কিডনি রোগের উচ্চঝুঁকিতে ত্রুটি নিয়ে জন্মানো শিশু

নিজস্ব প্রতিবেদক
২১ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
কিডনি রোগের উচ্চঝুঁকিতে ত্রুটি নিয়ে জন্মানো শিশু

অল্প বয়সে গর্ভধারণ, গর্ভবতীদের পুষ্টিহীনতা ও দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার কারণে সারা বিশে^ সময়ের আগে শিশু জন্মের হার বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। অন্যান্য দেশে সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও বাংলাদেশে এখনো নির্ধারিত সময়ের আগে শিশু জন্মের হর ১৬ দশমিক ২ শতাংশ। এতে করে নানা জন্মগত ত্রুটি নিয়ে ভূমিষ্ঠ হচ্ছে শিশু। এসব শিশু কিডনি রোগের উচ্চঝুঁকিতে থাকে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, হাসপাতালগুলোতে বিগত বছরগুলোর তুলনায় কিডনি সমস্যা নিয়ে আসা শিশু রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এসব শিশুর বেশির ভাগই সময়ের আগে এবং ত্রুটি নিয়ে জন্ম নেওয়া।

গতকাল শনিবার রাজধানীর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশের (পিএনএসবি) সপ্তম আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা।

দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের প্রথম দিন দেশি-বিদেশি সাড়ে ৫০০ শিশু কিডনি বিশেষজ্ঞ অংশ নেন। এ দিন চারটি সেশনে ১৪ জন চিকিৎসক গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন। এর মধ্যে নয়জন দেশি, বাকিরা ভারত, কানাডা, আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশ থেকে আসা চিকিৎসক।

পিএনএসবি জানিয়েছে, এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য শিশু কিডনি রোগের উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে সবাইকে অবগত করা এবং শিশু কিডনি রোগের আক্রান্তের হার কমানোর ব্যাপারে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতা শেয়ারের মাধ্যমে করণীয় ঠিক করা। সম্মেলনে কিডনি রোগে আক্রান্ত শিশুদের উন্নত চিকিৎসাÑ ডায়ালাইসিস, কিডনি প্রতিস্থাপন ও নেফ্রোট্রিক সিনড্রমের আধুনিক চিকিৎসার বিষয়ে আলোচনা করেন বক্তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে শিশু কিডনি রোগের চিকিৎসায় এখনো দুর্বলতা রয়ে গেছে। রোগ শনাক্ত করার পাশাপাশি ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা থাকলেও দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় কন্টিনিউয়াস রেনাল রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (সিআরআরটি) নেই দেশের কোনো হাসপাতালে।

পিএনএসবির মহাসচিব ও বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শিরীন আফরোজ শিশু জানান, ২০১৮ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত শিশু হাসপাতালে যত রোগী ভর্তি হয়েছে, তাদের প্রায় ৪ শতাংশ ছিল কিডনি রোগী। এর মধ্যে ২০২৩ সালে হাসপাতালটিতে মোট ভর্তি রোগী ৪৩ হাজার ৯৬৭টি শিশুর মধ্যে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ বা এক হাজার ৫৯১টি ছিল কিডনি রোগে আক্রান্ত। এসব রোগীর মধ্যে জন্মগত ত্রুটি ছিল ৫ দশমিক ১ শতাংশের। গত বছর হাসপাতালটিতে মোট ভর্তি শিশুর কিডনি রোগীর মধ্যে মৃত্যুর হার ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। মহাসচিব বলেন, ‘সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় ও নিয়মিত চিকিৎসা দিলে জটিলতা কমার পাশাপাশি মৃত্যু কমে আসবে। ডায়ালাইসিস ব্যয়বহুল হওয়ায় প্রতিরোধেই জোর দিতে হবে।

সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. মো. আনোয়ার হোসেন খান বলেন, বাংলাদেশে সময়ের আগে শিশু জন্মের হার সবচেয়ে বেশি। এসব শিশু ত্রুটি নিয়ে পৃথিবীতে আসায় তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। তিনি বলেন, শিশুর কিডনি সমস্যা যাতে না দেখা দেয় সে জন্য প্রতিরোধে সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে। মায়ের বুকের দুধের জোর দেওয়া ও জন্মের পর ফর্মুলা দুধ না খাওয়ানো এবং প্রস্রাবের সংক্রমণ প্রতিরোধে সতর্ক থাকতে হবে। জোর দিতে হবে অল্প বয়সে গর্ভধারণ প্রতিরোধ ও মায়ের পুষ্টির ওপর। একই সঙ্গে চিকিৎসা ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে হবে।

সম্মেলনে প্রথম দিনের প্রধান অতিথি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হক বলেন, ‘এই সম্মেলনের মাধ্যমে শিশুদের কিডনি রোগের বিস্তার ও এর চিকিৎসা আরও কতটা যুগোপযোগী হওয়া উচিত সেটি বেরিয়ে আসবে। আমাদের সংকটগুলো চিহ্নিত করা সহজ হবে।’

পরে দেশি-বিদেশি ১০ জন চিকিৎসককে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে আজ রবিবার শিশুদের কিডনি রোগের চিকিৎসা সহজ ও সুলভ করতে বেশ কিছু গবেষণা তুলে ধরবেন চিকিৎসকরা।