সাঁড়াশি অভিযানে ছত্রখান কেএনএফ

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্পেশাল ফোর্স মোতায়েন ।। ব্যবহার হচ্ছে অত্যাধুনিক সাঁজোয়া যান (এপিসি) ।। পাহাড়ে বসেছে বাড়তি চেকপোস্ট কঠোর তল্লাশি ।। ৫৪ কেএনএফ সদস্য গ্রেপ্তার উদ্ধার ৭ বন্দুক ও ইকুইপমেন্ট

সাজ্জাদ মাহমুদ খান, ঢাকা ও এন এ জাকির, বান্দরবান
০৯ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
সাঁড়াশি অভিযানে ছত্রখান কেএনএফ

বান্দরবানে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সদস্যদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। এ অভিযানে সোমবার রাত পর্যন্ত ৫৩ জন কেএনএফ সদস্যসহ মোট ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কেএনএফ সদস্যরা সবাই বম জনগোষ্ঠীর। অভিযানে ৭টি দেশি বন্দুক, ২০ রাউন্ড গুলি, ল্যাপটপ, ইউনিফর্ম ও বুট উদ্ধার করেছে যৌথ বাহিনী। তবে সোনালী ব্যাংক ডাকাতির সময় লুট হওয়া পুলিশের অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি।

বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সৈকত শাহীন আমাদের সময়কে বলেন, যৌথ অভিযানে মোট ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রুমা ও থানচি থানায় দায়ের হওয়া ৮ মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযান অব্যাহত থাকবে।

জানা গেছে, কেএনএফের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া অভিযানে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র‌্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থার স্পেশাল ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে, যারা পাহাড়ে অভিজ্ঞ এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। জেলার রুমা, থানচি, রোয়াংছড়িসহ দুর্গম পাহাড়ে অভিযান চলছে। এতে প্রয়োজন অনুযায়ী অত্যাধুনিক সাঁজোয়া যান, এসএমজিসহ ভারী আগ্নেয়াস্ত্রও ব্যবহার করা হচ্ছে। বসানো হয়েছে বাড়তি চেকপোস্ট, চলছে তল্লাশি।

বান্দরবানের থানচি ও রুমা উপজেলায় দুই ব্যাংকের তিন শাখায় ডাকাতির ঘটনায় রবিবার চাঁদের গাড়িচালক ও তিনজন কেএনএফ সদস্যসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বান্দরবান সদরের রেইসা চেকপোস্ট এলাকায় রুমার ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই তিনজন হলেন রোয়াংছড়ির রৌনিনপাড়ার জিংচুন নুং বমের ছেলে ভাননুন নুয়াম বম, থানচির সিমতœাংপি পাড়ার লালমুন চম বমের মেয়ে জেমিনিউ বম ও ছেলে আমে লমচেউ বম।

এ ছাড়া থানচিতে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় জড়িত দুর্বৃত্তদের গাড়ি চালানোর অভিযোগে কফিল উদ্দিন সাগর নামে এক গাড়িচালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। থানচি সদরের টিঅ্যান্ডটিপাড়া থেকে রবিবার সন্ধ্যায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বাবার নাম মো. ইউসুফ।

গতকাল সোমবার আরও দুজন সক্রিয় কেএনএফ সদস্যকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে নিশ্চিত করেছে আইএসপিআর। তবে রাতে বান্দরবানের এসপি বলেন, দুদিনে মোট ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আমাদের সময়কে বলেন, ডাকাতির ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে চিরুনি অভিযান চালানো হচ্ছে। এ অভিযানে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। আসামি গ্রেপ্তারের পাশাপাশি আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, পুলিশ ও আনসারের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া অস্ত্র উদ্ধার। এজন্য পাহাড়ে জঙ্গি গ্রেপ্তারসহ বিভিন্ন অভিযানে অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত র‌্যাব সদস্যদের পাঠানো হয়েছে।

রুমা-থানচি উপজেলায় কেএনএফের লাগাতার সন্ত্রাসী কর্মকা- দমনে অভিযানে যুক্ত হয়েছে সাঁজোয়া যান (এপিসি)। যা দিয়ে এ দুই উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় টহল দেবেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেন, উপজেলাগুলোতে অভিযানের অংশ হিসেবে রুমা ও থানচি উপজেলার জন্য ৪টি সাঁজোয়া যান আনা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে এগুলো আরও বাড়ানো হবে। চেকপোস্ট বসিয়ে কঠোর নিরাপত্তা তল্লাশি চালানো হচ্ছে।

পাহাড়ে অভিযানে অভিজ্ঞ একজন কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, পাহাড়ে অভিযান চালানো অনেকটা জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ। গহিন পাহাড়ের অভিযানে এপিসি চালানোর চেয়ে স্থানীয় সোর্স, অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র, প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞ সদস্যদের ওপর নির্ভর করতে হয়। পাহাড়ে কয়েক মিটার দূরে সন্ত্রাসীরা আত্মগোপন করে থাকলেও জঙ্গলে তা চিহ্নিত করা কঠিন। আবার এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে যাওয়া সময়সাপেক্ষ। সোর্সদের মাধ্যমে অবস্থান শনাক্ত করা গেলেও অনেক সময় সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। কারণ পাহাড়ের সব পথই তাদের চেনা। তারা জন্ম থেকেই এতে অভ্যস্ত। এক্ষেত্রে স্থানীয়দের সহযোগিতা খুবই জরুরি। কিন্তু অনেকেই ভয়ে কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করে না।

এদিকে ব্যাংক ডাকাতি, অপহরণ ও টাকা-অস্ত্র লুটের ঘটনায় আতঙ্ক কাটছে না রুমা-থানচি এলাকাজুড়ে। সন্ধ্যা নামার আগেই বন্ধ হয়ে যায় রুমা-থানচি বাজারের সব দোকানপাট।

যৌথ বাহিনীর কম্বিং অপারেশনের কারণে গতকাল বিকাল ৫টা থেকে বান্দরবানের রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি এলাকার সব ধরনের যান চলাচলে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কেএনএফ। রুমা বাস মালিক সমিতির লাইনম্যান জাকির হোসেন জানান, সকাল থেকে রুমায় গণপরিবহনসহ অভ্যন্তরীণ যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে স্থানীয়রা কেউ বের হচ্ছে না।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, প্রত্যেকটি এলাকায় আইনশৃঙ্খলার তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। জনবল ও শক্তি বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমরা দুর্বৃত্তদের কঠোর হাতে দমন করতে চাই। কোনো ধরনের পাল্টা পদক্ষেপ যাতে তারা না নিতে পারে সে রকম প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই। আমরা জনগণের পাশে আছি।