোকজন কম আসে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) জিজ্ঞাসাবাদে শামসুজ্জামানের স্বীকারোক্তিতে বোর্ডের জড়িত কর্মকর্তাদের নাম আসছে। এমনকি খোদ বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খানের স্ত্রী শেহেলা পারভীনকে সনদ বিক্রির সঙ্গে জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি।

সিটিজেন চার্টার অনুযায়ী ৩৭টি সেবা দিয়ে থাকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। প্রতিদিন সারাদেশ থেকে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা বিভিন্ন সেবা নিতে আসেন এখানে। তবে গত কয়েক দিনে বদলে গেছে চিত্র।

গতকাল রবিবার বোর্ডের নতুন দুই নম্বর ভবনে নিচতলায় নামাজ রুমের সামনে একজন কর্মচারীর কাছে চেয়ারম্যান কততলায় বসেন জানতে চাইলে তিনি তিনতলা দেখিয়ে দেন। সেখানে গিয়ে চেয়ারম্যানের দপ্তরের সামনে গ্লাসবেষ্টিত ওয়েটিংরুমের সামনে সবকটি চেয়ার ফাঁকা দেখা যায়। চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত কর্মকর্তার কাছে পরিচয় দিয়ে চেয়ারম্যানের সাক্ষাৎ চাইলে ব্যস্ত আছেন জানিয়ে অপেক্ষা করতে বলেন। এর তিন থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে সাক্ষাতের অনুমতি মেলে।

সাক্ষাৎকালে বোর্ড চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খানকে খুব বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল। কুশলবিনিময়ের পর তিনি জানালেন, চাকরিজীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছেন। তার ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। বোর্ডের কর্মকর্তা শামসুজ্জামান এর আটকের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে তিনি বলেন, আমিও চাই বোর্ড দুর্নীতিমুক্ত হোক।

বোর্ডের দুই নম্বর ভবনের অষ্টম তলার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বোর্ড সম্পর্কে নীতিবাচক সংবাদ প্রচারে আত্মসম্মান নিয়ে অস্বস্তিতে আছি। এখানে সবাই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত না। আমরাও চাই সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষ প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করা হোক।

সম্প্রতি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট একে এম শামসুজ্জামানকে সার্টিফিকেট বাণিজ্যের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৬ দিনের পুলিশ রিমান্ডে নেওয়া হয়। এরপরই পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে একের পর এক বের হতে থাকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের দুর্নীতির নানা তথ্য। ২০১৭ সালে ও মার্কশিট সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগে তাকে সাময়িকভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়। কিন্তু উচ্চআদালতের মাধ্যমে আবার চাকরিতে পুনর্বহাল হন। তাকে সেই পুরনো স্পর্শকাতর শাখা হিসেবে খ্যাত সার্ভারের দায়িত্ব দেয় বোর্ড। ফলে ফের সার্টিফিকেট বাণিজ্য শুরু করেন তিনি। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে পাঁচ হাজারের বেশি সার্টিফিকেট মার্কশিট বিক্রি করেছেন বলে গোয়েন্দাদের কাছে স্বীকার করেছেন তিনি।