তিন কারণে কমেছে শিল্প সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি

আব্দুল্লাহ কাফি
১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
তিন কারণে কমেছে শিল্প সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি

মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) শিল্প ও সেবা খাতের মোট প্রবৃদ্ধি গত অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে কমেছে ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। অর্থাৎ শিল্প খাতে কমেছে ৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং সেবা খাতে কমেছে ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে এই পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি কমার পেছনে মূল তিনটি কারণকে দায়ী করছেন তারা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রকাশিত প্রান্তিক জিডিপির পরিসংখ্যানে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট ও আর্থিক খাতের দুর্দশার কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতাই এর পেছনের মূল কারণ।

বিবিএসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক তথা অক্টোবর-ডিসেম্বর তিন মাসে শিল্প খাতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। যা তার আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এ প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ শতাংশ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল সাড়ে ১৪ শতাংশ। এ হিসেবে শিল্প খাতে গত তিন অর্থবছরের মধ্যে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

বিবিএসের তথ্যে দেখা গেছে, শিল্পের মতো চলতি অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধির পরিমাণও কমে গেছে। এ তিন মাসে সেবা খাতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ, যা আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ। তার আগের অর্থবছর, অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও সেবা গ্রহণের প্রবণতা কমে গেছে। একই সঙ্গে ডলার সংকটের কারণে শিল্পে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। শিল্পের কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি এমনকি মেশিনারিজ আমদানিতেও ব্যাঘাত ঘটেছে। পাশাপাশি আর্থিক খাতের দুর্দশা। সঠিক জায়গায় ঋণ না দিয়ে পাচারকারীদের ঋণ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে যারা সৎভাবে কাজ করে সম্পদ বানাতে চায় তারা বিনিয়োগ করতে পারেনি। এর ফলে বিনিয়োগ কম হয়েছে। কর্মসংস্থান বাড়েনি। আর যারা অসৎ তারাই ঋণ পেয়েছে। তারা দেশে বিনিয়োগ না করে বিদেশে অর্থপাচার করেছে। এর ফলে দেশ উপকৃত হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এক্ষেত্রে সার্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ঠিক করতে হবে পাশাপাশি আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা আনতে হবে বলেও মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

এদিকে জিডিপির প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতকে প্রধান খাত হিসেবে বিবেচনা করে বিবিএস। এই তিন খাতের মধ্যে কৃষিতে কিছুটা প্রবৃদ্ধি হলেও শিল্প ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় সার্বিক প্রবৃদ্ধিও কমে গেছে। চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে সার্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশে। আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরে দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৯ দশমিক ৩০ শতাংশ।

বিবিএসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায়ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধিতে প্রবৃদ্ধি অনেক কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। দ্বিতীয় প্রান্তিকে তা কমে ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশে নেমে গেছে।

জানতে চাইলে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শিল্প কারখানা চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে। বিশেষ করে গেল কয়েক মাস রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ডলার সংকট চরম আকার ধারণ করে। এ কারণে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করতে এলসি খুলতে জটিলতা, নতুন মেশিনারিজ পর্যাপ্ত পরিমাণে আমদানি করতে না পারায় যে পরিমাণ বিনিয়োগ হওয়ার কথা সেভাবে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। নতুন বিনিয়োগ না হওয়ায় নতুন নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হচ্ছে না।

অন্যদিকে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ, যা এর আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ছিল ৪ দশমিক ২২ শতাংশ এবং তার আগের অর্থবছর ২০২১-২২ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ছিল ২ দশমিক ২০ শতাংশ। এ হিসেবে গত তিন বছরেই কৃষি খাতে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ঊর্ধ্বমুখী।