সরে দাঁড়াননি কেউ
মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু নির্দেশনার একদিন পর গতকাল শুক্রবারও ঠিক আগের মতোই নির্বাচনী মনোভাব নিয়ে মাঠে থাকতে দেখা গেছে তাদের। নানা যুক্তি খ-িয়ে ওইসব প্রার্থী দলের এই সিদ্ধান্তের পুনর্বিবেচনার প্রত্যাশা করছেন। দুয়েক জায়গায় বিশেষ বিবেচনায় প্রার্থিতা ধরে রাখার চেষ্টাও করে যাচ্ছেন তারা। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত এইসব প্রার্থীর মধ্যে থেকে সরে দাঁড়ানোর খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে। তবে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের দিন অর্থাৎ ২২ এপ্রিলের পর দলীয় সিদ্ধান্তটি পরিষ্কার হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
গত বৃহস্পতিবার এক অনানুষ্ঠানিক সভায় দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপজেলা নির্বাচনসংক্রান্ত বার্তা দলের মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের জানিয়ে দেওয়া হয়। বেশ ক’জন এমপির সঙ্গে কথা বলে সরাসরি এই নির্দেশনা জানিয়ে দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। একই বার্তা বিভাগীয় পর্যায়ে দায়িত্বশীলরা তাদের স্ব স্ব এলাকায় সংশ্লিষ্টদের কাছে দলীয় হাইকমান্ডের এই নির্দেশনা
পৌঁছে দেন বলে জানা গেছে। কিন্তু ওই সব এলাকার মন্ত্রী-এমপিরা নানা যুক্তি দিয়ে নির্বাচনে তাদের প্রার্থী দেওয়ার বিষয়টি বোঝাতে চান। অনেকে দলীয় হাইকমান্ডের সঙ্গে আলোচনা করে ফের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-এমপিদের জানিয়ে দেবেন বলে জানা গেছে।
এদিকে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি উপজেলায় আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক এমপির খালাতো ভাই রেজাউল করিম হিরা বর্তমান চেয়ারম্যান। দলীয় নির্দেশনা পাওয়ার পরও তিনি তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়াননি। কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি দলের আরেক সভাপতিম-লীর সদস্য শাজাহান খান এমপির ছেলে যুবলীগ নেতা আসিবুর রহমান খানসহ ঢাকা বিভাগের অন্য মন্ত্রী ও এমপির স্বজনরাও।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এ বিষয়ে ঢাকা বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম আমাদের সময়কে জানান, ‘টাঙ্গাইলে এমপি মহোদয়ের স্বজন রানিং উপজেলা চেয়ারম্যান। তাই তার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। মাদারীপুরের বিষয়ে তিনি বলেন, নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মির্জা আজম জানান, নারায়ণগঞ্জে রূপগঞ্জে গোলাম দস্তগীর গাজী এমপির ছেলে সরে দাঁড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।’
এদিকে নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার ইশরাক শাবাব চৌধুরী এখনো নির্বাচনী মনোভাব নিয়েই আছেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে একরামুল করিম চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি বলেছিলেন, আবার তাকে কল দিয়ে দলের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানাবেন। কিন্তু শুক্রবার সারাদিন তাকে দল থেকে পুনরায় কল দিয়ে কেউ সিদ্ধান্ত জানায়নি। সুতরাং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের বিষয়ে এখনো ভাবছেন না। ২২ এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করে দেখব।
নোয়াখালী-৬ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী ও ছেলে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। তারাও এখনো নির্বাচনী মনোভাবেই আছেন। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন আমাদের সময়কে জানান, ‘আশা করি সবাই সরে দাঁড়াবে।’
এ ছাড়াও মুন্সীগঞ্জ, বগুড়া, নোয়াখালী, নরসিংদী, ঠাকুরগাঁও, চুয়াডাঙ্গাসহ মোট ১২ উপজেলায় মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের লোকজন প্রার্থী হিসেবেই মাঠে রয়েছেন। কেন্দ্রের নির্দেশ উপেক্ষা করে কেউ কেউ ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ আচরণও করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি আমাদের সময়কে বলেন, ‘মন্ত্রী এমপি’র স্বজনদের অবশ্যই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হবে। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ থাকতে পারবে না। সব কিছুই আমলনামায় যুক্ত হচ্ছে। সে অনুযায়ী দলের নেতারা পুরস্কার কিংবা তিরস্কার পাবেন।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন