ঈদ উৎসবে গ্রামে লোডশেডিং শঙ্কা
ঈদের ছুটিতে মানুষ জন্মভূমি গ্রামের দিকে ছুটছে। সাধারণ মানুষের এই ঈদ আনন্দে বাধা হতে পারে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎপ্রাপ্তি। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র বলছে, নানা প্রস্তুতি সত্ত্বেও শহরের তুলনায় গ্রামে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা কঠিন হবে। জ্বালানি সংকটে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারা এবারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। এছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণ ও সঞ্চালন ব্যবস্থার আধুনিকায়নেও রয়েছে ত্রুটি।
বিদ্যুৎ বিভাগে পিডিবির সাম্প্রতিক এক উপস্থাপনায় দেখা গেছে, মার্চ মাসে দিনের পিক সময়ে সারাদেশে বিদ্যুৎ চাহিদা থাকবে ১৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট এবং সন্ধ্যায় পিক আওয়ারে তা হবে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। পিডিবি দেখিয়েছে, তারা চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে। কোনো লোডশেডিং হবে না। অথচ মার্চ মাসে লোডশেডিং ছিল গড়ে দেড় থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট। পিডিবি সেই উপস্থাপনায় দেখিয়েছেÑ এপ্রিল মাসে দিনের বেলা পিক টাইমে বিদ্যুৎ চাহিদা থাকবে ১৫ হাজার ১০০ মেগাওয়াট এবং সন্ধ্যায় তা হবে ১৭ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। এপ্রিল মাসেও কোনো লোডশেডিং হবে না। বাস্তবতা হচ্ছে, এপ্রিলের শুরু থেকে সারাদেশে কম-বেশি লোডশেডিং শুরু হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিডিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। আর্থিক সংকটে প্রয়োজনীয় অর্থ না পাওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি আমদানি করতে পারেননি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকরা। অন্যদিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারছে না পিডিবি। এছাড়া রাজধানী এবং তার আশপাশের জেলাগুলোর মতো এখনো প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রয়োজনীয় সাবস্টেশন, বিতরণ, সঞ্চালন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ফলে এবারের ঈদও লোডশেডিং করেই বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হবে। তিনি বলেন, তবে শহরের মানুষ গ্রামের তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ পাবে।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
পিডিবির ওই কর্মকর্তা বলেন, ঈদে শহরে বিদ্যুৎ চাহিদা কমে যায়। শিল্প কারখানা-মার্কেট বন্ধ থাকে। ফলে শহরে বিদ্যুৎ সরবাহের যে নেটওয়ার্ক সেখানে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব। পিডিবির এই কর্মকর্তা জানান, এবার বিদ্যুতের বেশি ভোগান্তি হতে পারে ময়মনসিংহ এলাকায়। কারণ এই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা তুলনামূলক দুর্বল।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, এপ্রিলের শুরুতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে গ্রামে লোডশেডিংয়ের তীব্রতা বেড়েছে। ঢাকার পাশের জেলা মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় এপ্রিলজুড়ে গড়ে ৫/৬ ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
প্রসঙ্গত, গত এক দশকে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে চাহিদার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে অন্তত দাম বেড়েছে ১৩ বার। এরপরও প্রতিবছর বাড়ছে সরকারের ভর্তুকি। তবু নিশ্চিত হয়নি বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ। লোডশেডিংমুক্ত কবে হবে সে নিশ্চিয়তাও নেই।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, লোডশেডিং করতে হয় মূলত জ্বালানি সংকটের কারণে। বিদ্যুৎ খাতে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় আড়াই হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু সরবরাহ করা হয় গড়ে এক হাজার থেকে ১২শ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত। গ্যাসের সংকটে প্রায় ৫ হাজার মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকছে। এছাড়া এ বছর ডলার সংকটে সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে। ডলার সংকটের কারণে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকরা প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেল আমদানি করতে পারছেন না। সরকারও হিমশিম খাচ্ছে প্রয়োজনীয় জ্বালানি আমদানি করতে। ফলে গড়ে ১২ থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সীমাবদ্ধ থাকতে হচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও লোডশেডিং বা লোডম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম